যাবজ্জীবন দণ্ডিত অপর পুলিশ সদস্যের সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।
পল্লবী থানায় জনি হত্যা: দুই পুলিশের যাবজ্জীবন বহাল

- আপডেট সময় ০১:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৮ বার পড়া হয়েছে
সাড়ে ১১ বছর আগে থানায় নিয়ে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনিকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় পল্লবী থানার দুই পুলিশ সদস্যের যাবজ্জীবনের রায় বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। আর যাবজ্জীবন দণ্ডিত অপর পুলিশ সদস্যের সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।
আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি করে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেয়।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জজ আদালতের রায়ে পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে রাশেদুল ইসলামের সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৭ অগাস্ট জনির ভাই রকি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ‘নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ এই মামলা দায়ের করেন।
সেখানে বলা হয়, ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে ইরানি ক্যাম্পে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন জনি। মামলার বাদী রকি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। তখন ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি চড় মারলে সুমন ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যান।
আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে ওই অনুষ্ঠান থেকে জনিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার উপর নির্যাতন চলে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
“জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে লাফায়। জনি পানি চাইলে জাহিদ তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেন।”
নির্যাতনে জনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে জনির।
মামলায় বলা হয়, ‘নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে’ আসামিরা পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে ‘মারামারির মিথ্যা কাহিনী’ তৈরি করেছিল। ওই মারামারিতেই রকিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও জনি নিহত হন দাবি করে এসআই শোভন কুমার সাহা (আসামি) পল্লবী থানায় একটি মামলাও করেছিলেন।
পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান ওই মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ‘ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যান’ বলে বাদীর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়।
সে সময় আদালত রকির আর্জি শুনে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
রকির করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান, এসআই আব্দুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা, কনস্টেবল নজরুলকেও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্তে তারা অব্যাহতি পান। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছিল আদালত। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। এর দুদিন বাদে রায়ে ঘোসণা করেছিলেন ঢাকার তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম