যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, “উনি কানাডা সফরে আছেন। আমি এইটুকু বলতে পারি, এই বৈঠকটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।"
‘নির্বাচনের তারিখ থেকে সংস্কার’ থাকবে আলোচনায়: ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে প্রেস সচিব

- আপডেট সময় ১০:২২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের তারিখ, জুলাই সনদ ও সংস্কারের মত বিষয়গুলো মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনায় থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের আলোচিত ব্ঠৈকটি শুক্রবার সকালে হবে বলেও তথ্য দেন প্রেস সচিব।
মঙ্গলবার সকালে চার দিনের সরকারি সফরে লন্ডনে পৌঁছানোর পর ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম শেষে হোটেল ডরচেস্টারে অবস্থানরত মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন।
এরপর লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে বিফ্রিংয়ে এসে দিনের বৈঠকগুলোর বিষয়ের পাশাপাশি শফিকুল আলম প্রশ্নোত্তরে তারেক রহমান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি পাওয়া, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকসহ যুক্তরাজ্য সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন আসে।
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ”তারেক রহমানের সাথে বৈঠক হচ্ছে ১৩ তারিখ সকালে। ওই মিটিংটার কোনো ফরম্যাট নাই, কিন্তু যেহেতু তারেক রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা আর প্রফেসর ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান–উনারা উনাদের মতো করে বসবেন, আলাপ হবে।
”এখানে বাংলাদেশের এখনকার যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তারপরে আমাদের… আপনারা জানেন যে আমরা একটা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছি–সেই বিষয়ে। তারপর নির্বাচনের এই যে জুলাই সনদ হওয়া, সংস্কারের বিষয়–এগুলো যেকোনো বিষয়ই আলাপ হতে পারে। বৈঠকটি ১৩ তারিখ সকালে হচ্ছে, এটুকু বলতে পারি। কী আলাপ করবেন, এটা উনারা ডিসাইড করবেন।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কোনো বৈঠক আছে কি না, তা কবে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “কিয়ার স্টারমার সম্পর্কে আমরা যেটা জানতে পারছি, তা হলো উনি সম্ভবত কানাডায় আছেন। কানাডায় ভিজিট করছেন।
”আজকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি এসেছিলেন, তিনি জানালেন যে উনি কানাডায় আছেন। তারপরও আমরা এক ধরনের কথাবার্তার মধ্যে আছি—যদি সময় বা সূচি মিলে যায় তাহলে বৈঠকটি হবে। আর যদি সূচি না মেলে, তাহলে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমি এইটুকু বলতে পারি, এই বৈঠক নিয়ে কাজ হচ্ছে।”
কিংস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রধান উপদেষ্টার নাম না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১২ তারিখে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। উনি ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন এবং কিং চার্লসের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান মিটিংও রয়েছে।“
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে এবার ‘কিংস চার্লস থার্ড হারমোনি অ্যাওয়ার্ডের’ জন্য মনোনীত করেছে কিংস ফাউন্ডেশন। আগামী ১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস’স প্যালেসে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।
দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের দেওয়া এই পুরস্কার ২০২৪ সালে পেয়েছিলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন।
ব্রিফিংয়ে লন্ডনে প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার পর সকাল ১০টার দিকে তারা হোটেলে পৌঁছান। এরপর ১২টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা বিশ্রামে ছিলেন। পরে তিনি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন।
তিনি জানান, দুপুর ১২টায় এয়ারবাসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাউটার ভ্যান ভার্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে অ্যাভিয়েশন খাতে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপিয়ান উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানিটির পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সাড়ে ১২টায় শীর্ষস্থানীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানি মেনজিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
তাদের সঙ্গেও অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত ব্ষিয় নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মেনজিস বিশ্বের প্রায় ৩৫০টি বিমানবন্দরে কাজ করে। বাংলাদেশে থার্ড টার্মিনাল দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে। এই টার্মিনালে কে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করবে সে বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে মেনজিসের সঙ্গেও কথা হয়।
”এরপর ২টায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং বাংলাদেশের বন্ধু ব্রিটিশ এমপিদের একটি অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সেখানে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পারস্পরিক আগ্রহের বিষয়, রোহিঙ্গা ইস্যু, রাজনৈতিক ইস্যু, গণতান্ত্রিক রুপান্তর, সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম, জুলাই সনদ এবং সরকারের বিগত ১০ মাসের অর্জন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেন।”
একজন সাংবাদিক জানতে চান অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপে টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন কি না? জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘না, টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন না।’’
টিউলিপের চিঠি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি চিঠি পেয়েছি।’’
চিঠির জবাব দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘‘চিঠির বিষয়টি একটি আইনগত ইস্যু এবং এটি আইনগতভাবে সমাধান করা হবে।’’
প্রেস সচিব বলেন, ” ব্রিটেনে আসার অন্যতম একটি বিষয় সম্পদ পুনরুদ্ধার। আপনি জানেন যে বাংলাদেশের থেকে বিলিয়নস অব ডলারস চুরি হয়ে গেছে। হ্যাঁ, গত সরকারের আমলের যে শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছিল, প্রফেসর ইউনূস এসে যে কমিটি করলেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে, তাদের অনুসন্ধান হচ্ছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের থেকে পাচার হয়ে গেছে বিভিন্ন দেশে। তার একটা ধারণা করা হয় যে তার একটা অংশ এই ব্রিটেনেও এসেছে। তো এই সম্পদ পুনরুদ্ধার কীভাবে হবে এবং এটা নিয়ে আমরা, ওদের যেগুলো লিডিং এজেন্সি আছে, তাদের সাথে তো আমরা কথা বলছি।”
তিনি বলেন, ”এই সফরে, যদিও প্রফেসর ইউনূসের প্রতিনিধিদের সাথে না, কিন্তু একসাথে এসেছেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (দুদক চেয়ারম্যান) এবং আহসান এইচ মনসুর (বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর)। সম্পদ পুনরুদ্ধার কীভাবে করা যায়, বাংলাদেশ এখান থেকে যে টাকাটা এইদিকে এসেছে এবং এদের এজেন্সিগুলোর সাথে কীভাবে আমরা ভালোভাবে, নিবিড়ভাবে ইন্টারেক্ট করতে পারি– হ্যাঁ, সেই কাজগুলো উনারা করবেন।
”এই পুরো সফরের অন্যতম বড় লক্ষ্য হচ্ছে আমরা আশা করছি যে এর ফলে আরো কিছু ফল পাব। আপনারা জানেন, সম্পদ চুরি হওয়াটা খুব সহজ। আমি চুরি করলাম করে পাঠিয়ে দিলাম। তো এই চুরি হওয়া টাকাটা আনা খুবই কঠিন। আপনারা যদি অন্যান্য দেশগুলো দেখেন, পৃথিবীতে এই যে মার্কোসের টাকা বলেন বা পুরো আফ্রিকা জুড়ে, যারা টাকাগুলো চুরি করেছে, তারা টাকাটা খুব দ্রুত বিলিয়নস অব ডলার নিয়ে গেছে। তো সেই টাকাটা আনতে যেমন– অ্যাঙ্গোলার বোধহয় একটা প্রতিবেদন দেখছিলাম যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার না, ১৪ বিলিয়ন ডলার, ওরা মানে তাদের ১৪ বছর লেগে গেছে এই টাকাটা আনতে। এবং ওরা বলছে যে এটাই কম।
” আমরা তো আশা করছি যে, আমাদের সাথে যে নিবিড় যোগাযোগ হচ্ছে এই এজেন্সিগুলোর, এর মাধ্যমে আমাদের কিছু ফলাফল হবে। এরইমধ্যে আপনারা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তো অনেক খবর দেখেছেন, কিছু কিছু সম্পদ জব্দও হয়ে গেছে। এটা তো সে আলোকে আমরা কাজ করছি। আর এই বিষয়গুলো আইনগতভাবে এত বেশি সেনসিটিভ জিনিস যে আপনি আইনগতভাবে এটা নিয়ে অনেক কথা বলাও যায় না একদম ফাইনাল। আপনি তো জানেন, ওদের ব্রিটিশ আইনি ব্যবস্থাটা তো আপনি জানেন।
” আইনগত এই বিষয়গুলো নিয়ে ডিল করতেও আমাদের অনেক চিন্তা, বেগ লাগে। আমরা কথা বলতে পারছি না। আপনাদের সাথে সামনে এই কথাগুলো হাজির করতে পারছি না যে আমরা কী করছি, অনেক ক্ষেত্রে এই রেজাল্টগুলো কী হচ্ছে, ডেভেলপমেন্টগুলো কী হচ্ছে, কতটুকু অগ্রগতি হল।”
এ নিয়ে প্রচুর কাজ ও সফর হওয়ার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, “এখানে আমাদের সাথে ব্রিটিশ বিশেষ করে ন্যাশনাল ক্রাইমস এজেন্সি– তাদের সাথে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ আছে এবং এটা নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে।”
প্রবাসীদের নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘পাসপোর্ট ইস্যু একটি বড় বিষয় ছিল, যা প্রায় ৪ লাখের বেশি পাসপোর্ট প্রদান করে সমাধান করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ হচ্ছে।’’
রোহিঙ্গা বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এবং প্রতি বছর হাফ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়। এই সহায়তা যেন কমে না বরং বাড়ে, সেই বার্তা দিচ্ছেন প্রফেসর ইউনূস।’’
ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে একটি বড় সম্মেলন হবে জাতিসংঘের উদ্যোগে, যা প্রফেসর ইউনূসের অনুরোধে আয়োজন করা হচ্ছে।’’
বুধবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত না। তবে আমরা জানি কাল উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) চ্যাথাম হাউসে যাবেন, সেখানে দুটি মিটিং রয়েছে– একটি মূল বক্তব্য দেওয়া এবং আরেকটি নির্বাচিত কিছু মানুষের সাথে আলোচনা। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের সাথে যুক্ত কিছু শিক্ষার্থীর সাথেও ব্ঠৈক হওয়ার কথা রয়েছে এবং কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হবে।’’
কমনওয়েলথ মহাসচিবের সাক্ষাৎ
প্রথম দিনের সফরসূচির পরের অংশে লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকালে কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে কমনওয়েলথ সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর কমনওয়েলথ তার সদস্য দেশগুলোতে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
লন্ডন প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম