“আমি বিশ্বাস করি, সরকার বিশ্বাস করে যে, এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে না কখনও,” বলেন তিনি।
‘নিজেদের স্বার্থে’ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

- আপডেট সময় ১২:৩৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের ‘স্বার্থ দেখেই’ ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এমনিতে দুই বছর পরে রিভিউ হবে, আর ছয় মাসের নোটিসে যে কোনো সময়ে সরিয়ে দেওয়া যাবে। আমার মনে হয় না যে, সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে।
“কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখেইতো কাজটা করেছি। তার (জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন) প্রস্তাবের উপরে আমরা একটা চুক্তি সই করে দিয়েছি তা না। আপনারা এটাও জানেন যে, দীর্ঘ সময় নিয়েছি আমরা। আমরা দীর্ঘ সময় নিয়েছি এবং আমাদের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, এটা দেখেই আমরা করেছি।”
ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের নতুন মিশন খোলার জন্য গত ১৮ জুলাই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনেরের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)।
ওইদিন ওএইচসিএইচআর এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমওইউ সইয়ের খবর দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ‘উন্নয়ন ও সুরক্ষার’ বিষয়কে সমর্থন দিতে খোলা হবে এই কার্যালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্কার এগিয়ে নিতে মানবাধিকার কার্যালয় বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে এবং গণবিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান করেছে।
ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের এই সময়ে মানবাধিকারের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি যে ‘অন্যতম ভিত্তি’ হিসেবে রয়েছে, সেই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাচ্ছে এই সমঝোতা স্মারক।
“তথ্যানুসন্ধানের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তা যাতে আরও ভালোভাবে দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এই এমওইউ। পাশাপাশি মৌলিক সংস্কারের উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের সরকার, নাগরিক সমাজ এবং অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারব।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এ মিশন বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে।
ঢাকায় তিন বছরের জন্য এই মিশন স্থাপনের জন্য গত ১০ জুলাই সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।
সরকারের এই উদ্যোগে ‘গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা’ প্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সে সময় ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশে তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেবে না।
এ সংগঠনের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গত ৫ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে ‘হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা’ করেছে।
“এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।”
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের এই উদ্যোগের সমালোচনা করে আসছেন অনেক বিশ্লেষক।
তাদের সেই উদ্বেগের প্রসঙ্গ টেনে করা প্রশ্নে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “বিশেষজ্ঞদের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। তারা বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয় বিবেচনা করবেন। তবে, আমি বিশ্বাস করি, সরকার বিশ্বাস করে যে, এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে না কখনও।”
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম