০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
এক ইয়েমেনিকে হত্যার অভিযোগে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া দোষী সাব্যস্ত হন। নিহতের পরিবারের ক্ষমা পেলেই কেবল তিনি সাজা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে ইয়েমেন, বাঁচানো যাবে তাকে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০২:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

নিমিশা প্রিয়া। ছবি: বিবিসি

 

আগামী ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে ইয়েমেনে বন্দি ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে। ইয়েমেনের এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে ৩৭ বছর বয়সি নিমিশা প্রিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

২০২০ সালে স্থানীয় এক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার পরিবার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পর আদালত ২০২৩ সালে তাদের আবেদন খারিজ করে।

এবছর জানুয়ারিতে হুতি বিদ্রোহীদের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত ভারতীয় এই নারীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন। এখন তার সাজা কার্যকর হতে চলেছে।

নিমিশা ভারতের কেরালা রাজ্যের পালক্কাড় জেলার বাসিন্দা। নার্সের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে তিনি ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। পরে একাধিক হাসপাতালে কাজ করেন।

এরপর ঠিক করেন নিজেই ক্লিনিক খুলবেন। সেই সূত্রেই ২০১৪ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে আলাপ হয় তার। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, ব্যবসা করার জন্য সেদেশের একজন অংশীদার প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার।

২০১৫ সালে মাহদির সঙ্গে মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন প্রিয়া। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ। পরে তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার অভিযোগেই ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হন প্রিয়া। ওই সময় মাহদির কাটা মরদেহ একটি পানির ট্যাংকে পাওয়া যায়।

আদালতে নিমিশা প্রিয়ার আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেলের (প্রিয়া) সব অর্থকড়ি এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন। মাহদির হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন প্রিয়া। বন্দুক তাক করে প্রিয়াকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিলেন মাহদি।

মাহদির হাত থেকে বাঁচতেই ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই তাকে চেতনানাশক ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করাই ছিল প্রিয়ার উদ্দেশ্য। কিন্তু চেতনানশকের ওভারডোজের কারণে ইয়েমেনি যুবক মাহদির মৃত্যু হয়।

এরপর মাহদির মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছিলেন প্রিয়া। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান তিনি। তাকে বন্দি করা হয়েছিল রাজধানী সানার একটি কারাগারে।

ইরান-সমর্থিত হুথি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেই শহর। ২০১৮ সালে মাহদি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। তার পরিবার শুরু থেকেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এসেছে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে নিহতের পরিবারকে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা ‘ব্লাড মানি’ দিয়েও মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়ার মা। কিন্তু মাহদির পরিবার তাতে রাজি হয়নি। ওদিকে, প্রিয়ার প্রাণভিক্ষার আবেদন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টও খারিজ করেন।

এরপর সাহায্য চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হয় প্রিয়ার পরিবার। ইয়েমেনের জেলে বন্দি অভিবাসী এই নারীকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে ভারত সরকার।

মেয়েকে বাঁচাতে ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন প্রিয়ার মা। সেখান থেকেই ভারত সরকারের কাছে একাধিকবার মেয়েকে বাঁচানোর আর্জি জানান তিনি।

তবে প্রিয়ার মুক্তির জন্য ভারত সরকারের অনুরোধেও কাজ হয়নি। এখনও গোটা বিষয়টি ওই ব্লাড মানি কিংবা মাহদির পরিবারের ক্ষমা ভিক্ষার উপরই দাঁড়িয়ে আছে।

ইয়েমেনের শরিয়া আইনের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রিয়ার বেঁচে যাওয়ার একমাত্র পথ এখন- ৭ লাখ ৩৫ হাজার পাউণ্ড ‘দিয়াত’ বা ‘ব্লাড মানি’ দিয়ে মাহদির পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া।

মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন ইয়েমেনপ্রবাসী সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম। তিনি প্রিয়ার মায়ের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন।

ওদিকে, ইয়েমেনে অভিবাসী ভারতীয়দের একাংশ খুলেছেন ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’। এই সংস্থাটি ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর মাধ্যমে নিমিশার মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।

১৬ জুলাই প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনও আশা ছাড়েননি তিনি। সেভ নিমিশা প্রিয়া কাউন্সিলের এক সদস্য বিবিসি-কে বলেছেন, “আমরা এখনও মাহদির পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া কিংবা তাদের অন্য কোনও দাবি থাকলে তাও জানার অপেক্ষায় আছি।”

সূত্র :  বিবিসি 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

এক ইয়েমেনিকে হত্যার অভিযোগে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া দোষী সাব্যস্ত হন। নিহতের পরিবারের ক্ষমা পেলেই কেবল তিনি সাজা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে ইয়েমেন, বাঁচানো যাবে তাকে?

আপডেট সময় ০২:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

 

আগামী ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে ইয়েমেনে বন্দি ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে। ইয়েমেনের এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে ৩৭ বছর বয়সি নিমিশা প্রিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

২০২০ সালে স্থানীয় এক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার পরিবার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পর আদালত ২০২৩ সালে তাদের আবেদন খারিজ করে।

এবছর জানুয়ারিতে হুতি বিদ্রোহীদের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত ভারতীয় এই নারীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন। এখন তার সাজা কার্যকর হতে চলেছে।

নিমিশা ভারতের কেরালা রাজ্যের পালক্কাড় জেলার বাসিন্দা। নার্সের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে তিনি ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। পরে একাধিক হাসপাতালে কাজ করেন।

এরপর ঠিক করেন নিজেই ক্লিনিক খুলবেন। সেই সূত্রেই ২০১৪ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে আলাপ হয় তার। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, ব্যবসা করার জন্য সেদেশের একজন অংশীদার প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার।

২০১৫ সালে মাহদির সঙ্গে মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন প্রিয়া। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ। পরে তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার অভিযোগেই ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হন প্রিয়া। ওই সময় মাহদির কাটা মরদেহ একটি পানির ট্যাংকে পাওয়া যায়।

আদালতে নিমিশা প্রিয়ার আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেলের (প্রিয়া) সব অর্থকড়ি এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন। মাহদির হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন প্রিয়া। বন্দুক তাক করে প্রিয়াকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিলেন মাহদি।

মাহদির হাত থেকে বাঁচতেই ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই তাকে চেতনানাশক ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করাই ছিল প্রিয়ার উদ্দেশ্য। কিন্তু চেতনানশকের ওভারডোজের কারণে ইয়েমেনি যুবক মাহদির মৃত্যু হয়।

এরপর মাহদির মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছিলেন প্রিয়া। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান তিনি। তাকে বন্দি করা হয়েছিল রাজধানী সানার একটি কারাগারে।

ইরান-সমর্থিত হুথি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেই শহর। ২০১৮ সালে মাহদি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। তার পরিবার শুরু থেকেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এসেছে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে নিহতের পরিবারকে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা ‘ব্লাড মানি’ দিয়েও মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়ার মা। কিন্তু মাহদির পরিবার তাতে রাজি হয়নি। ওদিকে, প্রিয়ার প্রাণভিক্ষার আবেদন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টও খারিজ করেন।

এরপর সাহায্য চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হয় প্রিয়ার পরিবার। ইয়েমেনের জেলে বন্দি অভিবাসী এই নারীকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে ভারত সরকার।

মেয়েকে বাঁচাতে ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন প্রিয়ার মা। সেখান থেকেই ভারত সরকারের কাছে একাধিকবার মেয়েকে বাঁচানোর আর্জি জানান তিনি।

তবে প্রিয়ার মুক্তির জন্য ভারত সরকারের অনুরোধেও কাজ হয়নি। এখনও গোটা বিষয়টি ওই ব্লাড মানি কিংবা মাহদির পরিবারের ক্ষমা ভিক্ষার উপরই দাঁড়িয়ে আছে।

ইয়েমেনের শরিয়া আইনের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রিয়ার বেঁচে যাওয়ার একমাত্র পথ এখন- ৭ লাখ ৩৫ হাজার পাউণ্ড ‘দিয়াত’ বা ‘ব্লাড মানি’ দিয়ে মাহদির পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া।

মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন ইয়েমেনপ্রবাসী সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম। তিনি প্রিয়ার মায়ের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন।

ওদিকে, ইয়েমেনে অভিবাসী ভারতীয়দের একাংশ খুলেছেন ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’। এই সংস্থাটি ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর মাধ্যমে নিমিশার মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।

১৬ জুলাই প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনও আশা ছাড়েননি তিনি। সেভ নিমিশা প্রিয়া কাউন্সিলের এক সদস্য বিবিসি-কে বলেছেন, “আমরা এখনও মাহদির পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া কিংবা তাদের অন্য কোনও দাবি থাকলে তাও জানার অপেক্ষায় আছি।”

সূত্র :  বিবিসি 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম