এআই নিয়ে গবেষণাগার ও বিভিন্ন কোম্পানিতে যা কিছু হচ্ছে তাতে ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে’ নিউক্লিয়ার ফিউশন শক্তি ব্যবহারের একাধিক উপায় মিলতে পারে।
ফিউশনই বিশ্বে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে: মার্কিন জ্বালানি প্রধান

- আপডেট সময় ০২:১৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২১ বার পড়া হয়েছে
নিউক্লিয়ার ফিউশন খুব শিগগিরই বিশ্বে শক্তির চাহিদা মেটাবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি সেক্রেটারি ক্রিস রাইট বলেছেন, “বিশ্বে জলবায়ুর উষ্ণায়ন নিয়ে এত বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এমন প্রযুক্তি তৈরি করবে, যার মাধ্যমে আমরা নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে শক্তি পাব। সূর্যসহ বিভিন্ন তারায় একই পদ্ধতিতে শক্তি তৈরি হয়।”
রাইট আশা করছেন, আগামী আট থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রিডে শক্তি সরবরাহ কররবে এ প্রযুক্তি, যা খুব দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর বড় এক কারণে পরিণত হবে।
তার এমন দাবিতে এ প্রযুক্তিতে আগ্রহ থাকা মানুষজনও অবাক হত পারেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
পরমাণু যখন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শক্তি ছাড়ে তখন সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে কম কার্বনওয়ারা শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর অনুমান, বাণিজ্যিকভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে এখনও অনেক দেরি।
রাইট বলেছেন, এআই নিয়ে জাতীয় গবেষণাগার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানিতে যেভাবে গবেষণা এগোচ্ছে তাতে আমরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিউশন শক্তি ব্যবহারের একাধিক উপায় খুঁজে পাব।
“আগামী আট থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিডে ব্যবহার শুরু হবে এ প্রযুক্তির।”
বিজ্ঞানীদের ধারণা, নিউক্লিয়ার ফিউশন এমন এক শক্তির উৎস হতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করলেও পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডলকে গরম করবে না।
তবে এটি খুব জটিল এক প্রক্রিয়া। কারণ পৃথিবীতে ফিউশন ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পরমাণুকে সূর্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি তাপমাত্রায় গরম করতে হবে।
যুক্তরাজ্য সরকারকে ফ্র্যাকিংয়ের ওপর থেকে কার্যত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এবং উত্তর সাগরে নতুন তেল ও গ্যাস লাইসেন্স জারির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত এ জ্বালানি প্রধান।
জ্বালানি সচিব সতর্ক করে বলেছেন, চীনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গুরুতর উদ্বেগ’ রয়েছে।
তিনি বলেছেন, “বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের শক্তি ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে চীন।”
ট্রাম্পের দাবি পুনরায় উল্লেখ করে রাইট বলেছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহারের কারণে তাদের বিভিন্ন শিল্পখাত ক্ষতির মুখে পড়ার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদেরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বর্তমানে ব্রাসেলসে রয়েছেন রাইট। কারণ আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন ট্রাম্প। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্প উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজা চার্লসের আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশও নেবেন।
বিবিসির ওই সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সচিব আরও বলেছেন, ফ্র্যাকিং বা ভূগর্ভস্থ শিলা থেকে তেল ও গ্যাস বের করার পদ্ধতি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ‘বড়’ প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্র্যাকিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন রাইট। তিনি বলেছেন, ফ্র্যাকিং থেকে উৎপাদিত তেল ও গ্যাস “উৎপাদনখাত ও শ্রমজীবী মানুষের কাজ ফিরিয়ে আনতে পারে, এমনকি কেবল বিদ্যুতের দামই নয়, বাড়ি গরম করার খরচ এবং শিল্প খাতের শক্তি খরচও কমিয়ে আনতে পারে”।
তবে ‘ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে’ সতর্ক করে বলেছে, এই প্রযুক্তি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রচুর তেল ও গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা সীমিত বা কঠিন হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবেশবান্ধব শক্তি সাহায্য অর্থায়নে কোটি কোটি ডলারের কাটছাঁটের পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন রাইট। তিনি বলেছেন, ৩৩ বছর ধরে বায়ু শক্তিকে ও ২৫ বছর ধরে সৌর শক্তিকে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে বহু বছর ধরেই সাহায্য পেয়ে এসেছে এসব খাত। এখন তা কমানোর সিদ্ধান্ত সঠিক।
“এটাই কি যথেষ্ট নয়?” এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জ্বালানি সচিব বলেছেন, “২৫ থেকে ৩০ বছর সাহায্য পাওয়ার পর তোমাদের নিজেদের পায়েই দাঁড়াতে পারা উচিত।”
জুলাইয়ে প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি বিভাগের প্রতিবেদনের পক্ষেও কথা বলেছেন জ্বালানি সচিব। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক বেশি আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন ‘খুবই বাস্তব ও ভৌত ঘটনা’ স্বীকার করে রাইট বলেছেন, “পৃথিবী থেকে কার্বন নির্গমন কমবে তবে তা আগামী দুই-তিন দশকে নয়, বরং অনেক প্রজন্ম পর হবে।”
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের জলবায়ু বিজ্ঞান খাতে বাজেট কাটছাঁটের বিষয়টি, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা এনওএএ-এর তহবিল কমানোর প্রস্তাব রয়েছে তা আমেরিকার আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে– এমন দাবি অস্বীকার করেছেন রাইট।
‘অনেকে ভুল বা অতিরঞ্জিত ঘটনার গুজব ছড়াচ্ছেন’ দাবি করে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ‘সত্যিকার বৈজ্ঞানিক’ গবেষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম