০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
নতুন স্মার্ট আপগ্রেডের কারণে কিউরিওসিটি এখন একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে এবং নিজের শক্তিকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

মঙ্গলে ১৩ বছর: এখন আরও স্মার্ট নাসার কিউরিওসিটি রোভার

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৩:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

বর্তমানে মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’-এর পাঁচ কিলোমিটার উঁচু ‘মাউন্ট শার্প’ নামের পাহাড়ে উঠে গিয়েছে রোভারটি। ছবি: নাসা

 

চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। আর মঙ্গলের বুকে ১৩ বছর আগে তার চাকা রেখেছিল নাসার কিউরিওসিটি রোভার। এত বছর পরেও রোভারটি প্রমাণ করে চলেছে, লাল গ্রহের অজানা বিভিন্ন রহস্য জানার এখনও ‘মাইলস টু গো’।

নতুন স্মার্ট আপগ্রেডের কারণে কিউরিওসিটি এখন একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে এবং নিজের শক্তিকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে মঙ্গলের আরও বেশি বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

২০১২ সালে বড় মিশন নিয়ে মঙ্গলে নেমেছিল কিউরিওসিটি। উদ্দেশ্য ছিল, মঙ্গলের প্রাচীন জলবায়ু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা ও সেখানে কোনও একসময় প্রাণ থাকার উপযোগী পরিবেশ ছিল কি না, সেটি যাচাই করে দেখা।

বর্তমানে মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’-এর পাঁচ কিলোমিটার উঁচু ‘মাউন্ট শার্প’ নামের পাহাড়ে উঠে গিয়েছে রোভারটি। সেখানে ‘বক্সওয়ার্ক’ নামের আকর্ষণীয় শিলা গঠনে ভরা এক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে ছয় চাকায় চলা এই ভীনগ্রহের অভিযাত্রী।

শক্ত হয়ে যাওয়া এসব শিলা সম্ভবত কয়েকশো কোটি বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির কারণে তৈরি হয়েছিল। এগুলোতে এমন সূত্র থাকতে পারে, যা বিজ্ঞানীদের জানাতে সাহায্য করবে, গ্রহটি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পৃষ্ঠের নীচে প্রাণ টিকে ছিল কি না।

এসব বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য প্রচুর শক্তি দরকার হয়। কিউরিওসিটির নিজের একটি রোবটিক বাহু, ক্যামেরা, হিটার, রেডিও এবং দশটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র চালানোর জন্য শক্তির প্রয়োজন।

আগের কিছু মঙ্গল মিশনের মতো সৌর প্যানেলের ওপর নির্ভর না করে বিশেষ এক পারমাণবিক ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে কিউরিওসিটিতে, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘মাল্টি-মিশন রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর’ বা এমএমআরটিজে।

এ ব্যাটারির শক্তি উৎস ক্ষয়প্রাপ্ত প্লুটোনিয়ামের তাপ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে ও দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে। ১৯৭৭ সাল থেকে এ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ভয়েজারও।

কিউরিওসিটির কাছে এখনও অনেক শক্তি থাকলেও রোভারটির প্রতিটি ওয়াট থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নেওয়ার উপায় খুঁজছে নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি’ বা জেপিএল দলটি। ব্যাটারির প্লুটোনিয়াম ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে রোভারটির ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হতে বেশি সময় নিচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কাজের সময়ও কমে যাচ্ছে এর।

এ সমস্যার সমাধানে নাসার প্রকৌশলীরা এমন উপায় খুঁজে পেয়েছেন, যাতে রোভার একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে ও এর কাজের সময়সূচী আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়।

এ মিশনের বেশিরভাগ সময় কিউরিওসিটিকে একবারে একটি কাজ শেষ করে তারপর বিরতি নিয়ে ব্যাটারি চার্জ করতে বলা হত। তবে এখন রোভারকে নিরাপদে দুই বা তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে শিখিয়েছে দলটি। যেমন– চলার সময় তথ্য অরবিটারে পাঠানো বা ছবি তোলার সময় নিজের রোবোটিক হাত ব্যবহার করার মতো বিষয়।

গবেষকরা বলছেন, এতে সময় ও শক্তি দুই’ই বাঁচে। কারণ এতে করে এখন রোভারের সব সিস্টেম একসঙ্গে চালু থাকার প্রয়োজন কমেছে।

আরেকটি স্মার্ট কৌশল হচ্ছে, কিউরিওসিটি এখন নিজেই ঠিক করে কখন ঘুমাতে হবে। কারণ প্রকৌশলীরা সাধারণত রোভারকে কাজ শেষের জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়ে থাকে। তবে এখন কিউরিওসিটি নিজেই পরীক্ষা করে দেখে, কাজটি শেষ হয়েছে কি না, শেষ হলে নিজে থেকেই ঘুমিয়ে পড়ে রোভারটি।

এসব ছোট ছোট শক্তি সাশ্রয়ী কৌশল একসঙ্গে হয়ে রোভারটিকে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকতে সাহায্য করে।

বছরের পর বছর ধরে অন্যান্য উন্নতিও করেছেন প্রকৌশলীরা। যান্ত্রিক সমস্যার পর রোবোটিক ড্রিল আবার প্রোগ্রাম করেছেন। রুক্ষ ও খসখসে অঞ্চলে চালাচলের জন্য ড্রাইভিং সফটওয়্যার আপডেটের পাশাপাশি ক্যামেরার রঙের ফিল্টার না চালু হওয়ার সমস্যাও সমাধান করেছে নাসার জেপিএল দলটি।

রোভারটির ধাতব চাকার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সিস্টেমও তৈরি করেছেন প্রকৌশলীরা। কিছু চাকা পাংচার হলেও কিউরিওসিটি এরইমধ্যে মঙ্গলের ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে এবং আরো বহু বছর লাল গ্রহটিতে ভ্রমণ করতে পারবে বলে ধারণা গবেষকদের।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্বাধীন হয়ে উঠছে কিউরিওসিটি। একজন টিনএজারের মতো ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিতে শিখছে এটি। এসব আপগ্রেড কেবল লাল গ্রহটিতে রোভারকে টিকিয়েই রাখছে না, বরং আরও ভালোভাবে কাজ করতেও সাহায্য করছে। যাতে ভবিষ্যতে মঙ্গলের অজানা রহস্য উন্মোচন করতে পারে এটি।

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

নতুন স্মার্ট আপগ্রেডের কারণে কিউরিওসিটি এখন একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে এবং নিজের শক্তিকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

মঙ্গলে ১৩ বছর: এখন আরও স্মার্ট নাসার কিউরিওসিটি রোভার

আপডেট সময় ০৩:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

 

চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। আর মঙ্গলের বুকে ১৩ বছর আগে তার চাকা রেখেছিল নাসার কিউরিওসিটি রোভার। এত বছর পরেও রোভারটি প্রমাণ করে চলেছে, লাল গ্রহের অজানা বিভিন্ন রহস্য জানার এখনও ‘মাইলস টু গো’।

নতুন স্মার্ট আপগ্রেডের কারণে কিউরিওসিটি এখন একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে এবং নিজের শক্তিকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে মঙ্গলের আরও বেশি বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

২০১২ সালে বড় মিশন নিয়ে মঙ্গলে নেমেছিল কিউরিওসিটি। উদ্দেশ্য ছিল, মঙ্গলের প্রাচীন জলবায়ু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা ও সেখানে কোনও একসময় প্রাণ থাকার উপযোগী পরিবেশ ছিল কি না, সেটি যাচাই করে দেখা।

বর্তমানে মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’-এর পাঁচ কিলোমিটার উঁচু ‘মাউন্ট শার্প’ নামের পাহাড়ে উঠে গিয়েছে রোভারটি। সেখানে ‘বক্সওয়ার্ক’ নামের আকর্ষণীয় শিলা গঠনে ভরা এক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে ছয় চাকায় চলা এই ভীনগ্রহের অভিযাত্রী।

শক্ত হয়ে যাওয়া এসব শিলা সম্ভবত কয়েকশো কোটি বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির কারণে তৈরি হয়েছিল। এগুলোতে এমন সূত্র থাকতে পারে, যা বিজ্ঞানীদের জানাতে সাহায্য করবে, গ্রহটি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পৃষ্ঠের নীচে প্রাণ টিকে ছিল কি না।

এসব বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য প্রচুর শক্তি দরকার হয়। কিউরিওসিটির নিজের একটি রোবটিক বাহু, ক্যামেরা, হিটার, রেডিও এবং দশটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র চালানোর জন্য শক্তির প্রয়োজন।

আগের কিছু মঙ্গল মিশনের মতো সৌর প্যানেলের ওপর নির্ভর না করে বিশেষ এক পারমাণবিক ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে কিউরিওসিটিতে, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘মাল্টি-মিশন রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর’ বা এমএমআরটিজে।

এ ব্যাটারির শক্তি উৎস ক্ষয়প্রাপ্ত প্লুটোনিয়ামের তাপ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে ও দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে। ১৯৭৭ সাল থেকে এ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ভয়েজারও।

কিউরিওসিটির কাছে এখনও অনেক শক্তি থাকলেও রোভারটির প্রতিটি ওয়াট থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নেওয়ার উপায় খুঁজছে নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি’ বা জেপিএল দলটি। ব্যাটারির প্লুটোনিয়াম ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে রোভারটির ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হতে বেশি সময় নিচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কাজের সময়ও কমে যাচ্ছে এর।

এ সমস্যার সমাধানে নাসার প্রকৌশলীরা এমন উপায় খুঁজে পেয়েছেন, যাতে রোভার একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে ও এর কাজের সময়সূচী আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়।

এ মিশনের বেশিরভাগ সময় কিউরিওসিটিকে একবারে একটি কাজ শেষ করে তারপর বিরতি নিয়ে ব্যাটারি চার্জ করতে বলা হত। তবে এখন রোভারকে নিরাপদে দুই বা তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে শিখিয়েছে দলটি। যেমন– চলার সময় তথ্য অরবিটারে পাঠানো বা ছবি তোলার সময় নিজের রোবোটিক হাত ব্যবহার করার মতো বিষয়।

গবেষকরা বলছেন, এতে সময় ও শক্তি দুই’ই বাঁচে। কারণ এতে করে এখন রোভারের সব সিস্টেম একসঙ্গে চালু থাকার প্রয়োজন কমেছে।

আরেকটি স্মার্ট কৌশল হচ্ছে, কিউরিওসিটি এখন নিজেই ঠিক করে কখন ঘুমাতে হবে। কারণ প্রকৌশলীরা সাধারণত রোভারকে কাজ শেষের জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়ে থাকে। তবে এখন কিউরিওসিটি নিজেই পরীক্ষা করে দেখে, কাজটি শেষ হয়েছে কি না, শেষ হলে নিজে থেকেই ঘুমিয়ে পড়ে রোভারটি।

এসব ছোট ছোট শক্তি সাশ্রয়ী কৌশল একসঙ্গে হয়ে রোভারটিকে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকতে সাহায্য করে।

বছরের পর বছর ধরে অন্যান্য উন্নতিও করেছেন প্রকৌশলীরা। যান্ত্রিক সমস্যার পর রোবোটিক ড্রিল আবার প্রোগ্রাম করেছেন। রুক্ষ ও খসখসে অঞ্চলে চালাচলের জন্য ড্রাইভিং সফটওয়্যার আপডেটের পাশাপাশি ক্যামেরার রঙের ফিল্টার না চালু হওয়ার সমস্যাও সমাধান করেছে নাসার জেপিএল দলটি।

রোভারটির ধাতব চাকার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সিস্টেমও তৈরি করেছেন প্রকৌশলীরা। কিছু চাকা পাংচার হলেও কিউরিওসিটি এরইমধ্যে মঙ্গলের ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে এবং আরো বহু বছর লাল গ্রহটিতে ভ্রমণ করতে পারবে বলে ধারণা গবেষকদের।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্বাধীন হয়ে উঠছে কিউরিওসিটি। একজন টিনএজারের মতো ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিতে শিখছে এটি। এসব আপগ্রেড কেবল লাল গ্রহটিতে রোভারকে টিকিয়েই রাখছে না, বরং আরও ভালোভাবে কাজ করতেও সাহায্য করছে। যাতে ভবিষ্যতে মঙ্গলের অজানা রহস্য উন্মোচন করতে পারে এটি।

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম