৭৫ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন। আগামী ২১ অগাস্ট সাক্ষ্য দিতে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে সমন পাঠানো হয়েছে।
মিল্কী হত্যার এক যুগ: স্বাক্ষীরা আসেন না, বিচার এগোয় না

- আপডেট সময় ০২:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ৩৪ বার পড়া হয়েছে
সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে না আসায় এক যুগ পরেও বিচারের কাজে অগ্রগতি নেই সেই সময়ের আলোচিত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদককে গুলি করে খুনের এ মামলার বিচারের প্রক্রিয়া যে কারণে ধীর হয়ে পড়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও চাইছেন, এটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তীর আদালতে বিচারাধীন মামলাটিতে সবশেষ ১৭ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও কোনো সাক্ষী হাজির হননি। আগামী ২১ অগাস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না আসায় কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। তবুও সাক্ষীরা নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আগামি ধার্য তারিখে সাক্ষ্য দিতে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে সমন পাঠানো হয়েছে।
মামলাটিতে সবশেষ ২০২৪ সালের ৩ জুলাই মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ও হুজুর আলী নামে দুইজন সাক্ষ্য দেন। এর আগে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন।
ওই সময় যুবলীগের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি করা ২০১৩ সালের এ খুনের ঘটনার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের পর থেকে গত ৭ বছরে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
মামলার সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মু. আবদুল নূর ভুঁঞা (বাবলু) বলেন, তিনি এ মামলা পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর কোনো সাক্ষী হাজির হয়নি৷ রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সাক্ষী হাজির করে বিচার শেষ করার। কিন্তু সাক্ষীরা আসছেন না। জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেও তাদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না।
দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ২০২২ সালের মার্চ থেকে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচার কাজ চলছে এ মামলার।
এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড বিপণি বিতানের সামনে প্রকাশ্যে সড়কে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা মিল্কিকে।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর দেওয়া অভিযোগপত্রে আধিপত্য বিস্তার, সাংগঠনিক পদ দখল, নির্বাচনি মনোনয়ন, বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া অর্থ বন্টন নিয়ে মিল্কির সঙ্গে এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক নামে যুবলীগের আরেক নেতার পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ খুনের ঘটনা বলে তুলে ধরা হয়।

কী ঘটেছিল ওই রাতে
শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে নামেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি। নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে একটি গুলি ছোঁড়েন।
হঠাৎ আক্রমণে গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুঁড়ি দিতে থাকেন। এসময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে সাত/আটটি গুলি ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
এরপর পেছন থেকে এক যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে এলে গুলিবর্ষণকারী যুবক সেটির পেছনে করে চলে যান।
সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবকটিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায় তিনি ছিলেন যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেক। তাকে মটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী যুবকের নাম সোহেল মাহমুদ।
ঘটনার দুই দিনের মাথায় ৩১ জুলাই মিল্কি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি তারেক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এসময় তারেকের সহযোগী শাহ আলমও নিহত হন।
বিচার শুরু হতেই ৯ বছর
২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটিতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমুর রশিদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে এটির বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী রাশেদুল। আদালত নারাজি আমলে নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
এক বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে চারজন সাক্ষ্য দেওয়ার পর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
দু’দফা তদন্ত শেষে ১৮ আসামি হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ।
এদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৪ জন আসামি জামিনে রয়েছে।
আলোচিত এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু, যাকে গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে ঢাকার শাজাহানপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তবে মিল্কী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র থেকে আগেই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
কী বলছেন আইনজীবীরা
ডা. ফরিউদ্দৌলার আইনজীবী তাইফুর রহমান সুমন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার মক্কেল এ ঘটনার শিকার। এখন পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদের কেউই তার নাম বলেননি। তারপরও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ প্রমাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
তিন আসামি তুহিনুর রহমান, রাশেদ মাহমুদ ও নুরুজ্জামানের আইনজীবী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন হাওলাদারও চান বিচার দ্রুত শেষ হোক। আইনি লড়াই চালিয়ে মক্কেলদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চলবে।
তবে মামলার বিষয়ে বাদী ও তার আইনজীবীর বক্তব্য জানা যায়নি।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম