১০:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
এদিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়েন।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাটডাউন’ যেমন হলো

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৬:০৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

 

তিন দাবিতে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হলেও খুলনা ও সিলেটে ক্লাস হয়েছে। তবে ‘শাটডাউন’ হিসেবে চুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি; সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বুয়েট আর রুয়েটে এদিন ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুল আলম বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাটডাউনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। তাই ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ আছে।”

বুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার আলী আশরাফ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বুয়েটে সাপ্তাহিক ছুটি, তাই এদিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেই।”

এদিনই বুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) এন এম গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ অগাস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় স্নাতক পর্যায়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ইলেক্ট্রিকাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুয়েটে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। ছুটির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলেছে বলে জানান অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না বলে কোনো তথ্য আমার কাছে আসেনি।”

ঢাকায় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এদিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়েন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বি এম ইকরামুল হক দুপুরে বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ছাত্ররা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি সঙ্গে একমত, তবে কুয়েট যেহেতু বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন; তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সে অনুযায়ী তারা বৃহস্পতিবার ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।”

শাটডাউনে চার কর্মসূচি

নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগের কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার নেতৃত্বে ছিল বুয়েট। বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়।

এসময় লাঠিপেটা, জল কামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্তি থেকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও পুলিশ সদস্য আহত হন।

এরপর বিকাল ৫টার দিকে বিফ্রিং করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা চাওয়ার দাবিসহ পাঁচ দাবি দেয় তারা। তা না হলে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের তরফে। পরে রেলভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই উপদেষ্টা।

এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় আসেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাত ১০টার পরে কমিশনারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা থানা থেকে বের হয়ে শাহবাগের শিক্ষার্থীদের জমায়েতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলেও বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রকৌশলীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ যেই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, এই পুলিশ জুলাইয়ের আগের পুলিশ, এই পুলিশের মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি।

“এই পুলিশ আগের মতই শিক্ষার্থীদের সাথে ঘৃণ্য অপকর্ম করেছে। সেই সাথে ডিসি মাসুদ মিডিয়াতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছে।”

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

এদিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়েন।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাটডাউন’ যেমন হলো

আপডেট সময় ০৬:০৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

 

তিন দাবিতে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হলেও খুলনা ও সিলেটে ক্লাস হয়েছে। তবে ‘শাটডাউন’ হিসেবে চুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি; সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বুয়েট আর রুয়েটে এদিন ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুল আলম বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাটডাউনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। তাই ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ আছে।”

বুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার আলী আশরাফ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বুয়েটে সাপ্তাহিক ছুটি, তাই এদিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেই।”

এদিনই বুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) এন এম গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ অগাস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় স্নাতক পর্যায়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ইলেক্ট্রিকাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুয়েটে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। ছুটির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলেছে বলে জানান অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না বলে কোনো তথ্য আমার কাছে আসেনি।”

ঢাকায় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এদিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়েন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বি এম ইকরামুল হক দুপুরে বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ছাত্ররা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি সঙ্গে একমত, তবে কুয়েট যেহেতু বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন; তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সে অনুযায়ী তারা বৃহস্পতিবার ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।”

শাটডাউনে চার কর্মসূচি

নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগের কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার নেতৃত্বে ছিল বুয়েট। বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়।

এসময় লাঠিপেটা, জল কামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্তি থেকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও পুলিশ সদস্য আহত হন।

এরপর বিকাল ৫টার দিকে বিফ্রিং করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা চাওয়ার দাবিসহ পাঁচ দাবি দেয় তারা। তা না হলে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের তরফে। পরে রেলভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই উপদেষ্টা।

এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় আসেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাত ১০টার পরে কমিশনারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা থানা থেকে বের হয়ে শাহবাগের শিক্ষার্থীদের জমায়েতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলেও বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রকৌশলীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ যেই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, এই পুলিশ জুলাইয়ের আগের পুলিশ, এই পুলিশের মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি।

“এই পুলিশ আগের মতই শিক্ষার্থীদের সাথে ঘৃণ্য অপকর্ম করেছে। সেই সাথে ডিসি মাসুদ মিডিয়াতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছে।”

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম