০২:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
“অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এমডির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে,” বলেন চেয়ারম্যান।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডির চাকরি গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৭:৪৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

 

বিনিয়োগ ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগে চাকরি হারালেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

এক সময় এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ব্যাংকে ‘ফরেনসিক অডিট’ শুরুর পর গত জানুয়ারি মাসে ওয়াসেক আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এবার তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হল।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এমডির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক কোম্পানি আইনে ভেঙে নজিরবিহীনভাবে সাতটি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার দখলে নেয়। সাইফুল আলম তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও কিছু আত্মীয়কে একাধিক ব্যাংকের বোর্ডে বসান।

সাইফুল আলম নিজে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ চার ছিলেন বোর্ডে।

তাদের ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মাইমুনা খানম ও জামাতা বেলাল আহমেদ যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাইফুল আলমের ভাই, বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়রাও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে ছিলেন।

এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎকরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতায় পালাবদলের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে।

এর মধ্যেই সরকার অনিয়মে জর্জরিত আর্থিক খাতের সংস্কারে শ্বেতপত্র প্রকাশের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাক্সফোর্স গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে কারিগরি ও অর্থ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বিশ্ব ব্যাংকও ফরেনসিক অডিট করতে সহযোগিতার কথা বলে। এরপরই সবচেয়ে বেশি সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকে ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত হয়।

অডিট চলাকালে শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “জানুয়ারি মাসেই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়, কারণ এ ব্যাংকে ঘটে যাওয়া নানা রকমের অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন পাঠায়। তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতেই তাকে অপসারণ করা হল।”

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর। প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং দিয়ে শুরু হলেও ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারার ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়।

এস আলম গ্রুপ ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপের কাছ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। চেয়ারম্যান হন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজে। এরপরই ব্যাংকটিকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে তার পরিবারের এক সদস্যকে ওই ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছিল।

“এরশাদের মৃত্যুর পর সেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে, কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আদায় না হলেও খেলাপি দেখানো হয়নি। অনিয়ম প্রকট হওয়ায় গত বছর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।”

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এমডির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে,” বলেন চেয়ারম্যান।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডির চাকরি গেল

আপডেট সময় ০৭:৪৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

 

বিনিয়োগ ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগে চাকরি হারালেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

এক সময় এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ব্যাংকে ‘ফরেনসিক অডিট’ শুরুর পর গত জানুয়ারি মাসে ওয়াসেক আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এবার তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হল।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এমডির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক কোম্পানি আইনে ভেঙে নজিরবিহীনভাবে সাতটি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার দখলে নেয়। সাইফুল আলম তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও কিছু আত্মীয়কে একাধিক ব্যাংকের বোর্ডে বসান।

সাইফুল আলম নিজে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ চার ছিলেন বোর্ডে।

তাদের ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মাইমুনা খানম ও জামাতা বেলাল আহমেদ যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাইফুল আলমের ভাই, বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়রাও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে ছিলেন।

এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎকরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতায় পালাবদলের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে।

এর মধ্যেই সরকার অনিয়মে জর্জরিত আর্থিক খাতের সংস্কারে শ্বেতপত্র প্রকাশের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাক্সফোর্স গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে কারিগরি ও অর্থ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বিশ্ব ব্যাংকও ফরেনসিক অডিট করতে সহযোগিতার কথা বলে। এরপরই সবচেয়ে বেশি সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকে ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত হয়।

অডিট চলাকালে শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “জানুয়ারি মাসেই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়, কারণ এ ব্যাংকে ঘটে যাওয়া নানা রকমের অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন পাঠায়। তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতেই তাকে অপসারণ করা হল।”

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর। প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং দিয়ে শুরু হলেও ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারার ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়।

এস আলম গ্রুপ ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপের কাছ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। চেয়ারম্যান হন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজে। এরপরই ব্যাংকটিকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে তার পরিবারের এক সদস্যকে ওই ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছিল।

“এরশাদের মৃত্যুর পর সেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে, কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আদায় না হলেও খেলাপি দেখানো হয়নি। অনিয়ম প্রকট হওয়ায় গত বছর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।”

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম