০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
বিপাকপ্রক্রিয়া বাড়ানোর জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়।

পঞ্চাশের পরে দেহে ভারসাম্য হারালে যা করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৯:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

বয়স ৫০ পার করার পর শরীরে নানান রকম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে অনেকেই ভয় বা সংকট হিসেবে দেখেন।

 

বয়স ৫০ পার করার পর শরীরে নানান রকম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে অনেকেই ভয় বা সংকট হিসেবে দেখেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘সিম্পলি ওয়েলনেস’-এর পুষ্টিবিদ ও সমন্বিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সামান্থা পিটারসন ইটদিস ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “এটি আসলে একটি সংকেত। যা মূলত বলে শরীরের প্রয়োজনীয়তা বোঝার সময় এসেছে।”

এই বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “দেহ সবসময়ই জানায় সে কী চাইছে।”

তাই এই বয়সে বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) পুনরায় সক্রিয় করতে ভয়াবহ কোনো ডায়েট বা ‘ক্লিনজ’ নয়, বরং দরকার সচেতন জীবনযাত্রা ও কিছু সহজ পরিবর্তন।

 

সবসময় ক্লান্ত ও উদ্যমহীন লাগা

দিনভর ক্লান্তি ও মাথা ঝিমঝিম করার অনুভূতি যদি নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়, তবে বুঝতে হবে দেহের বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা হয়েছে।

‘লুমেন’ নামক একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ব্রিয়া লফটন বলেন, “যখন কোষের শক্তি উৎপাদনকারী অংশ মাইটোকন্ড্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শক্তি কমে যায় এবং মানসিক অস্পষ্টতা দেখা দেয়।”

সমাধান: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর রঙিন শাকসবজি, পর্যাপ্ত পানি ও প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মৃদু হাঁটাচলা, প্রাকৃতিক আলোতে সময় কাটানো ও পর্যাপ্ত ঘুম এই ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।

 

অকারণে ওজন বেড়ে যাওয়া

খাদ্যাভ্যাস না বদলালেও যদি পেটে মেদ জমে যেতে থাকে, তবে এটি বিপাকের ভারসাম্য হারানোর অন্যতম বড় লক্ষণ।

ব্রিয়া বলেন, “৫০ পার করার পর বিশেষ করে নারীদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোন হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে পেটের চারপাশে মেদ জমে বেশি, যা বিপাকের গতি কমিয়ে দেয়।”

সমাধান: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, হালকা যোগব্যায়াম করা উপকারী। পাশাপাশি পরিমিত খাবার গ্রহণ ও চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পরিহার করতে হবে।

 

পেশির শক্তি ও গঠন কমে যাওয়া

“পেশি হল দেহের বিপাকীয় ইঞ্জিন” এই মন্তব্য করেন সামান্থা পিটারসন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির পরিমাণ কমে যায়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘সারকোপেনিয়া’। এতে ক্যালোরি পোড়ানোর হার কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়।

সমাধান: প্রতিদিন হালকা ওজন তোলা বা নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করে স্কোয়াট, ওয়াল পুশআপের মতো ব্যায়াম করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় ডাল, ডিম, মাছ, বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার রাখা উচিত।

 

ঘুমের সমস্যা

ঘুম ও বিপাকক্রিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

ব্রিয়া জানান, “ঘুমের অভাবে শরীরে কর্টিসল ও ঘ্রেলিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং দেহ বেশি চর্বি জমাতে শুরু করে।”

সমাধান: ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল বা টিভি দেখা কমিয়ে দিন। ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতের দিকে পরিহার করতে হবে। ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ এবং ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক করে তোলা জরুরি।

 

অতিরিক্ত খিদে ও মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেইটের প্রতি আগ্রহ

ব্রিয়া লফটনের মতে, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনসুলিনের প্রতি দেহের সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা ওঠানামা করে এবং মিষ্টি বা উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।”

সমাধান: দিনে পাঁচ-ছয় বার অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। যেমন- ডিম, শাকসবজি, বাদাম, ফল ও পুরো শস্য ধরনের খাবার। চিনি ও সাদা পাউরুটি বা পেস্ট্রির মতো উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

 

দেহের বিপাকক্রিয়াকে সচল করতে যা করা যায়

ব্রিয়া লফটন বলেন, “বিপাক পুনরায় সক্রিয় করতে হলে তিনটি স্তম্ভের দিকে নজর দিতে হবে— খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা ও বিশ্রাম।”

  • খাদ্যাভ্যাস: স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক, সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করতে হবে। চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করায় গুরত্ব দিতে হবে।
  • চলাফেরা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে নিয়ম মেনে। হালকা ব্যায়াম বা যোগাসন করা খুবই উপকারী, যা মানতে হবে।
  • বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি এবং নিয়মিত বিশ্রাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সূত্র :  সিম্পলি ওয়েলনেস / পুষ্টিবিদ ও সমন্বিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সামান্থা পিটারসন ইটদিস ডটকম

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

বিপাকপ্রক্রিয়া বাড়ানোর জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়।

পঞ্চাশের পরে দেহে ভারসাম্য হারালে যা করবেন

আপডেট সময় ০৯:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

 

বয়স ৫০ পার করার পর শরীরে নানান রকম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে অনেকেই ভয় বা সংকট হিসেবে দেখেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘সিম্পলি ওয়েলনেস’-এর পুষ্টিবিদ ও সমন্বিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সামান্থা পিটারসন ইটদিস ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “এটি আসলে একটি সংকেত। যা মূলত বলে শরীরের প্রয়োজনীয়তা বোঝার সময় এসেছে।”

এই বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “দেহ সবসময়ই জানায় সে কী চাইছে।”

তাই এই বয়সে বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) পুনরায় সক্রিয় করতে ভয়াবহ কোনো ডায়েট বা ‘ক্লিনজ’ নয়, বরং দরকার সচেতন জীবনযাত্রা ও কিছু সহজ পরিবর্তন।

 

সবসময় ক্লান্ত ও উদ্যমহীন লাগা

দিনভর ক্লান্তি ও মাথা ঝিমঝিম করার অনুভূতি যদি নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়, তবে বুঝতে হবে দেহের বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা হয়েছে।

‘লুমেন’ নামক একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ব্রিয়া লফটন বলেন, “যখন কোষের শক্তি উৎপাদনকারী অংশ মাইটোকন্ড্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শক্তি কমে যায় এবং মানসিক অস্পষ্টতা দেখা দেয়।”

সমাধান: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর রঙিন শাকসবজি, পর্যাপ্ত পানি ও প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মৃদু হাঁটাচলা, প্রাকৃতিক আলোতে সময় কাটানো ও পর্যাপ্ত ঘুম এই ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।

 

অকারণে ওজন বেড়ে যাওয়া

খাদ্যাভ্যাস না বদলালেও যদি পেটে মেদ জমে যেতে থাকে, তবে এটি বিপাকের ভারসাম্য হারানোর অন্যতম বড় লক্ষণ।

ব্রিয়া বলেন, “৫০ পার করার পর বিশেষ করে নারীদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোন হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে পেটের চারপাশে মেদ জমে বেশি, যা বিপাকের গতি কমিয়ে দেয়।”

সমাধান: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, হালকা যোগব্যায়াম করা উপকারী। পাশাপাশি পরিমিত খাবার গ্রহণ ও চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পরিহার করতে হবে।

 

পেশির শক্তি ও গঠন কমে যাওয়া

“পেশি হল দেহের বিপাকীয় ইঞ্জিন” এই মন্তব্য করেন সামান্থা পিটারসন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির পরিমাণ কমে যায়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘সারকোপেনিয়া’। এতে ক্যালোরি পোড়ানোর হার কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়।

সমাধান: প্রতিদিন হালকা ওজন তোলা বা নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করে স্কোয়াট, ওয়াল পুশআপের মতো ব্যায়াম করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় ডাল, ডিম, মাছ, বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার রাখা উচিত।

 

ঘুমের সমস্যা

ঘুম ও বিপাকক্রিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

ব্রিয়া জানান, “ঘুমের অভাবে শরীরে কর্টিসল ও ঘ্রেলিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং দেহ বেশি চর্বি জমাতে শুরু করে।”

সমাধান: ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল বা টিভি দেখা কমিয়ে দিন। ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতের দিকে পরিহার করতে হবে। ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ এবং ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক করে তোলা জরুরি।

 

অতিরিক্ত খিদে ও মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেইটের প্রতি আগ্রহ

ব্রিয়া লফটনের মতে, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনসুলিনের প্রতি দেহের সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা ওঠানামা করে এবং মিষ্টি বা উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।”

সমাধান: দিনে পাঁচ-ছয় বার অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। যেমন- ডিম, শাকসবজি, বাদাম, ফল ও পুরো শস্য ধরনের খাবার। চিনি ও সাদা পাউরুটি বা পেস্ট্রির মতো উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

 

দেহের বিপাকক্রিয়াকে সচল করতে যা করা যায়

ব্রিয়া লফটন বলেন, “বিপাক পুনরায় সক্রিয় করতে হলে তিনটি স্তম্ভের দিকে নজর দিতে হবে— খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা ও বিশ্রাম।”

  • খাদ্যাভ্যাস: স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক, সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করতে হবে। চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করায় গুরত্ব দিতে হবে।
  • চলাফেরা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে নিয়ম মেনে। হালকা ব্যায়াম বা যোগাসন করা খুবই উপকারী, যা মানতে হবে।
  • বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি এবং নিয়মিত বিশ্রাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সূত্র :  সিম্পলি ওয়েলনেস / পুষ্টিবিদ ও সমন্বিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সামান্থা পিটারসন ইটদিস ডটকম

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম