প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য শনাক্ত করেছে মিয়ানমার

- আপডেট সময় ০৩:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজার জনকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করেছে দেশটি। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শুক্রবার থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী উ থান শিউ।
মি. শিউ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন।
ওই বৈঠকেই তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্যটি জানিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর তরফে জানানো হয়েছে।
২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ছয় ধাপে ওই তালিকা সরবরাহ করা হয়।
আট লাখের তালিকার মধ্যে এ পর্যন্ত এক লাখ আশি হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার জানিয়েছে, আরো ৭০ হাজার জনের যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে।
নাম ও ছবি যাচাই হয়ে গেলে তাদের চূড়ান্ত করা হবে।
ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে এই বৈঠকের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এ ধরনের তথ্য সামনে এলো।
এটিকে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে একটি বড় ও একটি দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বার্তায়।
প্রক্রিয়াধীন ৭০ হাজারের পর আট লাখের তালিকায় বাকি থাকবে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার।
মিয়ানমারের পররাষ্টমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তাদের যাচাই কার্যক্রমও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক অগ্রগতি বলেই চিহ্নিত করছেন বাংলাদেশের একজন সাবেক কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
তবে, এখনই কোনো উপসংহারে পৌঁছানো উচিত হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি একটি পজিটিভ ডেভেলপমেন্ট। কিন্তু, এর মধ্য দিয়ে কনক্লুসিভ ডেভেলপমন্টে পৌঁছানো সহজ হবে না।”
কারণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টানছেন মি. আহমদ।
“টাইমিংটা একটু জটিল। রাখাইন এখন প্রধানত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সেখানে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ফলে, জান্তার তৎপরতার পাশাপাশি অন্যদের সম্পৃক্ততা জরুরি,” বলেন চীনে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই কূটনীতিক।
যেহেতু এক লাখ আশি হাজার রোহিঙ্গার একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিললো, আজ হোক কাল হোক প্রত্যাবাসনের জন্য একটা প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করবে এই স্বীকৃতি।
তবে, রাখাইনে জান্তা নিয়ন্ত্রণ ফিরে না পেলে, সেগুলো নিছকই দলিল হয়েও থেকে যেতে পারে।
“আর, যদি জান্তা বা কেন্দ্রীয় সরকার কখনো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়ও, স্থানীয় প্রশাসনে রাখাইনদের আধিপত্য থাকবেই,” যোগ করে মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, “সেক্ষেত্রে, তাদের সঙ্গেও একটা বোঝাপড়া কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”
বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোয় সব মিলিয়ে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েকমাসে।
এর পরেও বিভিন্ন সময়ে অল্প সংখ্যায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরও তা অব্যাহত ছিল।
বিশেষ করে, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বি-পাক্ষিক, বহুপাক্ষিক আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার।