“চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে যে নতুন জাতীয় ঐক্যের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা আমরা হারাতে চাই না”, বলেন এনসিপির আহ্বায়ক।4
পাহাড়ের উন্নয়নে ঐক্য-সম্প্রীতির কথা বললেন নাহিদ

- আপডেট সময় ০৬:৩০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
পাহাড়ের উন্নয়নে সব জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার বিকাল ৩টায় এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “পার্বত্য তিন জেলার সমস্যাগুলো কাছাকাছি। এখানে অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধার ক্ষেত্রে পাহাড়ে বসবাসরতরা বঞ্চিত। সে বাঙালি হোক, চাকমা হোক, মারমা হোক। ফলে পাহাড়ে যদি উন্নয়ন ঘটাতে হয় তাহলে ঐক্য, সম্প্রীতির কোনো বিকল্প নেই। সব জনগোষ্ঠীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি।”
বাংলাদেশকে বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, “এই বদ্বীপ বহু সংস্কৃতির মিলনমেলা ছিল। এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু আমাদের সংবিধানে বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বাহাত্তরের সংবিধানে স্বীকার করা হয়নি। এখানে জাতির সঙ্গে জাতির বিদ্বেষ, ধর্মের সঙ্গে ধর্মের পার্থক্য, সেক্যুলারিইজমের সঙ্গে ইসলামের বিভেদসহ নানা ধরনের বিভেদ সংবিধানে জিইয়ে রাখা হয়েছে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে যে নতুন জাতীয় ঐক্যের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা আমরা হারাতে চাই না। ফলে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আমাদের এই ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়েছে। আপনাদের একটা দাবি উঠাতে হবে, আমাদের একটি নতুন সংবিধান চাই, একটি নতুন বাংলাদেশ লাগবে, একটা নতুন খাগড়াছড়ি লাগবে।”
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দীঘিনালায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “ঘটনার পর আমি দীঘিনালায় এসেছিলাম। সেই ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে কোনো আধিপত্যবাদী শক্তির জায়গা হবে না।”
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সংখ্যায় যে যত কমই হোক বা বেশি হোক না কেন, বাংলাদেশের যখন পলিসি নির্ধারণ করা হবে তখন প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থকে মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পৌঁছাতে হবে।
তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ কারণে পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি সবাই মিলে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।”
বেলা আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছান এনসিপির নেতারা। এরপর শহরের মহাজন পাড়া থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে এসে শেষ হয়।
শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চের পথসভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের পরিচালনায় বক্তব্য দেন সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক মনজিলা ঝুমা।
সমাবেশ শেষে মাইল স্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতায় দোয়া পরিচালনা করেন এনসিপির সদস্য মুফতি ইনজামুল হক।
এনসিপির সমাবেশ উপলক্ষ্যে সকাল থেকে খাগড়াছড়িতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম