দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য জনপ্রিয় তিনি।
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল, শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি

- আপডেট সময় ০১:৩৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে
নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইতিহাস গড়লেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
শুক্রবার নেপালের রাষ্ট্রপতি ভবনে স্থানীয় সময় রাত সেয়া ৯টায় তিনি শপথ নেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল।
শপথ গ্রহণের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাম সহায় যাদব, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। ভারতের রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তবও শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, কার্কির শপথ গ্রহণের পরই নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চে হবে নির্বাচন।
নেপালের জেন-জি আন্দোলনকারী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে আলোচনায় মতৈক্য হওয়ার পরই কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, কার্কিই হচ্ছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে নেপালে গত তিন দিনের টানা বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সরকারের পতন হয়।
এরপর বুধবার আন্দোলনকারীরা কার্কিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী করতে সমঝোতায় পৌঁছেছে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এর ২৪ ঘন্টা পরই আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতপার্থক্যের খবর মেলে।
শোনা যায়, প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকে প্রধানমন্ত্রী পদে চাইছেন আন্দোলনকারীদের অনেকে, যিনি নেপালের বিদ্যুৎ সংকট সমাধান করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
এক বিবৃতিতে তার নামও প্রস্তাব করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কুলমানের নাম উঠে আসায় কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আর এরও আগে ওলি সরকারের পতনের পরই প্রাথমিকভাবে নাম শোনা গিয়েছিল রাজধানী কাঠমাণ্ডুর নির্দল মেয়র ও জনপ্রিয় র্যাপার বলেন্দ্র শাহের।
কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী শাহ প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী ছিলেন না। বরং তিনি প্রকাশ্যে কার্কির পক্ষেই সমর্থন জানান।
৭২ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। সেটিও ছিল ইতিহাস। এখন আরও এক ইতিহাসের সাক্ষী হল হিমালয়ের দেশ নেপাল।
জেন-জি (তরুণ প্রজন্ম)- যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে পতন ঘটেছে কেপি শর্মা ওলি সরকারের, তাদের মধ্যে সুশীলা কার্কির জনপ্রিয়তা আছে।
সততা, ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য পরিচিত তিনি। বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্কির কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি জনপ্রিয়।
বিচারপতি থাকাকালে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে জেলে পাঠানো থেকে শুরু করে সরাসরি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতেও পিছপা হননি কার্কি।
তবে তার বিচারপতি জীবন ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল না। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখা হয়। জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। যদিও ঘটনাটি কার্কিকে হতাশ করেছিল এবং তিনি পরে পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এবার তার সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। জেন-জি আন্দোলনে ওলি সরকারের পতনের পর নেপালের অস্থির পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনের গুরুদায়িত্ব চেপেছে কার্কির উপরে।
ওলি কোথায় জানা যায়নি:
নেপালে তীব্র বিক্ষোভের মুখে গত ৯ সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর তার অবস্থান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয়।
ইন্টারনেটে বিভিন্ন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। কেউ বলছেন, ওলি দুবাইয়ে পালিয়েছেন, আবার কেউ দাবি করছেন, তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে এসব খবরের কোনোটিই এখনও নিশ্চিত নয়।
নেপালের সেনাবাহিনী বলছে, দেশের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারাও জানে না ওলি কোথায়।
নেপালের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজারাম বাসনেত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাওকে বলেন, “আমাদের কাছে কেপি শর্মা ওলির অবস্থান সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই।”
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম