১১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
তাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, জমি দখলের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

আহমেদ আকবর সোবহান

 

‘জোর করে জমি দখল, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

রোববার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির করা হয়েছে।”

দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৮৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তিনি মোট ২৫২ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।

তিনি ও তার স্ত্রী যৌথভাবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম দেশে ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭১ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৩৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের মূল্য ৪৫৩ কোটি ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।

স্বামী সঙ্গে তিনিও সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ পঞ্চাশ ৫০ ডলার ‘পাচার করে’ সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন।

দুদকের অভিযোগ, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী নিজেদের নামে বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে দেশে ও দেশের বাইরে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, যা ‘অসাধু উপায়ে’ অর্জিত হয়েছে।

এসব সম্পদ তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ হওয়ায় যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অনুমোদন গ্রহণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে’ তারা দেশের অর্থ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পাচার করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ ‘অর্থ পাচার’ করেছেন।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচারের’ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।

এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।

এ বছর এপ্রিলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।

জুনে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে—গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) এবং কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহানের ‘যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের’ তথ্য জানিয়ে সে দেশে চিঠি পাঠানোর কথা বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

তাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, জমি দখলের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

আপডেট সময় ০৫:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

 

‘জোর করে জমি দখল, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

রোববার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির করা হয়েছে।”

দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৮৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তিনি মোট ২৫২ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।

তিনি ও তার স্ত্রী যৌথভাবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম দেশে ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭১ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৩৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের মূল্য ৪৫৩ কোটি ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।

স্বামী সঙ্গে তিনিও সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ পঞ্চাশ ৫০ ডলার ‘পাচার করে’ সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন।

দুদকের অভিযোগ, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী নিজেদের নামে বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে দেশে ও দেশের বাইরে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, যা ‘অসাধু উপায়ে’ অর্জিত হয়েছে।

এসব সম্পদ তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ হওয়ায় যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অনুমোদন গ্রহণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে’ তারা দেশের অর্থ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পাচার করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ ‘অর্থ পাচার’ করেছেন।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচারের’ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।

এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।

এ বছর এপ্রিলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।

জুনে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে—গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) এবং কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহানের ‘যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের’ তথ্য জানিয়ে সে দেশে চিঠি পাঠানোর কথা বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম