০২:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বান্ধবীকে উত্ত্যক্তের জেরে গভীর রাতে জাবির দুই হল উত্তপ্ত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৩০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
  • / ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে জানা গেছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুই হলের মধ্যবর্তী রবীন্দ্র চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন উভয় হলের শিক্ষার্থীদের লোহার পাইপ, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও ব্যাট নিয়ে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অনেকে হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলেন। তবে অন্ধকার ও স্ট্রিট ল্যাম্পগুলো বন্ধ থাকায় তাদের কারো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। সংঘর্ষ শেষে দুই হলের প্রবেশ পথগুলোতে এসব স্ট্যাম্প, ব্যাট ও লোহার পাইপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের রবি, শাফায়াত ও নিরব এবং রফিক-জব্বার হলের সাকিব, ইশতিয়াক, নিশাত ও জাহিদ। এছাড়া বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুলাই রাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী ও ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন মিরাজ তার বান্ধবীকে নিয়ে নতুন কলা ভবনের নিচের ভেন্ডিং মেশিন থেকে পানীয় (জুস) কিনতে যায়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থী ও প্রথম বর্ষের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রাফিসহ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিরাজের বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাফিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে রবীন্দ্র চত্বরে পেয়ে মিরাজ ও তার বন্ধুরা জেরা করেন। এ সময় রাফির সঙ্গে থাকা তার হলের বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে পালটা তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এ ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘণ্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা উচ্চশব্দের তিনটি পটকা ফোটায়। একপর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উভয় হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্র মিরাজ বলেন, গত বুধবার রাতে নতুন কলা ভবনে গেলে রফিক-জব্বার হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন। এ সময় তাদের নাম পরিচয় না জানায় কিছু বলিনি, কয়েকজনের মুখ চিনে রাখেন। পরে গতকাল রাতে তাদের মধ্যে রাফি নামের একজনকে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পাই। সেদিন উত্ত্যক্ত করার কারণ জানতে চাইলে রাফি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কয়েকজনের হাতাহাতি হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে ৩টার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে রাফির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও রফিক জব্বার হলে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। তিনি বলেন, কয়েক দফায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে মেডিকেলে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শনিবার ভোরে উভয় হলের দায়িত্বরত শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের কথা শুনেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্য একটি জায়গার ঘটনা হলে টেনে আনায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই। যারা ছাত্র সুলভ আচরণ করছে না তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক রনি হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রাথমিকভাবে একটা প্রতিবেদন জমা দেব। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক প্রতিবেদনের সাপেক্ষে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড থেকে অধিকতর তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

বান্ধবীকে উত্ত্যক্তের জেরে গভীর রাতে জাবির দুই হল উত্তপ্ত

আপডেট সময় ১০:৩০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩

বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে জানা গেছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুই হলের মধ্যবর্তী রবীন্দ্র চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন উভয় হলের শিক্ষার্থীদের লোহার পাইপ, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও ব্যাট নিয়ে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অনেকে হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলেন। তবে অন্ধকার ও স্ট্রিট ল্যাম্পগুলো বন্ধ থাকায় তাদের কারো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। সংঘর্ষ শেষে দুই হলের প্রবেশ পথগুলোতে এসব স্ট্যাম্প, ব্যাট ও লোহার পাইপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের রবি, শাফায়াত ও নিরব এবং রফিক-জব্বার হলের সাকিব, ইশতিয়াক, নিশাত ও জাহিদ। এছাড়া বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুলাই রাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী ও ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন মিরাজ তার বান্ধবীকে নিয়ে নতুন কলা ভবনের নিচের ভেন্ডিং মেশিন থেকে পানীয় (জুস) কিনতে যায়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থী ও প্রথম বর্ষের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রাফিসহ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিরাজের বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাফিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে রবীন্দ্র চত্বরে পেয়ে মিরাজ ও তার বন্ধুরা জেরা করেন। এ সময় রাফির সঙ্গে থাকা তার হলের বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে পালটা তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এ ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘণ্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা উচ্চশব্দের তিনটি পটকা ফোটায়। একপর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উভয় হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্র মিরাজ বলেন, গত বুধবার রাতে নতুন কলা ভবনে গেলে রফিক-জব্বার হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন। এ সময় তাদের নাম পরিচয় না জানায় কিছু বলিনি, কয়েকজনের মুখ চিনে রাখেন। পরে গতকাল রাতে তাদের মধ্যে রাফি নামের একজনকে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পাই। সেদিন উত্ত্যক্ত করার কারণ জানতে চাইলে রাফি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কয়েকজনের হাতাহাতি হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে ৩টার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে রাফির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও রফিক জব্বার হলে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। তিনি বলেন, কয়েক দফায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে মেডিকেলে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শনিবার ভোরে উভয় হলের দায়িত্বরত শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের কথা শুনেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্য একটি জায়গার ঘটনা হলে টেনে আনায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই। যারা ছাত্র সুলভ আচরণ করছে না তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক রনি হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রাথমিকভাবে একটা প্রতিবেদন জমা দেব। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক প্রতিবেদনের সাপেক্ষে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড থেকে অধিকতর তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।