০২:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
দুই দিন আগে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে সোহাগকে হত্যা করা হয়।

‘ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে ২ লাখ টাকা’, বনিবনা না হওয়ায় হত্যা: সোহাগের স্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে সোহাগের স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে ও স্বজনরা।

 

আগে চাকরি করতেন মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদ। কয়েক বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন তিনি; যা নিয়ে একটি পক্ষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে তার স্ত্রী লাকি বেগমের ভাষ্য।

তিনি বলছেন, ব্যবসার শেয়ার; না হয় মাসে মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই পক্ষটি। তাতে রাজি না হওয়ায় সোহাগের সঙ্গে তাদের ঝামেলা শুরু হয়।

এক পর্যায়ে বুধবার ‘সমাধানের কথা বলে’ সোহাগকে ডেকে নেওয়া হয়। বনিবনা না হওয়ায় তাকে পিটিয়ে এবং পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।

শনিবার ১২ জুলাই সকালে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে সোহাগের গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় লাকি বেগমের সঙ্গে। স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। এ কারণেই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হল।”

ওই ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। জড়িতদের বিচার দাবিতে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ।

শুক্রবার ১১ জুলাই  সকালে ঢাকা থেকে ৩৯ বছর বয়সী সোহাগের মৃতদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই সোহাগের বড় বোন মঞ্জুরা বেগম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন।

শনিবার সকালে সোহাগের গ্রামে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসী ভিড় করছেন সেখানে। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাকি বেগম। সোহাগের ১২ বছরের ছেলে সোহান এবং ১৪ বছরের মেয়ে সোহানাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই কারো। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

সোহাগের বড় বোনের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘ দিন আগে জীবিকার তাগিদে বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান সোহাগের মা আলেয়া বেগম। সোহাগ ও তার দুই বোন ছোটবেলা থেকেই ঢাকায়।

শুরুর দিকে কিছুদিন সোহাগ চাকরি করলেও পরে মিটফোর্ডে হাসপাতালের সামনে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

মা মারা যাওয়ার পর থেকে সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরা কদমতলী কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন।

পরিবার বলছে, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক সময় সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার বিকালে ঢাকার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে সোহাগকে আটকে রেখে দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় সোহাগকে।

সোহাগের ছেলে সোহান বলে, “চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওরা বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।”

সোহাগের বড় বোন এবং মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, “আমার ভাই প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছেন আসামিরা।

“তবে আমার ভাই তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।”

এ হত্যায় জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার দাবি জানান সোহাগের ভাগ্নি বিথী। তিনি বলেন, “আমরা চাই এই হত্যা মামলার বিচার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হোক।

“তাদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হোক। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করা হোক।”

ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।

পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

এরপর শুক্রবার কেরাণীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আর শুক্রবার গভীররাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “এইটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনরে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। গতকালকে র‍্যাব দুইজন ধরছে, ডিএমপি দুইজন ধরছে, আজকে একজন ধরছে।”

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

দুই দিন আগে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে সোহাগকে হত্যা করা হয়।

‘ব্যবসার শেয়ার, না হয় মাসে ২ লাখ টাকা’, বনিবনা না হওয়ায় হত্যা: সোহাগের স্ত্রী

আপডেট সময় ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

 

আগে চাকরি করতেন মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদ। কয়েক বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন তিনি; যা নিয়ে একটি পক্ষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে তার স্ত্রী লাকি বেগমের ভাষ্য।

তিনি বলছেন, ব্যবসার শেয়ার; না হয় মাসে মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই পক্ষটি। তাতে রাজি না হওয়ায় সোহাগের সঙ্গে তাদের ঝামেলা শুরু হয়।

এক পর্যায়ে বুধবার ‘সমাধানের কথা বলে’ সোহাগকে ডেকে নেওয়া হয়। বনিবনা না হওয়ায় তাকে পিটিয়ে এবং পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।

শনিবার ১২ জুলাই সকালে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে সোহাগের গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় লাকি বেগমের সঙ্গে। স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। এ কারণেই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হল।”

ওই ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। জড়িতদের বিচার দাবিতে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ।

শুক্রবার ১১ জুলাই  সকালে ঢাকা থেকে ৩৯ বছর বয়সী সোহাগের মৃতদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই সোহাগের বড় বোন মঞ্জুরা বেগম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন।

শনিবার সকালে সোহাগের গ্রামে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসী ভিড় করছেন সেখানে। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাকি বেগম। সোহাগের ১২ বছরের ছেলে সোহান এবং ১৪ বছরের মেয়ে সোহানাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই কারো। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

সোহাগের বড় বোনের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘ দিন আগে জীবিকার তাগিদে বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান সোহাগের মা আলেয়া বেগম। সোহাগ ও তার দুই বোন ছোটবেলা থেকেই ঢাকায়।

শুরুর দিকে কিছুদিন সোহাগ চাকরি করলেও পরে মিটফোর্ডে হাসপাতালের সামনে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

মা মারা যাওয়ার পর থেকে সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরা কদমতলী কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন।

পরিবার বলছে, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক সময় সোহাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার বিকালে ঢাকার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে সোহাগকে আটকে রেখে দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় সোহাগকে।

সোহাগের ছেলে সোহান বলে, “চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওরা বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।”

সোহাগের বড় বোন এবং মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, “আমার ভাই প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছেন আসামিরা।

“তবে আমার ভাই তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।”

এ হত্যায় জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার দাবি জানান সোহাগের ভাগ্নি বিথী। তিনি বলেন, “আমরা চাই এই হত্যা মামলার বিচার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হোক।

“তাদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হোক। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করা হোক।”

ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।

পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

এরপর শুক্রবার কেরাণীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আর শুক্রবার গভীররাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “এইটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনরে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। গতকালকে র‍্যাব দুইজন ধরছে, ডিএমপি দুইজন ধরছে, আজকে একজন ধরছে।”

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম