আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে এসব ডিভাইসের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ৩১ অগাস্ট দিন ঠিক করে দিয়েছে।
মডেল মেঘনা আলমের ল্যাপটপ, মোবাইলে ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে কি না তদন্তের নির্দেশ

- আপডেট সময় ০২:২৬:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর ধানমণ্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় মডেল মেঘনা আলমের জব্দ করা ম্যাকবুক, ল্যাপটপ ও মোবাইলে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান’ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পাশপাশি এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই করে আগামী ৩১ অগাস্টের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
শুনানি শেষে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম এম. এ আজহারুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
শুনানিতে মেঘনা আলম আদালতে হাজির হন। বেলা ১১টা ৯ মিনিটের দিকে আদালতে তার ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল, পাসপোর্ট ফেরত চাওয়ার বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
এ সময় মেঘনা হাতে জায়নামাজ নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় উঠেন। এরপর মেঘনার আইনজীবী মহসিন রেজা ও মহিমা বাঁধন আসামি মেঘনার ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুন অর রশিদ এর বিরোধিতা করে বলেন, “এটা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। বর্তমানে মামলাটি তদন্তধীন। ল্যাপটপ, মোবাইল ব্যবহার করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী, কূটনীতিককে ব্লাকমেইল করতেন তা জানা প্রয়োজন। তদন্তের স্বার্থে এই আবেদন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”
তখন মেঘনা আলম আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন। তার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি প্রমাণ দিতে পারব, আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল, না আমি কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলাম।”
তখন বিচারক বলেন, “এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়।”
মেঘনা আলম বলেন, “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। ছয়টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “তিনি নারীদের নিয়ে কি কাজ করতেন তা মামলার এজাহারে স্পষ্ট। তিনি মূলত নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন।”
প্রতিবাদ জানিয়ে মেঘনা আলম বলেন, “আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন।”
এরপর উভয় পক্ষ তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
মেঘনা আলম বলেন, “এখন পর্যন্ত আমি নিরপরাধ”।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে এসব ডিভাইসের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ৩১ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেন।
মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের আগে তিনি ফেইসবুক লাইভে এসে বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন। তাকে আটক করার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরদিন ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন বিচারক।
মডেল মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ১২ এপ্রিল ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করে হাই কোর্ট।
তাকে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কেন নয়–তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ধানমন্ডি থানায় ‘হানি ট্র্যাপিংয়ের’ মামলা দায়ের করা হয় মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে। সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামের এক জনশক্তি রপ্তানিকারক কোম্পানির মালিক দেওয়ান সমিরকেও সেখানে আসামি করা হয়।
গত ১৭ এপ্রিল তাদের আদালতে হাজির করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে গত ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।তার ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল হয়। পরদিন ২৯ এপ্রিল তিনি কারামুক্ত হন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মেঘনা আলম ও দেওয়ার সমিরসহ অন্যান্য আসামি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে।
অভিযোগে বলা হয়, তারা অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থায় তাদের সম্মানহানীর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম