“মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে সেই আইডি কার্ডের মূল্য হচ্ছে সব থেকে কম।"
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে অসুবিধা কোথায়, প্রশ্ন সোহেল রানার

- আপডেট সময় ১১:২১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৪ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের প্রকৃত সম্মান ‘দেওয়া হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন সিনেমার অভিনেতা ও প্রযোজক-পরিচালক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।
যিনি একাত্তরে রণাঙ্গনে অস্ত্র ধরেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে। দেশ স্বাধীনের পর নাম লেখান ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে। মুক্তির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক তিনি। সিনেমায় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন এই নির্মাতা-প্রযোজক। পরে নিজেও আসেন অভিনয় ও পরিচালনায়।
বিনোদন ডেস্ক সঙ্গে আলাপে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার ও সম্মানের বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন এই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা প্রকৃত সম্মান পাচ্ছেন না বলেও হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শারীরিক নানা সমস্যায় জর্জরিত সোহেল রানা এখন আর অভিনয়ে নিয়মিত নন। তার হতাশার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত রোববার ফেইসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে।
সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক! তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।”
কোন অভিমান বা ক্ষোভ থেকে কথাগুলো লিখেছিলেন জানতে চাইলে সোহেল রানা গ্লিটজকে বলেন, “আমাকে নিয়ে কিছু লিখিনি, আমার কথা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলাটা তুলে ধরলাম। আমার এসব বিষয়ে দুঃখ নেই। কিন্তু দীর্ঘশ্বাস আছে।
“পৃথিবীর সব ধরনের আইডি কার্ডের তো একটা মূল্য আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে সেই আইডি কার্ডের মূল্য হচ্ছে সব থেকে কম।”
তুলনা টেনে তিনি বলেন, “পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তাদের সবার নিজস্ব হাসপাতাল, ছাড়পত্র বা আলাদা সেবা থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেওয়া কার্ডে কী আছে? এই কার্ডের চেয়ে মূল্যহীন কার্ড পৃথিবীতে আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।”
সোহেল রানা বলেন, “২৫ বছর পর তো বাংলাদেশে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখা যাবে না, কাউকে পাওয়া যাবে না। তাহলে তারা এখন বেঁচে থাকতে সেই সম্মানটুকু করলে অসুবিধা কোথায়? আপনারা অন্যদের এত সুযোগ সুবিধা দেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের একটু সম্মান দেন। আর তো কিছু চাই না।”
অভিনেতা সোহেল রানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাউজের সদস্য ছিলেন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি তুলেও ধরেছিলেন।
অভিনেতা বলেন, “আমি যখন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাউজের সদস্য ছিলাম তখন এক আলোচনা সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধারা যতদিন বেঁচে আছেন তাদের যাতায়াতে, সরকারি কাজগুলোতে এই কার্ডটা দিয়ে তাদের জন্য বিনাপয়সায় করে দেন। বেসরকারি হাসপাতালে বলে দেওয়া হোক মুক্তিযোদ্ধাদের এই কার্ড দেখে তাদের সুবিধা দেবে, খরচ যেটা আছে সেটা তোমরা নিবে না।
“একজন মুক্তিযোদ্ধা তো সারাদিন গাড়িতে চড়ে বেড়াবে না, হাসপাতালে গিয়ে বসে থাকবেন না। যতদিন বেঁচে আছে কার্ডটা ব্যবহার করে চলতে পারলে তিনি একটা সম্মান পাবেন।”
তবে কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি, তাই তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও কার্ডের প্রতি।
সোহেল রানা বলেন, “আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন, আমি খুশি। সমস্ত কার্ড আমার পকেটে থাকে আমি যখন বাইরে যাই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কার্ড আলমারিতে রেখে যাই, এই কার্ড অর্থহীন। রাষ্ট্র এগিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা রাষ্ট্র তৈরি করল তাদের ভিভিআইপি না লিখেন, ভিআইপি না লিখেন, সিআইপি তো লিখেন। যেটা দেখে তাদের একটু সম্মান করা হবে।”
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ এই অভিনেতা। একবার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গিয়ে তাকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, বসার জায়গা পাননি।
হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
“হাসপাতাল গুলোতে ২৫ জনের বসার জায়গা হলে, ১০০ জন রোগী দাঁড়িয়ে থাকে। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। অন্যান্য দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা বসার জায়গা থাকে। আমাদের এখানে তো সেটাও নেই। এসব নিয়েই মাঝে মধ্যে দীর্ঘনিশ্বাস চলে আসে।”
সোহেল রানা অভিনয় শুরু করেন ১৯৭৩ সালে। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। ওই সিনেমার মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।
‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’সহ একের পর এক তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা।
‘লালু ভুলু’ (১৯৮৩), ‘অজান্তে’ (১৯৯৬), ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩) এই তিন চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসরে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় সোহেল রানাকে।
বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম