০৭:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
“বাবা-মায়ের সাথে একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকে মেয়েটি ।… বাবা-মায়ের সাথে মেয়ের ৫-৬ বছর কথা হয় না। মোবাইল মেসেজে কথা হয়। তাদের সাথে শারীরিক দূরত্ব হয়নি। মানসিক দূরত্ব হয়েছে,” বলেন আইনজীবী।

মামলা করা মেয়েটি এখন ‘বুলিংয়ের’ শিকার, উদ্বিগ্ন বাবা-মা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:৩৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

 

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে সুরক্ষা চেয়ে আদালতে অভিযোগ করা সেই তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তাকে যেন এভাবে ‘বুলি’ করা না হয়, সে যেন ‘সুস্থ জীবনযাপনে’ ফিরতে পারে, সেজন্য সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন তার বাবা-মা।

একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ওই শিক্ষার্থী মোহাম্মদপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। সাইবার স্পেসে তার নিরাপত্তা নিয়ে তার বাবা-মায়ের উদ্বেগের কথা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মেয়েটির আইনজীবী ইশফাকুর রহমান গালিব।

ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (সিআরইউ) আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে গালিব বলেন, চিঠি দিয়ে ওই তরুণীর মা তাকে জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মেয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

“বুলিংয়ের কারণে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাকে যেন বুলি করা না হয়, বাবা-মা সেই নিবেদন জানিয়েছেন। মেয়েকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তারা ফিরে পেতে চান। প্রয়োজনে মেয়েসহ তারা তিনজন মিলে একসাথে কাউন্সেলিং কোতে চান।”

এ আইনজীবী বলেন, “বাবা-মায়ের সাথে একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকে মেয়েটি । একই টেবিলে খাওয়া দাওয়া করে। একই গাড়িতে চলে। তবে বাবা-মায়ের সাথে মেয়ের ৫-৬ বছর কথা হয় না। মোবাইল মেসেজে কথা হয়। তাদের সাথে শারীরিক দূরত্ব হয়নি। মানসিক দূরত্ব হয়েছে। এটার নিরসন চান দুপক্ষই।”

তিনি বলেন, “মেয়েটির বাবা-মা দুজনেই চাকুরীজীবী। এজন্য বাবা-মায়ের সাথে তার একটি গ্যাপ তৈরি হয়। আদালতের বাইরে এটার সমাধান হয়নি বলে আদালতের দারস্থ হয় সে। আদালত তার সুরক্ষার জন্য যে আদেশ দেবে, তা বাবা-মা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।”

আইনজীবী গালিব বলেন, “তার ঘটনাটি শিক্ষনীয়। সন্তানদের যেন চাকরীজীবী বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় দেন। সন্তানদের প্রতি কেমন আচরণ করবেন, সন্তানরা কী চান তা ভালোবাসা দিয়ে দেখেন। সন্তানদের শাসন করতে হবে, তবে সেটা যেন সুশাসন হয়। আবার বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটাও যেন মানা হয়।”

ওই তরুণীল কথা তুলে ধরে তার আইনজীবী বলেন, “তিনি শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী নন, ইংলিশের একজন শিক্ষকও বলা চলে। তিনি ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়ান। এর ভিতর বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূতের মেয়েও তার শিক্ষার্থী। তার ইংরেজি ফ্লুয়েন্সি অনেক ভালো। তিনি দেশের সম্পদ হতে পারেন।”

আইনজীবীতে দেওয়া চিঠিতে মেয়েটির তার বাবা-মা বলেছেন, “আমাদের একমাত্র কন্যা দীর্ঘদিন থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। বিভিন্ন কারণে মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তার মধ্যে একাকিত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তার মনের মধ্যে এক গভীর রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

“আমাদের ধারণা সেটা থেকেই আদালতে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে মেয়েটা। পিতা-মাতা হিসেবে আমরা চাই, সে যেন সুস্থ থাকে এবং দেশের আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা আস্থা থাকে এবং আদালত থেকে যেন সুরক্ষাদেশ লাভ করে।”

গত ২২ জুন বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে নিজের সুরক্ষা চেয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে অভিযোগ করেন ওই তরুণী।

তার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসায় তাকে ‘শারীরিকভাবে আঘাত’ এবং ‘অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করেন তার বাবা-মা। আঘাতে তার শরীরে জখম হয়। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও বাবা-মা তার ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অপমান ও নির্যাতন’ করে যাচ্ছেন। পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহারে তাকে বাধা দিচ্ছেন।

আরও বলা হয়, “পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যে সকল সম্পদ বা সুযোগ সুবিধা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে, তা থেকে বঞ্চিত করে এবং বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তারা মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। শারীরিকভাবে আঘাত করে নির্যাতন হয়েছে, যার মাধ্যমে সহিংসতা ঘটেছে।”

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“বাবা-মায়ের সাথে একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকে মেয়েটি ।… বাবা-মায়ের সাথে মেয়ের ৫-৬ বছর কথা হয় না। মোবাইল মেসেজে কথা হয়। তাদের সাথে শারীরিক দূরত্ব হয়নি। মানসিক দূরত্ব হয়েছে,” বলেন আইনজীবী।

মামলা করা মেয়েটি এখন ‘বুলিংয়ের’ শিকার, উদ্বিগ্ন বাবা-মা

আপডেট সময় ১২:৩৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

 

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে সুরক্ষা চেয়ে আদালতে অভিযোগ করা সেই তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তাকে যেন এভাবে ‘বুলি’ করা না হয়, সে যেন ‘সুস্থ জীবনযাপনে’ ফিরতে পারে, সেজন্য সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন তার বাবা-মা।

একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ওই শিক্ষার্থী মোহাম্মদপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। সাইবার স্পেসে তার নিরাপত্তা নিয়ে তার বাবা-মায়ের উদ্বেগের কথা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মেয়েটির আইনজীবী ইশফাকুর রহমান গালিব।

ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (সিআরইউ) আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে গালিব বলেন, চিঠি দিয়ে ওই তরুণীর মা তাকে জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মেয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

“বুলিংয়ের কারণে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাকে যেন বুলি করা না হয়, বাবা-মা সেই নিবেদন জানিয়েছেন। মেয়েকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তারা ফিরে পেতে চান। প্রয়োজনে মেয়েসহ তারা তিনজন মিলে একসাথে কাউন্সেলিং কোতে চান।”

এ আইনজীবী বলেন, “বাবা-মায়ের সাথে একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকে মেয়েটি । একই টেবিলে খাওয়া দাওয়া করে। একই গাড়িতে চলে। তবে বাবা-মায়ের সাথে মেয়ের ৫-৬ বছর কথা হয় না। মোবাইল মেসেজে কথা হয়। তাদের সাথে শারীরিক দূরত্ব হয়নি। মানসিক দূরত্ব হয়েছে। এটার নিরসন চান দুপক্ষই।”

তিনি বলেন, “মেয়েটির বাবা-মা দুজনেই চাকুরীজীবী। এজন্য বাবা-মায়ের সাথে তার একটি গ্যাপ তৈরি হয়। আদালতের বাইরে এটার সমাধান হয়নি বলে আদালতের দারস্থ হয় সে। আদালত তার সুরক্ষার জন্য যে আদেশ দেবে, তা বাবা-মা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।”

আইনজীবী গালিব বলেন, “তার ঘটনাটি শিক্ষনীয়। সন্তানদের যেন চাকরীজীবী বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় দেন। সন্তানদের প্রতি কেমন আচরণ করবেন, সন্তানরা কী চান তা ভালোবাসা দিয়ে দেখেন। সন্তানদের শাসন করতে হবে, তবে সেটা যেন সুশাসন হয়। আবার বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটাও যেন মানা হয়।”

ওই তরুণীল কথা তুলে ধরে তার আইনজীবী বলেন, “তিনি শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী নন, ইংলিশের একজন শিক্ষকও বলা চলে। তিনি ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়ান। এর ভিতর বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূতের মেয়েও তার শিক্ষার্থী। তার ইংরেজি ফ্লুয়েন্সি অনেক ভালো। তিনি দেশের সম্পদ হতে পারেন।”

আইনজীবীতে দেওয়া চিঠিতে মেয়েটির তার বাবা-মা বলেছেন, “আমাদের একমাত্র কন্যা দীর্ঘদিন থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। বিভিন্ন কারণে মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তার মধ্যে একাকিত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তার মনের মধ্যে এক গভীর রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

“আমাদের ধারণা সেটা থেকেই আদালতে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে মেয়েটা। পিতা-মাতা হিসেবে আমরা চাই, সে যেন সুস্থ থাকে এবং দেশের আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা আস্থা থাকে এবং আদালত থেকে যেন সুরক্ষাদেশ লাভ করে।”

গত ২২ জুন বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে নিজের সুরক্ষা চেয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে অভিযোগ করেন ওই তরুণী।

তার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসায় তাকে ‘শারীরিকভাবে আঘাত’ এবং ‘অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করেন তার বাবা-মা। আঘাতে তার শরীরে জখম হয়। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও বাবা-মা তার ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অপমান ও নির্যাতন’ করে যাচ্ছেন। পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহারে তাকে বাধা দিচ্ছেন।

আরও বলা হয়, “পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যে সকল সম্পদ বা সুযোগ সুবিধা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে, তা থেকে বঞ্চিত করে এবং বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তারা মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। শারীরিকভাবে আঘাত করে নির্যাতন হয়েছে, যার মাধ্যমে সহিংসতা ঘটেছে।”

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম