“এখন পর্যন্ত আমরা বড় কোনো অসঙ্গতি দেখিনি, সেটুকু শুধু বলতে পারি।”
‘ভুলত্রুটি’ দেখলেও ডাকসু নির্বাচন ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে না শিক্ষক নেটওয়ার্ক

- আপডেট সময় ১১:৩৮:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৬ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ছোটখাটো অসঙ্গতি ও ব্যবস্থাপনাগত ভুলত্রুটি থাকলেও ভোট ‘গ্রহণযোগ্য না’, এমনটা মনে হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ডাকসু ভোট পর্যবেক্ষণ করার পর সন্ধ্যায় সিনেট ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এ বক্তব্য এসেছে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে দিনভর পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংগঠক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।
পরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, “সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যেটা মনে হয়েছে যে, আমরা এই যে ছোটোখাটো যা দেখেছি অসঙ্গতি বা ব্যবস্থাপনার যে ভুলগুলো, এর বাদে আমরা মনে করিনি যে, বড় কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না, এটা আমাদের কখনও মনে হয়নি।”
তবে, শেষ সিদ্ধান্তে আসার জন্য ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন এই অধ্যাপক।
এর আগে ভোট পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক কী পরিস্থিতি দেখেছে, তা ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। প্রচুর তথ্যের গ্যাপ রয়ে গেছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে একটা সিদ্ধান্ত পাইনি। যার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
পোলিং এজেন্টদের জন্য পাস ইস্যু করার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সকল প্যানেল, প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট যথেষ্ট পরিমাণ নিয়োগ দেয়া হয়নি। যারা পাস পেয়েছেন সেগুলোও সব পক্ষের কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি। আবেদনের তুলনায় অনেক কম পাস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
“নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটারদের যেভাবে সহায়তা করার কথা সেটির ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে হয়ত বাধাও দেওয়া হয়েছে। ভোটারের ভোট নিয়ে সমস্যা হলে এজেন্টরা আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকলে পর্যাপ্ত এজেন্ট না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।”
দুটি হলের কেন্দ্রে ‘টিক দেওয়া ব্যালট পাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গ টেনে সামিনা লুৎফা বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে ভোট কেন্দ্রগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই সমভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। পোলিং অফিসার নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ছিল। এই অসচ্ছতা ভোটগ্রহণে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছি।”
জগন্নাথ হল ও টিএসসির ভোট কেন্দ্রে ভোটারের লাইনে ‘বারবারে ধীরগতি’ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “টিএসসি কেন্দ্রে একজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরে ভোটগ্রহণ কমে গেছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এই কেন্দ্রে ভোট কমে যাওয়ার কারণ বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”
সামিনা লুৎফা বলেন, “আটটি কেন্দ্রে সব নিয়ম সমভাবে মানা হয়নি। কোন নিয়মের কী অর্থ, সেটি একেক কেন্দ্রে একেকভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে। যদিও নিয়মে বলা হয়েছে প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে কিন্তু অনেক কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
“ভোটাররা স্লিপ, চিরকুট নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে নানারকম সমস্যার সুযোগ তৈরি হয়েছিল।”
পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি, এমনটা মনে হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিতে চলে এসেছে, সেটি বোধহয় কেউ কল্পনা করেননি।
“সে কারণে বিশাল ক্রাউড (জটলা) নিয়ন্ত্রণ করার বিশাল চাপ তৈরি হয়েছিল। ভোট গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।”
সামিনা লুৎফা বলেন, “এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যেসব অব্যবস্থাপনা ছিল সেগুলো না থাকলে নির্বাচনে আরও আস্থা আনা যেত। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভোট দিতে আসায় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
সব কেন্দ্রে লাইট, ফ্যান এবং কর্মরতদের পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকার কথা বলেছেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের আরেকজন সংগঠক তাহমিনা খানম।
এসব ভুল থেকে শিক্ষা পরবর্তীতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, “এই নির্বাচনে আমরা যেটা শিখলাম, আমরা সবাইকেই আসলে শিখতে হল, যেমন, নির্বাচন যারা আয়োজন করেছেন, আমরা যারা অবজার্ভ করেছি এবং শিক্ষার্থীরা- আমরা কিন্তু অনেকেই এই ধরনের বিভিন্ন যে নির্বাচনে, আমাদের অনেকে আছেন যারা সারাজীবনেও এই নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করেনি।
“তো সেদিক থেকে আমরা মনে করি যে, যে সমস্ত ভুল-ত্রুটি যা হয়েছে যেগুলি আমরা বললাম, যেগুলি আমাদের চোখে পড়েছে এবং এর ইভালুয়েশন যেটা, সেটা আসলে তো আমরা যেহেতু এখনো গণনা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে গণনা হোক, পুরো রেজাল্টটা আসুক।”
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা বড় কোনো অসঙ্গতি দেখিনি, সেটুকু শুধু বলতে পারি। আমরা যেখানে উপস্থিত ছিলাম, বিশাল কোনো অসঙ্গতি হয়েছে সেটা এখনও পর্যন্ত আমরা দেখিনি।”
অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, “আমরা যে সমস্ত ভুলত্রুটি এবার করেছি বা অব্যবস্থাপনা হয়েছে, সেটা পরেরবার কী হবে… আচরণবিধি ইত্যাদি আরও বেশি পরিষ্কার থাকবে, কারা কোথায় কাজ করছেন, যেমন প্রার্থী, তেমিন যারা আয়োজনে কাজ করছেন, পোলিং অফিসার, প্রত্যেককে তাদের যে নির্দেশনা, তাদের কীভাবে কাজ করতে হবে, সেটা স্পষ্ট থাকবে।”
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম