“হয়ত চিহ্নিত করা যাবে না, কিন্তু শ্রোতা ও সুরকার-গীতিকার সবার মধ্যেই কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই তার প্রভাব রয়ে গিয়েছে।”
ভূপেন হাজারিকার গান এখনো বহমান: শিলাজিৎ মজুমদার

- আপডেট সময় ১২:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে

যার গান কেবল সুরের মায়া ছড়ায়নি, যার গানের কথা হয়েছিল সংগ্রাম-প্রতিবাদের কথা, শোষিত মানুষের মানুষের স্বপ্ন দেখার ভাষা, তিনি উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা।
যার গান কেবল সুরের মায়া ছড়ায়নি, যার গানের কথা হয়েছিল সংগ্রাম-প্রতিবাদের কথা, শোষিত মানুষের মানুষের স্বপ্ন দেখার ভাষা, তিনি উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা।
শববর্ষ আগে এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর গানের প্রভাব হালের অনেক গানেও রয়েছে বলে মনে করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গায়ক অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদার।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, যে কোনো সাঙ্গীতিক ধারা, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রচেষ্টা, কোনো সময়ের অভিব্যক্তি, যা আমাদের কানে আসে, তা আমাদের মধ্যে কোথাও না কোথাও থেকে যায়। আমরা চাই বা না চাই। আমাদের ছোট ছোট ভালোলাগাগুলো আমাদের ছুঁয়ে যায়, আমাদের মধ্যে থেকে যায়, ভিতরে ভিতরে লালনপালন করি। কখন যে সেটা কোন জায়গায় বেরিয়ে আসে, আমরা বলতে পারব না।
“সুতরাং, একটা কথা তো খুব সত্যি, আজ ১০০ বছর পরেও তার কথা বঙ্গবাসী মনে রেখেছেন। ভারতবাসীরও মনে আছে। এই যে এত দিন বাদেও উনি প্রাসঙ্গিক, এবং তার কথা আমরা আলোচনা করছি, এতেই প্রমাণিত হয় যে তার একটা প্রভাব থেকে গিয়েছে। থাকতে বাধ্য।”
শিলাজিতের কথায়, ছেলেবেলায় ভূপেন হাজারিকার গান গুনগুন করেছেন তিনি এবং এখনো সেগুলো উপভোগ্য বলে মন্তব্য করেন শিলাজিৎ।
“অর্থাৎ তার ধারা নিশ্চয়ই এখনও, কোথাও না কোথাও আমরা ধরে রেখেছি। হয়ত চিহ্নিত করা যাবে না, কিন্তু শ্রোতা ও সুরকার-গীতিকার সবার মধ্যেই কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই তার প্রভাব রয়ে গিয়েছে।”
শিলাজিৎ মনে করেন তার কাছে মনে হয়েছে ভূপেন হাজারিকার গানে শোষিত শ্রেণির মানুষের কথা বেশি বাঙময় হয়েছে।
“তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতি তার গানে অনেক জোরালোভাবে ফুটে উঠেছে। তবে প্রতিবাদী সত্তা গানগুলির মধ্যে নিশ্চয়ই আছে। যেমন, তার ‘দোলা’ বা ‘ও গঙ্গা বইছ কেন?’
“ছোটবেলায় যখন তার গান শুনেছি, তখন তো প্রতিবাদ বুঝিনি, আলোচনা বা বিশ্লেষণও করিনি। অথচ, এই গানগুলি এমনই, যে এই কম্পোজিশনগুলি আমাদের মনে গেঁথে আছে। আমরা ছোটবেলায় যখন ‘নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি’ শুনেছি, আমাদের স্রেফ ভালো লেগেছে। তখন তো গানের কথার গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করে বোঝার ক্ষমতা হয়নি। কিন্তু, গানটি ভালো লেগেছে, গুনগুন করেছি।”
প্রতিবাদ-সামাজিক বার্তা, এই সব কিছুর বাইরে গিয়েও, একটি গানের যে বিনোদনমূলক উপাদান, কম্পোজিশন, কথার যে জোর এবং শ্রোতাকে তাৎক্ষণিক আনন্দ দেওয়ার যে ক্ষমতা, তা ভূপেন হাজারিকার সৃষ্টিতে ভরপুর ছিল বলে মন্তব্য করেছেন শিলাজিৎ।
ভূপেন হাজারিকা জন্মেছিলেন ১৯২৬ সালে ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সদিয়াতে। বাংলা, হিন্দি, আসামিজ, নেপালিসহ আরও কয়েকটি ভাষায় তিনি গেয়েছেন। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যের ওস্তাদ বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার হাত ধরেই সংগীতের জগতে ভূপেন হাজারিকার পা পড়ে। তবে শুরুর দিতে আসামের সিনেমাতেও প্লেব্যাক করেন তিনি।
সত্তরে দশকে ভূপেন হাজারিকার গান ঘুরেছে মানুষের মুখে মুখে। তার কালজয়ী গান ‘মানুষ মানুষের জন্য’ বিবিসির শ্রোতা জরিপে বিশ্বের সেরা ১০টি জনপ্রিয় গানের তালিকায় জায়গা করে নেয়।
‘আমায় একজন সাদা মানুষ দাও, যার রক্ত সাদা’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয়’, ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’, ‘শরৎ বাবু, খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে’, ‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘দোলা হে দোলা’সহ আরো বহু প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে জনপ্রিয় হয়েছে।
২০১১ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে চলে যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব পদ্মবিভূষণে সম্মানিত এই শিল্পী গান গাওয়ার পাশাপাশি একজন কবি, গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করেন।
বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম