তবে শুল্ক নিয়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো চুক্তিতে পৌঁছেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ভারতের ওপর শুল্ক চাপিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি ট্রাম্পের

- আপডেট সময় ১২:০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
শুল্কের খেলায় বিশ্বকে অস্থির করে তোলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়ায় খেললেন নতুন তাস।
‘ভালো বন্ধু’ ভারতের সব ধরনের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার দিনই তিনি পুরনো মিত্র পাকিস্তানের বিপুল তেল মজুদের উন্নয়নে চুক্তি করার কথা জানালেন।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, ট্রাম্প বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে ওই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শুল্ক নিয়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো চুক্তিতে পৌঁছেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা এইমাত্র পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের বিপুল তেল মজুদের উন্নয়নে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
“এই অংশীদারত্বে নেতৃত্ব দেবে এমন একটি তেল কোম্পানিকে বাছাই করছি আমরা। কে জানে, হয়ত একদিন তারা ভারতেও তেল বিক্রি করবে!”
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের উপকূলীয় অঞ্চলে খনিজ তেলের বিপুল মজুদ রয়েছে। তবে সেখান থেকে তেল তোলার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হল এবারই প্রথম।
ডন লিখেছে, ট্রাম্প যেভাবে ভারতের প্রসঙ্গ টেনেছেন, তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ; কারণ রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার শাস্তি হিসেবে ইতোমধ্যে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “একইভাবে, অন্যান্য দেশও শুল্ক কমানোর জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে। এসব পদক্ষেপ আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করবে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপযুক্ত সময়ে প্রকাশিত হবে।”
ট্রাম্প তার আরেক পোস্টে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চলমান শুল্ক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একইভাবে পাকিস্তানের মত দেশগুলো আরও প্রস্তাব দিতে উৎসাহিত হতে পারে।
বর্ধিত শুল্কের বোঝা এড়াতে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে তেলসহ মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়ানো।
আওরঙ্গজেবের আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত ধাপের শুল্ক আলোচনার জন্য বুধবার দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক শুরু করেছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব।
পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল আলোচনার বিস্তারিত গোপন রাখলেও এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা আশা করি, (১ অগাস্টের) সময়সীমার আগেই চুক্তিতে সই করতে পারব।”
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি ওয়াশিংটনের আটলান্টিক কাউন্সিলে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “উভয়পক্ষই লাভবান হবে- এমন একটি চুক্তি সম্পন্নের বিষয়ে আমরা আশাবাদী… আশা করছি, সপ্তাহ নয়, কয়েক দিনের মধ্যেই।”
জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার জন্য নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত দার বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“যতক্ষণ আমরা আমাদের সমকক্ষদের চেয়ে ভালো বা সমান থাকব, ততক্ষণ সমস্যা নেই।”
পাকিস্তানের জন্য ঠিক কোন হারে শুল্ক ঠিক করা হচ্ছে তা প্রকাশ করা হয়নি, তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের মত ১৫-২০ শতাংশ শুল্ক আশা করছেন। এই দেশগুলো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে।
ভারতকে ‘শাস্তি’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ওপর ১ অগাস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও তেল কেনার জন্য অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সেই অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ তিনি বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন।
“বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক হারের একটি এখন রয়েছে তাদের (ভারতের), তারা সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে রাজি হয়েছে। দেখি কী হয়।”
ট্রুথ সোশালে কঠোর ভাষায় লেখা একটি পোস্টে ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে অত্যধিক শুল্ক আরোপ এবং বিশ্বের সবচেয়ে ‘কঠোর ও অপ্রীতিকর’ কিছু বাণিজ্য বাধার অভিযোগ তুলেছেন। নয়া দিল্লির রাশিয়ান অস্ত্র ও জ্বালানি নির্ভরতারও সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, “সুতরাং, ভারত ১ অগাস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি উপর্যুক্ত অভিযোগের জন্য একটি জরিমানা দিতে বাধ্য হবে। যদিও ভারত আমাদের বন্ধু, তাদের বাণিজ্য নীতির কারণে আমরা তাদের সাথে তুলনামূলকভাবে কম ব্যবসা করেছি।”
ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর এ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হলে, এটি হবে ট্রাম্পের ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’র প্রথম প্রয়োগ। এটি এমন এক ধরনের শাস্তি, যা সাধারণত নিষিদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করা রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে আরোপ করা হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ট্রাম্পের ঘোষণার প্রভাব মূল্যায়ন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রুতিশ্রুতিবদ্ধ।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও দুই পক্ষের জন্য লাভজনক চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই খবরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দর ০.৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭.৮০ রুপিতে। গিফট নিফটি সূচকের লেনদেন ০.৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪,৬৯২ পয়েন্টে।
৬ ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা
এদিকে ইরানি পেট্রোলিয়াম, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য বা পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলো হল-
• কাঞ্চন পলিমারস: ইরান থেকে ১৩ লাখ ডলারের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে।
• আলকেমিকেল সলিউশনস: ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিকেল পণ্য আমদানি করেছে।
• রমনিকলাল: ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানি করেছে।
• জুপিটার ডাই কেম: ৪৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি ইরানি পণ্য আমদানি করেছে।
• গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল: মিথানলসহ ৫১ মিলিয়ন ডলারের বেশি ইরানি পণ্য আমদানি করেছে।
• পার্সিস্টেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড: প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চালান আমদানি করেছে ইরান থেকে।
তাছাড়া চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বেশ কিছু কোম্পানি এবং তেল ট্যাংকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র : পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন /ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম