“আরএসজিটি বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে এসেছে। আরএসজিটির যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সাথে হয়েছে, সেটা একদম সুখকর না।”
বছর শেষে বন্দরের তিন টার্মিনালে নতুন অপারেটর: বিডা চেয়ারম্যান

- আপডেট সময় ১০:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪৪ বার পড়া হয়েছে
সরকার চলতি বছরের শেষ নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর ও বে-টার্মিনালে ‘প্রথম‘অপারেটর নিয়োগ দিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুণ।
রোববার বিকালে বন্দরের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আর্ন্তজাতিক দরপত্র করার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের ইচ্ছা আছে এ বছরের শেষ নাগাদ সবগুলো পোর্টের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে এনসিটি, লালদিয়া এবং বে টার্মিনাল–এ তিনটার ক্ষেত্রেই প্রথম অপারেটরটাকে অ্যাটলিস্ট অ্যাপয়েন্ট করে দিয়ে যাওয়া।”
গত ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনা করছে নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)।এর আগে বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড এ টার্মিনাল পরিচালনা করছিল।
বিভিন্ন সময়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশি অপারেটর, বিশেষ করে আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওর্য়াল্ডকে বন্দরের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোরালো আপত্তি উঠেছে।
বর্তমানে সৌদি আরবভিত্তিক কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করছে। বিদেশি অপারেটরটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারছে না।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “আরএসজিটি বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে এসেছে। আরএসজিটির যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সাথে হয়েছে, সেটা একদম সুখকর না। বাংলাদেশে অনেক ধরনের জটিলতার মধ্যে উনারা পড়েছেন। তার একটা বড় কারণ আমাদের সাইডে আমরা কখনো ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট অপারেটরদের ডিল করি নাই।
“আসলে অনেকগুলো স্টেপে গিয়ে জিনিসগুলো আটকে গেছে। আজকেও বেশকিছু টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে উনারা সাফার করছেন। যে কারণে আরএসজিটি যে ভলিউমটা এক্সপেক্ট করেছে, সে লেভেলে গ্রোথ আসলে হয়নি।”
চট্টগ্রাম ড্রাই ডক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে আশিক চৌধুরী বলেন, “গত এপ্রিল-মে মাসে যখন এসেছিলাম, তখন আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশীয় একটা অপারেটর তো খুব ভালো করছে, কেন আপনারা খালি খালি বলছেন এখানে অপারেটর চেইঞ্জ করতে হবে। আমরাতো এখন চেঞ্জ করে প্রমাণ করে দিলাম। আসলে খুব ভালোটা যে কতটুক, সেটা আমরা নিজেরাও জানি না। আমাদের এটা নির্ধারণ করা নেই এ পোর্ট থেকে আসলে ম্যাক্সিমাম কতটুকু ভলিয়ম পাওয়া সম্ভব।”
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক দশমিক ৯ মিলিয়ন টিইইউস পর্যন্ত কন্টেইনার ওঠানামা করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গতবছর আমাদের যেটা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল এক দশমিক ৩ মিলিয়ন টিইইউস (বাৎসরিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং)। টেকনোলজি, বেস্ট প্র্যাকটিস ও গ্লোবাল প্র্যাকটিস এলে এটা তারও উপরে চলে যাবে।
“সো আমার মনে হয় সাবজেক্টটিভ জাজমেন্ট না করে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক ভালো করছে এটাই কি বেস্ট কি না, সেটা বলার ক্ষমতা আসলে যারা এক্সপার্ট তাদের কাছেই আছে। যার এটা করে অভ্যস্ত, যারা নিজেদের টপ র্যাঙ্ক হয়ে অভ্যস্ত, তাদের কাছে গিয়ে আমাদের বুঝতে হবে কোন মডেলটা আমাদের দেশের জন্য মোস্ট ফেভারেবল।”
সরকারের কাছে ‘জাতীয় স্বার্থই গুরুত্বপূর্ণ’ দাবি করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে সেটা করতে হবে। সিডিডিএলকে দিয়ে যদি আমরা ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি অ্যাচিভ করতে পারি, সেটা ফ্যান্টাস্টিক। যদি আমাদের মনে হয়, না, এখানে আরও কিছু টেকনোলজি অ্যাডভান্টেজ আনা সম্ভব এবং আরও গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস আনলে হয়ত ভালো হতে পারে, তাহলে আমরা হয়ত সে রাস্তায় যাবার চেষ্টা করব।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমরা একটা গ্লোবাল ফ্যাক্টরি হতে চাই। সেটা হতে গেলেই চট্টগ্রাম বন্দরকে এক্সট্রিম কনডিশনে পারফরম করতে হবে। তার বেস্ট পসিবলিটি ক্যাপবিলিটি ১০০ পারসেন্টও না ১৫০ পার্সেন্টে অপারেট করতে হবে। চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড টেকওভার করার পরে প্রথম এক মাসে শতকরা ৩০ ভাগ কন্টেইনার হ্যান্ডংলিং বৃদ্ধি পেয়েছে।
“অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, একজন অপারেটর থেকে আরেকজনের কাছে যাবে, দেশের কী হবে। আরেকটা তথ্য হল, জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম শতকরা ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। সবগুলো খুব ভালো খবর আমাদের জন্য। আমরা সবসময় বলে এসেছি, বাংলাদেশের পোর্টটা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ের ওপরের দিকে থাকতে হবে।আমাদের স্বার্থের কারণে।উপরের দিকে থাকার জন্য আমাদের বেস্ট অপারেটরদের নিয়ে আসতে হবে এখানে।”
পৃথিবী ‘আনেক এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে আশিক চৌধুরী বলেন, “আমরা অনেক স্লো আগাচ্ছি, সেটাকে আমরা ব্রেক করতে চাই। আমরা চাই খুব ফাস্ট এ প্রজেক্টগুলো কমপ্লিট করব। আমাদের এখন অ্যাম্বিশন হচ্ছে যে এ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা বড় যে পোর্টগুলো আছে সেগুলোর মাইলস্টোন প্রোগ্রেস করে দিয়ে যেতে চাই। কিছু অ্যাগ্রিমেন্ট সাইন করে দিতে চাই। কিছু গ্রাউন্ড ব্রেক করা শুরু হয়ে যাবে।
“এমন একটা জায়গায় আমরা নিয়ে যাব, যেখানে চাকা গড়ানো শুরু করলে সেখানে চাকাটা আর থামানো সম্ভব না।নির্বাচনে রাজনৈতিক সরকার এলে তাদের সেটেল হতে সময় লাগবে, ওই সময়টাতে যাতে তাদের কোন কাজ থেমে না থাকে।”
তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে একটি হেল্প ডেস্কের উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ভেহিক্যাল ও কন্টেইনার ডিজিটাল ডাটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন।
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম