এ মিশনে উচ্চগতির লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে স্যাটেলােইটের মধ্যে যোগাযোগ ও উন্নত স্পেস নেভিগেশনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর কোয়ান্টাম ইনর্শিয়াল সেন্সর পরীক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন এই রকেটের উৎক্ষেপণ নিয়ে কোনো ঘোষণা নেই কেন?

- আপডেট সময় ০৩:২৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীর কক্ষপথে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ছোট এক মহাকাশযান সম্প্রতি ফ্লোরিডা থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে। তবে এই পুরো কাজটিই হয়েছে গোপনে।
বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে রকেটটির উৎক্ষেপণ হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বা ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স কেউই কিছু বলেনি।
পুরো বিষয়টি নিয়ে এদের কোনও কথা না বলার কারণ, পুরো অভিযানটিই ‘ক্লাসিফাইড’ বা গোপনীয়।
এদিন সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে করে মানববিহীন এই ‘এক্স-৩৭বি’ নামের মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সাপ্তাহিক সাময়িকী নিউজউইক।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্স বলেছে, বোয়িংয়ের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ‘এক্স-৩৭বি’ মহাকাশযানের অষ্টম মিশন এটি। এ মিশনে উচ্চগতির লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে স্যাটেলােইটের মধ্যে যোগাযোগ ও উন্নত স্পেস নেভিগেশনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর কোয়ান্টাম ইনর্শিয়াল সেন্সর পরীক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এর গুরুত্ব কী?
রকেটটির এ মহাকাশযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রচেষ্টারই প্রতিফলন, যেখানে সাধারণ স্যাটেলাইট ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আরও শক্তিশালী ও টেকসই মহাকাশ প্রযুক্তি গড়ে তুলতে চাইছে দেশটি, যা ভবিষ্যতে সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করবে মার্কিন সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এই উদ্যোগ এমন সময়ে নিল যখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী মহাকাশভিত্তিক যোগাযোগ ও নেভিগেশন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

যা জানা দরকার
মানববিহীন এ মহাকাশযানের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ মিটার ও এর ডানার প্রস্থ প্রায় চার দশমিক পাঁচ মিটার। মার্কিন সামরিক ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং বলেছে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হিসেবে তৈরি এটি এবং নিজেই মহাকাশ থেকে অবতরণ করতে পরে।
২০১০ সালে শুরু হওয়া ‘এক্স-৩৭বি’ কর্মসূচির অধীনে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মহাকাশ মিশন সম্পন্ন হয়েছে। এসব মিশনের মাধ্যমে মোট চার হাজার দুইশো আট দিন মহাকাশে কাজ করেছে ‘এক্স-৩৭বি’।
গত বছরের মার্চে পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর আশপাশে ঘুরে বেড়িয়েছিল এক্স-৩৭বি রকেটটি। মিশনটি ছিল স্পেসএক্সের ফ্যালকন হেভি রকেটের প্রথমবার পৃথিবীর উচ্চ বৃত্তাকার কক্ষপথে পাঠানো মিশন।
প্রথমবারের মতো এ মিশনে রকেটটিকে এমন এক কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল, যেটি ছিল ডিম্বাকৃতির কক্ষপথ, অর্থাৎ গোল নয়, একটু লম্বাটে। এ ধরনের কক্ষপথে মহাকাশযান কখনো পৃথিবীর কাছাকাছি আসে, আবার কখনো বেশ খানিকটা দূরে চলে যায়।
এ মিশনে এক্স-৩৭বি-এর ‘অ্যারোব্রেকিং’ সক্ষমতা পরীক্ষা করেছে মার্কিন এয়ার ফোর্স। যার মানে, মহাকাশযানটি বাতাসের ঘর্ষণ ব্যবহার করে বারবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ধারে এসে নিজের কক্ষপথ ধীরে ধীরে বদলাতে পারে, যাতে জ্বালানি খরচ অনেক কম হয়।
এক বিবৃতিতে গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্সের প্রধান জেনারেল চান্স সাল্টজম্যান বলেছিলেন, “মিশন ৭ নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে এক্স-৩৭বি নিজের বিভিন্ন পরীক্ষামূলক কাজ কক্ষপথের বিভিন্ন স্তরে সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। এই মিশনে রকেটটির অ্যারোব্রেকিং কৌশলের সফল বাস্তবায়ন থেকে ইঙ্গিত মেলে, যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্স নিরাপদ ও দায়িত্বশীলভাবে নতুন ধরনের মহাকাশ কার্যক্রমের সীমা পেরিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
জুলাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্সের মহাকাশ অপারেশনের প্রধান জেনারেল চান্স সাল্টজম্যান লিখেছেন, “এ মিশনের লক্ষ্য কেবল নতুন প্রযুক্তি আনা নয়, বরং আমাদের যৌথ বাহিনীকে আরও সংযুক্ত, টেকসই ও যে কোনো চ্যালেঞ্জ ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত করে তোলাও। এভাবেই আমেরিকার স্পেস ফোর্স আমাদের দেশের স্বার্থ পৃথিবীর বাইরে মহাকাশেও সুরক্ষিত করে চলেছে।”
এক বিবৃতিতে মার্কিন ‘এয়ার ফোর্স র্যাপিড ক্যাপাবিলিটিজ অফিস’-এর উপ-পরিচালক উইলিয়াম ব্লাউজার বলেছেন, “ওটিভি-৮ প্রমাণ করে যে, এক্স-৩৭বি যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ মহাকাশ প্রযুক্তির প্রধান হাতিয়ার। লক্ষ্যভিত্তিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে মহাকাশের শেষ সীমায় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে এটি।”
বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপণের আগে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্স বলেছে, “আগের এক্স-৩৭বি মিশনগুলোতে সফলভাবে দেখানো হয়েছে যে এ মহাকাশযানটি নতুন ধরনের ‘অ্যারোব্রেকিং’ কৌশল ব্যবহার করে নিজের কক্ষপথ পরিবর্তন করতে পারে। এতে মহাকাশ সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করেছি আমরা। ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির এমন প্রযুক্তি সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে, যা সৌরশক্তি সংগ্রহ করে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ পাঠাতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি চাঁদ বা আরও দূরের মিশনে মানুষকে টিকিয়ে রাখতে কীভাবে কাজ করে তা বোঝা যায়।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
সর্বশেষ এ মিশনটি কতদিন মহাকাশে থাকবে তা এখনও অজানা। রকেটটির আগের বিভিন্ন মিশন কিছু মাস ধরে চলেছে, আবার কিছু মিশনে এটি এক বছরের বেশি সময় মহাকাশে ছিল।
এ মিশনের মেয়াদ কতদিন হচ্ছে তা সম্ভবত জানা যাবে শাটলটি ফেরার পর।
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম