“যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ লড়েছে, যার অধীনে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, লুণ্ঠন-নিপীড়ন হয়েছে- সেই সংবিধান টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন কী,” বলেন তিনি।
ভোট ভোট করে প্রকারান্তরে ‘ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন’ করা হচ্ছে: লেখক ও কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার

- আপডেট সময় ০৯:৪০:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩২ বার পড়া হয়েছে
গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ একটি আরেকটির পিঠে চড়েই আসে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্র আর ফ্যাসিবাদ খুবই কাছাকাছি। ফ্যাসিবাদীরাও নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসে। তাই যারা এখন নির্বাচন নির্বাচন করছে, তারা প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদকেই পুনর্বাসন করছে।”
মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেনেসাঁ’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার বক্তব্য রাখছিলেন।
গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এই উদ্যোগের মধ্যেই বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলে।
নানা ঘটনাপ্রবাহে গেল ৫ অগাস্ট জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার ছাত্রনেতাদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নতুন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
নির্বাচনের আগে সংস্কার শেষ করা এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট দাবির পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ চায় জামায়াত।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে ফরহাদ মজহার বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান হয়ে গেলে জনগণের হাতে ‘গাঠনিক মুহূর্ত’ এসে যায়। সেই মুহূর্তেই নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু তরুণরা তখন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে পারেনি।”

রাষ্ট্র ও সংবিধান বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি যা চিন্তা করি, আমার আচার-প্রকৃতি রাষ্ট্র আকারে প্রতিফলিত হয়। রাষ্ট্রের যে ‘বেটাগিরি’, আর আমার ‘বেটাগিরি’ একই জিনিস। নিজেকে না বদলালে রাষ্ট্রও বদলাবে না। যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ লড়েছে, যার অধীনে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, লুণ্ঠন-নিপীড়ন হয়েছে- সেই সংবিধান টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন কী?”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, “দিনমজুর-শ্রমিক সাধারণ মানুষ ক্ষমতা দিয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। কিন্তু তারা ক্ষমতা দিয়েছে হাসিনা, চপ্পু ও সেনাবাহিনীর হাতে। সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে, কিন্তু এখন ক্ষমতা চলে গেছে মার্কিন দূতাবাসের হাতে।”
ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এই কলামনিস্ট বলেন, “এসব নির্বাচন সব সময়ই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়ায় হয়। কারণ নির্বাচনের সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িয়ে থাকে। ফলে যারা নির্বাচিত হয়, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে যায়।”
সহ-আলোচক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, “গণতন্ত্র বলতে আসলে তার সংখ্যালঘু, তার দুর্বল যে অংশ, সবচেয়ে যে ভিন্ন, তার অধিকারটা সংগ্রহ করা। গণতন্ত্র মানে না যে, আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠর অধিকার সংগ্রহ করবেন। গণতন্ত্র মানে আপনি সংখ্যালঘুর অধিকার সংগ্রহ করবেন। কিন্তু দলের যে রাজনীতি তা সংখ্যা লঘিষ্ঠের প্রতি সহনশীল হয় না।”
নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শুসমিন আফসানা বলেন, “নারী পুরুষ কখনো মুখোমুখি নয়, তারা পাশাপাশি। যদি নারীদের সাথে বৈষম্য করা হয় তাহলে আরেকটা বিপ্লব হবে। আর তা হবে নারীদের মাধ্যমেই।”
এছাড়াও আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম