০২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
সাত ধরনের খাবার ব্রণের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে দিতে পারে।

প্রাপ্ত বয়স্কদের ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে যেসব খাবার

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৭:২৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

 

বয়স বাড়লেও অনেকের ত্বকে ব্রণ বা মুখে ফুসকুড়ির সমস্যা রয়ে যায়। কখনও হরমোনের কারণে, কখনও বংশগতির কারণে। আবার কখনও দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের জন্য এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু খাবার হরমোন এবং ত্বকের ভেতরের উপাদানকে প্রভাবিত করে যা থেকে সৃষ্টি হয় ব্রণ।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্কটসডেলের শিশু ত্বকবিদ্যা ও কসমেটিক সার্জারির পরিচালক ডা. করণ লাল এবং টেক্সাসের ত্বক বিশেষজ্ঞ একং ওয়েস্টলেক ডার্মাটোলজির চিকিৎসক ডা. এমিলি উড ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ের একটি প্রতিবেদনে কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করেছেন, যেগুলো নিয়মিত খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বকে গুরুতর ব্রণ দেখা দিতে পারে।

 

ওট দুধ (ওট মিল্ক)

অনেকেই সাধারণ দুধের বিকল্প হিসেবে ওট দুধ খেয়ে থাকেন।

তবে ডা. করণ লাল বলেন, “ওট দুধেও উচ্চমাত্রায় শর্করা থাকে যা ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে। রোগীদের মধ্যে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখেছি।”

শর্করাযুক্ত খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং এর ফলে ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়ে ও ব্রণের আশঙ্কা বাড়ে।

 

ছেঁকে তৈরি প্রোটিন

বডি বিল্ডিং বা ডায়েটের জন্য অনেকে ছেঁকে তৈরি প্রোটিন (যা প্রোটিন পাউডার হিসেবেও পরিচিত) ব্যবহার করেন। তবে এটি ত্বকের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

ডা. এমিলি উড বলেন, “উচ্চমাত্রার এই প্রোটিন শরীরে ইনসুলিন সদৃশ বৃদ্ধিকারী উপাদান (আইজিএফ-১) বাড়িয়ে দেয়, যা অ্যান্ড্রোজেন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনকে সক্রিয় করে। এতে ত্বকে অতিরিক্ত কোষ উৎপাদন হয় এবং রন্ধ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ সৃষ্টি হয়।”

অ্যান্ড্রোজেন হরমোন, যেমন- টেস্টোস্টেরন ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয় এবং ব্রণ তৈরির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার

সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি, বিস্কুট, ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ইত্যাদি উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকসম্পন্ন খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।

ডা. উড বলেন, “এই ধরনের খাবার শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়ায়, যা ব্রণের ঝুঁকি বাড়ায়।”

ডা. করণ লাল আরও বলেন, “বিশেষ করে পরিশোধিত চিনি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ব্রণ তৈরির জীবাণু ও ছত্রাকের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

 

ভিটামিন বি-সিক্স এবং বি-টুয়েল্ভ যুক্ত সাপ্লিমেন্ট

অনেকেই শরীরের শক্তি ও রক্ত তৈরির জন্য বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করেন। যার মধ্যে ভিটামিন বি-সিক্স এবং বি-টুয়েল্ভ থাকে। কিন্তু এই ভিটামিন ব্রণ বাড়াতে পারে।

ডা. উড বলেন, “এই ভিটামিন ত্বকের জীবাণু ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটায়। বিশেষ করে ‘প্রপিওনিব্যাক্টেরিয়াম’ অ্যাকনেস (পি. অ্যাকনেস) নামক জীবাণুর আচরণে প্রভাব ফেলে। এই জীবাণু ব্রণ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

 

অতিরিক্ত আয়োডিন

ডা. উড বলেন, “অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণও ব্রণকে বাড়িয়ে দিতে পারে।”

“এই উপাদান উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় সামুদ্রিক শৈবাল বা কেল্প ধরনের সাপ্লিমেন্টে। অনেক স্মুদি বা ত্বক ভালো করার দাবি করা পানীয়তে এগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে সাবধান হতে হবে। এই পানীয়গুলো আসলে ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে”- বলেন তিনি।

আয়োডিন কীভাবে ব্রণ বাড়ায় তা পুরোপুরি জানা না গেলেও, এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তৈলাক্ততা বাড়ায় বলে ধারণা করা হয়।

 

চর্বি কমানো দুধ

অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে চর্বিহীন বা স্কিম দুধ পান করেন। কিন্তু এটি ত্বকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

ডা. লাল বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা স্কিম দুধ পান করেন, তাদের ব্রণের প্রবণতা বেশি। সম্ভবত উচ্চ শর্করা, ইনসুলিন বৃদ্ধিকারী উপাদান এবং হরমোনের কারণেই এটি হয়।”

তাছাড়া স্কিম দুধে থাকা নির্দিষ্ট প্রোটিন এবং আয়োডিনও ব্রণর জন্য দায়ী হতে পারে।

ডা. লাল পরামর্শ দেন, “চাইলে বাদাম দুধ বা গোটা দুধের (এমন দুধ যা থেকে চর্বি (ফ্যাট) আলাদা করা হয়নি) দিকে যেতে পারেন, তবে স্কিম দুধ এড়িয়ে চলাই ভালো।”

 

সয়া প্রোটিন

নিরামিষভোজীদের খাদ্যতালিকায় সয়া প্রোটিন একটি জনপ্রিয় উপাদান। কিন্তু অতিরিক্ত সয়া গ্রহণ ব্রণের কারণ হতে পারে।

ডা. করণ লাল বলেন, “কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সয়া গ্রহণে ব্রণ দেখা দেয়। তবে সয়া একেবারে বাদ দিতে হবে না, বরং পরিমিত খাওয়াই উত্তম।”

 

 

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

সাত ধরনের খাবার ব্রণের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে দিতে পারে।

প্রাপ্ত বয়স্কদের ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে যেসব খাবার

আপডেট সময় ০৭:২৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

 

বয়স বাড়লেও অনেকের ত্বকে ব্রণ বা মুখে ফুসকুড়ির সমস্যা রয়ে যায়। কখনও হরমোনের কারণে, কখনও বংশগতির কারণে। আবার কখনও দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের জন্য এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু খাবার হরমোন এবং ত্বকের ভেতরের উপাদানকে প্রভাবিত করে যা থেকে সৃষ্টি হয় ব্রণ।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্কটসডেলের শিশু ত্বকবিদ্যা ও কসমেটিক সার্জারির পরিচালক ডা. করণ লাল এবং টেক্সাসের ত্বক বিশেষজ্ঞ একং ওয়েস্টলেক ডার্মাটোলজির চিকিৎসক ডা. এমিলি উড ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ের একটি প্রতিবেদনে কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করেছেন, যেগুলো নিয়মিত খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বকে গুরুতর ব্রণ দেখা দিতে পারে।

 

ওট দুধ (ওট মিল্ক)

অনেকেই সাধারণ দুধের বিকল্প হিসেবে ওট দুধ খেয়ে থাকেন।

তবে ডা. করণ লাল বলেন, “ওট দুধেও উচ্চমাত্রায় শর্করা থাকে যা ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে। রোগীদের মধ্যে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখেছি।”

শর্করাযুক্ত খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং এর ফলে ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়ে ও ব্রণের আশঙ্কা বাড়ে।

 

ছেঁকে তৈরি প্রোটিন

বডি বিল্ডিং বা ডায়েটের জন্য অনেকে ছেঁকে তৈরি প্রোটিন (যা প্রোটিন পাউডার হিসেবেও পরিচিত) ব্যবহার করেন। তবে এটি ত্বকের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

ডা. এমিলি উড বলেন, “উচ্চমাত্রার এই প্রোটিন শরীরে ইনসুলিন সদৃশ বৃদ্ধিকারী উপাদান (আইজিএফ-১) বাড়িয়ে দেয়, যা অ্যান্ড্রোজেন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনকে সক্রিয় করে। এতে ত্বকে অতিরিক্ত কোষ উৎপাদন হয় এবং রন্ধ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ সৃষ্টি হয়।”

অ্যান্ড্রোজেন হরমোন, যেমন- টেস্টোস্টেরন ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয় এবং ব্রণ তৈরির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার

সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি, বিস্কুট, ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ইত্যাদি উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকসম্পন্ন খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।

ডা. উড বলেন, “এই ধরনের খাবার শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়ায়, যা ব্রণের ঝুঁকি বাড়ায়।”

ডা. করণ লাল আরও বলেন, “বিশেষ করে পরিশোধিত চিনি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ব্রণ তৈরির জীবাণু ও ছত্রাকের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

 

ভিটামিন বি-সিক্স এবং বি-টুয়েল্ভ যুক্ত সাপ্লিমেন্ট

অনেকেই শরীরের শক্তি ও রক্ত তৈরির জন্য বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করেন। যার মধ্যে ভিটামিন বি-সিক্স এবং বি-টুয়েল্ভ থাকে। কিন্তু এই ভিটামিন ব্রণ বাড়াতে পারে।

ডা. উড বলেন, “এই ভিটামিন ত্বকের জীবাণু ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটায়। বিশেষ করে ‘প্রপিওনিব্যাক্টেরিয়াম’ অ্যাকনেস (পি. অ্যাকনেস) নামক জীবাণুর আচরণে প্রভাব ফেলে। এই জীবাণু ব্রণ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

 

অতিরিক্ত আয়োডিন

ডা. উড বলেন, “অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণও ব্রণকে বাড়িয়ে দিতে পারে।”

“এই উপাদান উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় সামুদ্রিক শৈবাল বা কেল্প ধরনের সাপ্লিমেন্টে। অনেক স্মুদি বা ত্বক ভালো করার দাবি করা পানীয়তে এগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে সাবধান হতে হবে। এই পানীয়গুলো আসলে ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে”- বলেন তিনি।

আয়োডিন কীভাবে ব্রণ বাড়ায় তা পুরোপুরি জানা না গেলেও, এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তৈলাক্ততা বাড়ায় বলে ধারণা করা হয়।

 

চর্বি কমানো দুধ

অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে চর্বিহীন বা স্কিম দুধ পান করেন। কিন্তু এটি ত্বকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

ডা. লাল বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা স্কিম দুধ পান করেন, তাদের ব্রণের প্রবণতা বেশি। সম্ভবত উচ্চ শর্করা, ইনসুলিন বৃদ্ধিকারী উপাদান এবং হরমোনের কারণেই এটি হয়।”

তাছাড়া স্কিম দুধে থাকা নির্দিষ্ট প্রোটিন এবং আয়োডিনও ব্রণর জন্য দায়ী হতে পারে।

ডা. লাল পরামর্শ দেন, “চাইলে বাদাম দুধ বা গোটা দুধের (এমন দুধ যা থেকে চর্বি (ফ্যাট) আলাদা করা হয়নি) দিকে যেতে পারেন, তবে স্কিম দুধ এড়িয়ে চলাই ভালো।”

 

সয়া প্রোটিন

নিরামিষভোজীদের খাদ্যতালিকায় সয়া প্রোটিন একটি জনপ্রিয় উপাদান। কিন্তু অতিরিক্ত সয়া গ্রহণ ব্রণের কারণ হতে পারে।

ডা. করণ লাল বলেন, “কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সয়া গ্রহণে ব্রণ দেখা দেয়। তবে সয়া একেবারে বাদ দিতে হবে না, বরং পরিমিত খাওয়াই উত্তম।”

 

 

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম