“এখন থেকে টকশো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় আপনি (ফজলুর রহমান) দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুন্ন না হয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সর্বদা সর্তক থাকবেন।”
ফজলুর রহমানের সদস্যপদ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করল বিএনপি

- আপডেট সময় ০৮:২০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান।
‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের জেরে পাওয়া নোটিসের জবাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ‘সন্তোষজনক না হওয়ায়’ দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এ সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে ফজলুরের কাছে পাঠিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৬ অগাস্ট কারণ দর্শানো নোটিসের যে জবাব ফজলুর রহমান দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়। তথাপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান বিবেচনা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দলীয় প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, “এখন থেকে আপনি (ফজলুর রহমান) টকশো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুন্ন না হয় এবং দেশের জনগোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সর্বদা সর্তক থাকবেন।”
এর আগে বিকালে আইনজীবী ফজলুর রহমান কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব পত্রবাহকের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতরে জমা দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী চিঠি দেন ফজলুরকে।
‘বির্তকিত’ মন্তব্য করা নিয়ে আলোচনায় থাকা ফজলুর কারণ দর্শানোর নোটিসে দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো কথা বলেননি বা কাজ করেননি দাবি করে ভবিষ্যতেও করবেন না প্রতিশ্রুতি দেন।
মঙ্গলবার বিকালে তার স্ত্রী আইনজীবী উম্মে কুলসুম রেখা বলেন, তিনি (ফজলুর রহমান) এই সংক্রান্ত চিঠির জবাব লিখিতভাবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। এখন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
আইনজীবী ফজলুর রহমানের নিজস্ব প্যাডে চার পৃষ্ঠার এ জবাব দেওয়া হয়েছে। এতে দলের তরফ থেকে যেসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে সেগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন বলে তুলে ধরেন তার স্ত্রী।
লিখিত জবাবে বিএনপি নেতা ফজলুর বলেন, “আমার প্রিয় দল বিএনপির ক্ষতি হয় এমন কোনো কথা বা কাজ আমি করিনি এবং করবও না।জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে বিচার বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে। আমি আশা করি, সুবিচার পাব এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকব।”
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অনবরত ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অগাস্ট দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুরকে নোটিশ দেয় বিএনপি। ফজলুর রহমানের ঢাকার ঠিকানায় এ নোটিস পাঠানো হয় বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে।
কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘‘উদ্ভট ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি বক্তব্যের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হল।”
এতে বলা হয়, “আপনি জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং আত্মদানকারী শহীদদের নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলীয় আদর্শ ও গণ অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি। এই গণ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আপনার বক্তব্য দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের প্রয়াস বলে অনেকেই মনে করে।
‘‘এমনকি আপনি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত দিয়ে কথা বলছেন। জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে বিএনপির সাড়ে চারশোর অধিক নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজারের অধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ৩০ হাজারেরও অধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এ ধরণের বীরোচিত ভূমিকাকে আপনি প্রতিনিয়ত অপমান ও অমর্যাদা করছেন।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে ভিন্ন বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জন্য তিনি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দেন।
তার ভাষ্য, এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মূল পরিকল্পনাকারী ‘কালো শক্তি’ জামায়াত।
কিশোরগঞ্জ থেকে ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বেশ কিছুদিন ধরে এমন বিভিন্ন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করেছে। অভ্যুত্থান নিয়ে তার বক্তব্য ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায় ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়।
এরপর রোববার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিএনপি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার বেলা ১১টার পর সেগুনবাগিচায় ফজলুরের বাসার সামনে অবস্থান নেন একদল ব্যক্তি।
অপরদিকে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে দেশ-বিদেশ থেকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের’ কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাকে মব সৃষ্টিকারীরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসার সামনে ওরা অবস্থান নিয়েছে। আজ আপনাদের মাধ্যমে আমি সারা জাতিকে জানাতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে।”
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম