০২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
কয়েকদিন আগেই ভারতের পণ্যে ২৫% সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এ শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ভারতের শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি ট্রাম্পের, নয়া দিল্লি বলছে ‘অহেতুক, অযৌক্তিক’

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:২৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে

ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় নরেন্দ্র মোদী ও ডনাল্ড ট্রাম্পের আগেকার মধুর সম্পর্কে এখন ফাটল ধরেছে বলেই মনে হচ্ছে। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স

 

রাশিয়া থেকে তেল কেনায় নয়া দিল্লির পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ বাড়ানোর যে হুমকি ডনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তাকে ‘অযৌক্তিক ও অহেতুক’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত।

ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার ‘ওয়ার মেশিন’ ইউক্রেইনে কতজনকে হত্যা করছে, তা নিয়ে ‘ভারতের মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না’। সে কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর হুমকি দেন তিনি।

ভারত এখন রাশিয়ার তেলের অন্যতম বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২২ সালে মস্কো ইউক্রেইনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে নামার পর একাধিক ইউরোপীয় দেশ বাণিজ্য বন্ধ করায় ভারত ক্রমেই রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজারে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শুল্ক বাড়িয়ে কত করা হতে পারে, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ভারতের পণ্যে কয়েকদিন আগেই তিনি ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকির পর এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সোয়াল বলেছেন, ইউক্রেইন সংঘাতের শুরুর দিকে ‘বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা জোরদারে’ যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানিতে উৎসাহ যুগিয়েছিল।

“ভারত রাশিয়া থেকে আমদানি শুরু করে কারণ, পুরনো যেখান থেকে তারা (তেলের) সরবরাহ পেত, সংঘাত শুরুর পর তা ইউরোপমুখী হয়ে যায়,” বলেছেন তিনি।

ভারত তার সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যখন এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলা অনুচিত। কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা ও নানান শুল্কের পরও গত বছর মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটন আনুমানিক সাড়ে তিনশ কোটি ডলারের পণ্যের বাণিজ্য করেছে।

“যে কোনো বড় অর্থনীতির মতোই ভারত তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। ভারতকে নিশানা বানানো অযৌক্তিক ও অহেতুক,” বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

দিনকয়েক আগেও ট্রাম্প ভারতকে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, মার্কিন পণ্যে নয়া দিল্লির শুল্ক ‘অনেক বেশি’। সেসময়ই তিনি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করায় ভারতকে ‘সাজা’ দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন।

তবে তার সর্বশেষ পোস্টে ভারতকে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

“ভারত কেবল বিপুল পরিমাণ রুশ তেল কিনছেই না, তার এরপর বেশি লাভের জন্য ওই তেলের অধিকাংশই খোলা বাজারে বেচেও দিচ্ছে।

“এ কারণেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া তাদের (পণ্যে) শুল্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়াবো,” ট্রুথ সোশ্যালে এমনটাই লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের এমন হুমকি-ধামকিতেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দেশের তেল পরিশোধনাগারগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলেননি, পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত ব্যক্তির বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ও সাবেক ভারতীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প যেসব দাবি করছেন, তা নানা কারণেই বিভ্রান্তিকর।

এই বাণিজ্য একেবারেই স্বচ্ছ, এবং কেন এটা হচ্ছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রও মোটাদাগে বোঝে, বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা যখন সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটালো, তখন বিশ্ব বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে ভারত মস্কোর তেল কেনা বাড়িয়েছে, বিশ্বজুড়ে তেলের দাম যেন আকাশ না ছোঁয়, তা নিশ্চিতে সহায়তা করেছে নয়া দিল্লি, বলছেন শ্রীবাস্তব।

তিনি জানান, ভারতীয় সরকারি, বেসরকারি সব তেল শোধনাগারই মূলত দাম, সরবরাহ নিরাপত্তা এবং রপ্তানি নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় কোথা থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে।

এসব শোধনাগারগুলো স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং রাশিয়া বা অন্য কারও কাছ থেকে তেল কেনায় সরকারের অনুমোদন লাগে না তাদের, বলেছেন তিনি।

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

কয়েকদিন আগেই ভারতের পণ্যে ২৫% সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এ শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ভারতের শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি ট্রাম্পের, নয়া দিল্লি বলছে ‘অহেতুক, অযৌক্তিক’

আপডেট সময় ১২:২৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

 

রাশিয়া থেকে তেল কেনায় নয়া দিল্লির পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ বাড়ানোর যে হুমকি ডনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তাকে ‘অযৌক্তিক ও অহেতুক’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত।

ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার ‘ওয়ার মেশিন’ ইউক্রেইনে কতজনকে হত্যা করছে, তা নিয়ে ‘ভারতের মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না’। সে কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর হুমকি দেন তিনি।

ভারত এখন রাশিয়ার তেলের অন্যতম বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২২ সালে মস্কো ইউক্রেইনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে নামার পর একাধিক ইউরোপীয় দেশ বাণিজ্য বন্ধ করায় ভারত ক্রমেই রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজারে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শুল্ক বাড়িয়ে কত করা হতে পারে, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ভারতের পণ্যে কয়েকদিন আগেই তিনি ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকির পর এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সোয়াল বলেছেন, ইউক্রেইন সংঘাতের শুরুর দিকে ‘বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা জোরদারে’ যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানিতে উৎসাহ যুগিয়েছিল।

“ভারত রাশিয়া থেকে আমদানি শুরু করে কারণ, পুরনো যেখান থেকে তারা (তেলের) সরবরাহ পেত, সংঘাত শুরুর পর তা ইউরোপমুখী হয়ে যায়,” বলেছেন তিনি।

ভারত তার সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যখন এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলা অনুচিত। কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা ও নানান শুল্কের পরও গত বছর মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটন আনুমানিক সাড়ে তিনশ কোটি ডলারের পণ্যের বাণিজ্য করেছে।

“যে কোনো বড় অর্থনীতির মতোই ভারত তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। ভারতকে নিশানা বানানো অযৌক্তিক ও অহেতুক,” বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

দিনকয়েক আগেও ট্রাম্প ভারতকে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, মার্কিন পণ্যে নয়া দিল্লির শুল্ক ‘অনেক বেশি’। সেসময়ই তিনি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করায় ভারতকে ‘সাজা’ দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন।

তবে তার সর্বশেষ পোস্টে ভারতকে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

“ভারত কেবল বিপুল পরিমাণ রুশ তেল কিনছেই না, তার এরপর বেশি লাভের জন্য ওই তেলের অধিকাংশই খোলা বাজারে বেচেও দিচ্ছে।

“এ কারণেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া তাদের (পণ্যে) শুল্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়াবো,” ট্রুথ সোশ্যালে এমনটাই লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের এমন হুমকি-ধামকিতেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দেশের তেল পরিশোধনাগারগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলেননি, পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত ব্যক্তির বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ও সাবেক ভারতীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প যেসব দাবি করছেন, তা নানা কারণেই বিভ্রান্তিকর।

এই বাণিজ্য একেবারেই স্বচ্ছ, এবং কেন এটা হচ্ছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রও মোটাদাগে বোঝে, বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা যখন সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটালো, তখন বিশ্ব বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে ভারত মস্কোর তেল কেনা বাড়িয়েছে, বিশ্বজুড়ে তেলের দাম যেন আকাশ না ছোঁয়, তা নিশ্চিতে সহায়তা করেছে নয়া দিল্লি, বলছেন শ্রীবাস্তব।

তিনি জানান, ভারতীয় সরকারি, বেসরকারি সব তেল শোধনাগারই মূলত দাম, সরবরাহ নিরাপত্তা এবং রপ্তানি নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় কোথা থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে।

এসব শোধনাগারগুলো স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং রাশিয়া বা অন্য কারও কাছ থেকে তেল কেনায় সরকারের অনুমোদন লাগে না তাদের, বলেছেন তিনি।

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম