০৭:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি ভাঙার খবরকে দুঃসংবাদ হিসেবে তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের বাড়ি সংস্কারের প্রস্তাব ভারতের

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে

ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি।

 

ময়মনসিংহ নগরীতে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের পারিবারিক বাড়ি ভাঙার খবর সামনে আসার পর ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি সংস্কার ও পুনর্নিমাণে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত।

নগরীর হরিকিশোর রায় সড়কে দুই শতাধিক বছরের পুরনো একতলা এ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেছে জেলার শিশু একাডেমি বলে খবরে এসেছে।

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ খ্যাতনামা সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িটি ভাঙার খবরে ভারত সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার ১৫ জুলাই রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের এ বাড়ি ধ্বংসের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, “বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।”

 

 

ভবনটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভবনটি বাংলার সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এমন প্রেক্ষাপটে এটি ভাঙার কাজ পুনর্বিবেচনা করা উচিত। ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে একে ‘সাহিত্য জাদুঘরে’ রূপান্তর করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে, যা ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক হতে পারে।”

সংস্কারের এ কাজে ভারত সরকার সহযোগিতা দিতে আগ্রহী থাকবে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে।

এদিকে সংবাদমাধ্যমে এ খবর দেখে মঙ্গলবার এক্স এ এক পোস্টে মমতা এ খবরকে দুঃসংবাদ হিসেবে তুলে ধরেন। ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি রক্ষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

পাশাপাশি ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের’ কাছেও বাড়িটি রক্ষায় আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী; ভারত সরকারকেও বিষয়টিতে নজর দেওয়ার কথা বলেন।

এক্স পোস্টে মমতা লেখেন, “খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত। এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। ”

 

 

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”

ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরষদের একতলা প্রাচীন বাড়িটি শিশু একাডেমি ব্যবহার করত। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক দিন ধরে বাড়িটি ভাঙার কাজ করছে বলে খবরে এসেছে। ভবনটি নগরীর বিএনপির কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত।

১৯৮৯ সাল থেকে শিশু একাডেমি ভবনটি ব্যবহার শুরু করে। পরিত্যক্ত ও জীর্ণ ভবনটি একাডেমি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের পর আর ব্যবহার করেনি। সেই থেকে এটি পড়ে রয়েছে। বাড়িটির সামনে একটি ছোট মাঠ রয়েছে।

হরিকিশোর রায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মসূয়ার জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য বলছে, পাঁচ বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীকে তার পিতা কালীনাথ রায় ওরফে শ্যামসুন্দর মুন্সীর কাছ থেকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন ময়মনসিংহের জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী। সুপণ্ডিত জমিদার হরিকিশোরের পৃষ্ঠপোষকতায় উপেন্দ্রকিশোরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৮৮০ সালে বৃত্তি নিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন।

ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

 

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি ভাঙার খবরকে দুঃসংবাদ হিসেবে তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের বাড়ি সংস্কারের প্রস্তাব ভারতের

আপডেট সময় ১২:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

 

ময়মনসিংহ নগরীতে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের পারিবারিক বাড়ি ভাঙার খবর সামনে আসার পর ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি সংস্কার ও পুনর্নিমাণে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত।

নগরীর হরিকিশোর রায় সড়কে দুই শতাধিক বছরের পুরনো একতলা এ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেছে জেলার শিশু একাডেমি বলে খবরে এসেছে।

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ খ্যাতনামা সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িটি ভাঙার খবরে ভারত সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার ১৫ জুলাই রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের এ বাড়ি ধ্বংসের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, “বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।”

 

 

ভবনটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভবনটি বাংলার সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এমন প্রেক্ষাপটে এটি ভাঙার কাজ পুনর্বিবেচনা করা উচিত। ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে একে ‘সাহিত্য জাদুঘরে’ রূপান্তর করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে, যা ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক হতে পারে।”

সংস্কারের এ কাজে ভারত সরকার সহযোগিতা দিতে আগ্রহী থাকবে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে।

এদিকে সংবাদমাধ্যমে এ খবর দেখে মঙ্গলবার এক্স এ এক পোস্টে মমতা এ খবরকে দুঃসংবাদ হিসেবে তুলে ধরেন। ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি রক্ষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

পাশাপাশি ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের’ কাছেও বাড়িটি রক্ষায় আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী; ভারত সরকারকেও বিষয়টিতে নজর দেওয়ার কথা বলেন।

এক্স পোস্টে মমতা লেখেন, “খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত। এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। ”

 

 

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”

ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরষদের একতলা প্রাচীন বাড়িটি শিশু একাডেমি ব্যবহার করত। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক দিন ধরে বাড়িটি ভাঙার কাজ করছে বলে খবরে এসেছে। ভবনটি নগরীর বিএনপির কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত।

১৯৮৯ সাল থেকে শিশু একাডেমি ভবনটি ব্যবহার শুরু করে। পরিত্যক্ত ও জীর্ণ ভবনটি একাডেমি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের পর আর ব্যবহার করেনি। সেই থেকে এটি পড়ে রয়েছে। বাড়িটির সামনে একটি ছোট মাঠ রয়েছে।

হরিকিশোর রায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মসূয়ার জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য বলছে, পাঁচ বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীকে তার পিতা কালীনাথ রায় ওরফে শ্যামসুন্দর মুন্সীর কাছ থেকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন ময়মনসিংহের জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী। সুপণ্ডিত জমিদার হরিকিশোরের পৃষ্ঠপোষকতায় উপেন্দ্রকিশোরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৮৮০ সালে বৃত্তি নিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন।

ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

 

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম