“এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সক্ষম ও স্থিতিশীল হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য,” বলেন গভর্নর
বেসরকারি খাতে যাচ্ছে ‘নগদ’, খোঁজা হচ্ছে বিনিয়োগকারী: গভর্নর

- আপডেট সময় ০৮:৩৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে

নানা অভিযোগে বিদ্ধ মোবাইলে আর্থিক সেবার কোম্পানি (এমএফএস) নগদকে ডাক অধিদপ্তরের হাত থেকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নানা অভিযোগে বিদ্ধ মোবাইলে আর্থিক সেবার কোম্পানি (এমএফএস) নগদকে ডাক অধিদপ্তরের হাত থেকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নগদের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
বুধবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নগদের মালিকানা আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেওয়া হবে। এজন্য নতুন বিনিয়োকারী খোঁজা হচ্ছে। কারণ নগদ চালানোর মতো সক্ষমতা পোস্ট অফিসের নেই।”
বিনিয়োগকারী খুঁজতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সক্ষম ও স্থিতিশীল হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য।”
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে এই এমএফএস কোম্পানিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সও দেওয়া হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ কোম্পানিকে নিয়ম ভেঙে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ অগাস্ট নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে উচ্চ আদালত পরে তা অবৈধ ঘোষণা করে। তখন নগদের দায়িত্ব নেয় ডাক অধিদপ্তর।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নগদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় বলা হয়, গত বছরের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। তাতে বিভিন্ন ব্যাংকের ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট’ হিসাবে ইস্যুকৃত ই-মানির বিপরীতে রিয়েল মানির ১০১ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া যায়।
‘নগদ’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ঘাটতিসহ আরও কিছু গুরুতর আর্থিক অনিয়মের তথ্য প্রশাসক দলের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলাটি দায়ের করে।

সোনারগাঁও হোটেলের অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, “ইট (নগদ) ইজ স্ট্যাবিলাইজড অ্যান্ড গ্রোয়িং। এ প্রতিষ্ঠানের আগের মালিকানায় যারা ছিলেন, তারা নানা রকমের অনিয়ম করেছে। এজন্য অনেক জায়গায় কারেকশন করতে হয়েছে। সদস্য সংখ্যা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে যেটা ভুয়া, সেটা করে সাজানো হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এমএফএস নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের হাতে এখনো কেবল একটি বড় প্রতিষ্ঠানই আছে। এই খাতে আরও কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা ও নতুন বিনিয়োগ তৈরি করতে হবে। সেজন্য নগদকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার এবং বিনিয়োগ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কোনো প্রযুক্তি কোম্পানিকে নগদের প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “এখন এমন একটি প্রতিষ্ঠান দরকার, যেমন বিকাশের মত, যারা ধাপে ধাপে, শেয়ার ধরে ধরে নগদে বিনিয়োগ করতে পারবেন। আশা করছি, নগদকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে।”
মাস্টারকার্ড ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএমএবি) এর যৌথ আয়োজনে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০১৫’শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, প্রতি বছর নগদ টাকার চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে, তাতে ব্যাংকারদেরও ‘অপারেটিং খরচ’ বাড়ছে।
“যত তথ্য দেওয়া হোক না কেন অর্থনীতিতে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর নগদ টাকার সরবরাহ ২ হাজার কোটি টাকা করে বাড়ছে। তাহলে ক্যাশলেস অর্থনীতি কিভাবে তৈরি করা হবে?”
তাই নগদ টাকার ব্যবহার কমানোর আজ্বান জানিয়ে বেতন থেকে শুরু করে সব কিছু ‘ক্যাশলেস’ পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “ক্যাশলেস সোসাইটিতে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করা জরুরি। ট্র্যাডিশনালি চিন্তা করলে হবে না। আমাদের অনেক নেওয়া পলিসি (নীতি) বুমেরাং হয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসছে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে গভর্নর বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক আগের সরকার তাদের খুশিমত আত্মীয়স্বজন দিয়ে একটা সিস্টেম খাড়া করেছিল। যেটা সরকার পতনের সাথে সাথে গায়েব হয়ে গেছে, এখন কোনো সাপোর্ট নাই।”
বিশ্বজুড়ে কিউআর কোড জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে যে তা হয়নি, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি ন্যাশনাল কোড পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।
“স্থানীয় সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যাদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে তাদের কিউআর কোড নিতে হবে, তা বাধ্যতামূলক। ভবিষতে এটা নিয়ে আইনও করতে হবে যে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যারা লাইসেন্স নেবে, সেখানে কাস্টমার (কিউআর কোডে বিল) দিতে চাইলে তাদের নিতে হবে। না নিলে পানিশেবল অফেন্স হিসাবে নেওয়া হবে। সামনে এসব পরিবর্তন আসছে।”
গভর্নর বলেন, “শিগগিরই বেসরকারি খাতের ক্রেডিট ব্যুরোর জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এ ধরনের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।”
মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম