“দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয়ে গেছে। আসামি জামিন পেলে বাদীর কোনো আপত্তি নেই।"
বাদীকে বিয়ের পর গায়ক নোবেলের জামিন, মুক্তিতে ‘বাধা নেই’

- আপডেট সময় ১২:১৩:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
‘ধর্ষণ ও মারধরের’ অভিযোগে ডেমরা থানার মামলায় আলোচিত গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে জামিন দিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম মেহেরা মাহাবুব মঙ্গলবার ২৪ জুন দুপুরে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এই মামলার বাদীকে কারাগারে বসেই বিয়ে করার পাঁচ দিনের মাথায় জামিন পেলেন নোবেল।
নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন জামিন শুনানি করেন।
তিনি জানিয়েছেন আদালত নোবেলকে এক হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেছেন।
“আশা করি, আজই তিনি কারামুক্ত হবেন।”
শুনানিতে তিনি বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয়ে গেছে। আসামি জামিন পেলে বাদীর কোনো আপত্তি নেই। বাদী আদালতে উপস্থিত আছেন।”
তখন বিচারক বাদীকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনাদের মধ্যে কি আপোষ হয়েছে? আসামি জামিন পেলে কী আপনার কোন আপত্তি আছে?”
তখন বাদী বলেন, “না স্যার। আমার কোনো আপত্তি নেই।”
এরপর বিচারক বলেন, “জামিনের দরখাস্তে সেই কথাটা লিখে দেন।”
পরে বিচারক নোবেলের জামিন মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে নোবেলকে আদালতে হাজির করা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বাদীর সাথে নোবেলকে ওই সময় গল্পগুজব করতেও দেখা গেছে।
গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে যে তরুণী মামলা করেছিলেন, তাকে গত ১৯ জুন কারাগারে বসেই বিয়ে করেন নোবেল।
বিয়েতে কাবিন ধরা হয় ১০ লাখ টাকা। দুই পক্ষ থেকে দুজন করে সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে যে যার মত করে চলে যান।
আগের দিন ১৮ জুন নোবেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইডেন মহিলা কলেজের ওই ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করার অনুমতি দেয় আদালত।
এর আগে মামলার রাতেই নোবেলকে ডেমরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
সেসময় ফেইসবুকে ছড়ানো একটি ভিডিওতে এক তরুণীকে মারধর করে হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিতে দেখা যায় নোবেলকে। কয়েকজন বাধা দিতে দেখা গেলেও তাকে থামানো যায়নি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে ডেমরায় তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর নোবেল তাকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান নোবেল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আটকে রাখার পর থেকে বাদীকে মারধর করা হয়। দুই-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাকে চিনতে পারে। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে।
মামলা বা গ্রেপ্তার নোবেলের জন্য নতুন নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট, মাদকাসক্তি আর স্ত্রীকে নির্যাতনের মত অভিযোগে বহুবারই এই তরুণ গায়ক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১৯ মে ঢাকার মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাফায়েত ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে এক দিনের হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে নেওয়ার পর জামিন পান নোবেল।
২০১৯ সালে ভারতের জি-বাংলা টিভির রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’তে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে আলোচনায় আসেন নোবেল। তবে নানা কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে বিতর্কও বাড়তে থাকে।
২০২৩ সালেরই ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে গান পরিবেশনের সময় মঞ্চে নোবেলের ‘অসংলগ্ন আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে দর্শক। আর তাতে পণ্ড হয় ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হয়ে নিজের ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে আসার জানান দিচ্ছিলেন নোবেল। এর মধ্যেই নতুন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে তাকে জেলে যেতে হয় তাকে।
নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম