গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে নির্বাচনে বিজেপিকে জেতাতে ভোটার তালিকা থেকে অনেক ভোটারের নাম বেছে বেছে বাদ কিংবা যুক্ত করা হয়েছে, অভিযোগ এ কংগ্রেস নেতার।
ভারতের নির্বাচন কমিশন ‘ভোট চোরদের’ সুরক্ষা দিচ্ছে, অভিযোগ রাহুল গান্ধীর

- আপডেট সময় ০৬:৪১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী দেশটির নির্বাচন কমিশনের দিকে নতুন আক্রমণ ছুঁড়ে কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমার ‘গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে নির্বাচনে বিজেপিকে জেতাতে ভোটার তালিকা থেকে অনেক ভোটারের নাম বেছে বেছে বাদ কিংবা যুক্ত করা হয়েছে।
এই জালিয়াতির অভিযোগের সমর্থনে ‘শতভাগ প্রমাণ আছে’ দাবি করে তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেস বারবার অভিযোগ জানালেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাহুলের এ অভিযোগকে ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসিও কংগ্রেসনেতা রাহুলের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুল অবশ্য অগাস্টের শুরু থেকেই একের পর এক ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন।
৭ অগাস্ট দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম গান্ধী গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকায় বিস্তৃত কারচুপি ছিল বলে অভিযোগ আনেন। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ অভিযোগ, সেসময় বলেছিলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল তার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও সরকারবিরোধী অনেক দল রাহুলের অভিযোগের সঙ্গে সংহতি জানায়।
বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বিরোধীদলীয় নেতার সুরে কণ্ঠ মেলান। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তা নিরসনের দায়িত্বও কমিশনের।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে ভোটার সংখ্যা ১০০ কোটির কাছাকাছি। এ বিপুল সংখ্যক ভোটারের তালিকা সংরক্ষণ, সংযোজন-বিয়োজন, যাচাই-বাছাই বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ভোটার তালিকায় ত্রুটি নিয়ে এর আগে মাঝেমধ্যে কথা উঠলেও, উদ্দেশ্যকৃতভাবে তালিকা থেকে নাম বাদ ও অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে রাহুল দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকের বিধানসভা আসন আলান্দের উদাহরণ টেনে বলেন, কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে খ্যাত ওই আসনে ৬ হাজারর বেশি ভোটারকে তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে বেশিরভাগই সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের, যারা কংগ্রেসের ভোটার বলেই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া হয়। অবশ্য ২০২৩ সালের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে ওই আলান্দ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী বিআর পাতিলই বিজয়ী হয়েছেন। রাজ্যটিতেও এখন কংগ্রেসই ক্ষমতায়।
ভোটার তালিকা থেকে নাম ফেলে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে কর্ণাটক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ২০২৩ সাল থেকে তদন্ত করছে বলেও জানান রাহুল।
“তদন্ত কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানতে চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে ১৮ মাসে ১৮টি চিঠি দিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পায়নি,” বলেন এ কংগ্রেস নেতা। তিনি এই অভিযোগ সম্বন্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা প্রকাশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এক সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দিয়েছেন।
অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন বলেছেন, জনসাধারণের পক্ষে অনলাইনে ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম মুছে ফেলা সম্ভব নয়, যেমনটা রাহুল গান্ধী বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
“২০২৩ সালে আলান্দ আসনে ভোটার তালিকা থেকে নাম মোছার কিছু ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল, কমিশন নিজেই এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছে,” বলেছে তারা।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের রাজুরা আসনে ভোটার তালিকায় নতুন ৬ হাজার ৮৫০টি নাম যুক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই ‘ভুয়া’ বলেও অভিযোগ করেছেন রাহুল। নির্বাচন কমিশন অবশ্য তার এই অভিযোগ সম্বন্ধে আলাদা করে কিছু বলেনি।
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম