১১:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
মধ্য টেক্সাসে রোববার একাধিক হড়কা বানের সতর্কতা জারি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫১, শিশুই ১৫ জন

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৬:৩৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে

টেক্সাসের কারভিলের একটি ক্যাম্পে ফোনে কথা বলছে এক শিশু। সেখানে শিশুদের সঙ্গে পরিবারের পুনর্মিলন ঘটে। ছবি: রয়টার্স

 

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুই ১৫ জন। দুর্গতদের উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়েছে শত শত উদ্ধারকারী।

কার কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লাইথা বলছেন, “আমাদের কাজ চলবে এবং চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না সবাইকে খুঁজে পাওয়া যায়।”

বিবিসি লিখেছে, শনিবার ৫ জুলাই দ্বিতীয় রাতের মত উদ্ধার তৎপরতা চলছে। কাউন্টি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর ধারে একটি মিশনারি আশ্রমের ২৭ শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

কয়েকজন মা-বাবা তাদের সন্তানের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার মধ্য টেক্সাসে একাধিক হড়কা বানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট শনিবার ৫ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তল্লাশি অভিযান জোরদার করতে তিনি একটি সম্প্রসারিত দুর্যোগ ঘোষণাপত্রে সই করেছেন।

 

বানের জলে ভেসে গেছে ‘ক্যাম্প মিস্টিক’র সবকিছু। ছবি: রয়টার্স

 

তিনি বলেন, কর্মকর্তারা প্রত্যেক দুর্গতকে খুঁজে পেতে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন।

“আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।”

কর্মকর্তারা বলছেন, এটি এখনো উদ্ধার অভিযান হিসেবেই চলছে, পুনর্বাসন পর্ব নয়।

তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা গুয়াডালুপে নদীর উভয় দিকে দেখছেন যে- কেউ পানিতে ভেসে গেছে কি না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার প্রশাসন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

 

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম জানান, উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোস্ট গার্ড মোতায়েন করবে।

বিবিসি লিখেছে, রোববার মধ্য টেক্সাসে আরও বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

জাতীয় আবহাওয়া সেবা জানিয়েছে, শনিবার ৫ জুলাই ওই এলাকায় ২ থেকে ৫ ইঞ্চি (৫ থেকে ১২ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। শুক্রবারের প্রবল বন্যায় যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেসব এলাকায় ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল।

 

 

উদ্ধার তৎপরতায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল গুয়াডালুপে নদীর তীরে অবস্থিত ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ ঘিরে। গ্রীষ্মকালীন মিশনারি ক্যাম্পটি কেবলই মেয়ে শিশুদের জন্য।

টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বিবিসির রেডিও ফোরকে বলেছেন, নিখোঁজ ২৭ জনের মধ্যে অনেকেরই বয়স ১২ বছরের কম।

ক্যাম্পটির ছবিতে সেখানকার বিশৃঙ্খল দশা ফুটে উঠেছে। কম্বল, তোশক, টেডি বিয়ার ও অন্যান্য জিনিসপত্র কাদা-মাটি মাখামাখি হয়ে আছে।

শুক্রবার ৪ জুলাই ভোরে যখন অনেকেই ঘুমাচ্ছিল, তখন এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট বেড়ে যায়।

প্রায় সাড়ে সাতশ ক্যাম্পারের বাবা-মাকে ইমেইলে ক্যাম্প মিস্টিক বলেছে, ক্যাম্প থেকে যাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়নি, তাদের সন্তানকে নিখোঁজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কিছু পরিবার ইতোমধ্যে জনসম্মুখে জানিয়েছে যে, তারা সন্তানদের মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।

মৃত, নিখোঁজ এবং তাদের পরিবারের জন্য নটর ডেম ক্যাথলিক চার্চে রোববার একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

 

 

‘এটা আমার সঙ্গেও হতে পারত’

ডালাস থেকে পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্প মিস্টিকে মেয়েকে নিতে এসেছিলেন র‌্যাচেল রিড। তিনি জানান, তাদের এলাকার অনেক মেয়েও আছে মৃত বা নিখোঁজদের তালিকায়।

বিবিসিকে রিড বলেন, “প্রত্যেক অভিভাবক এখন ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার ভাগ্যেও এমনটা ঘটতে পারত।”

জনাথন ও ব্রিটানি রোজাস তাদের স্বজনদের বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন, যেখানে কেবল বাড়ির ভিত টিকে রয়েছে।

তারা বিবিসিকে বলেন, পরিবারটির মা ও এক শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ওই পরিবারের কিশোর লিও কাঁটাতারে আটকা পড়লেও প্রাণে বেঁচে গেছে।

অ্যান্টনি নামের একজন তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে কাদা আর ধ্বংসাবশেষে পূর্ণ অবস্থায় পেয়েছেন। একটি বাক্সে থাকা শৈশবের ছবি এবং শিশুদের কম্বল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। এখন আমি পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছি।”

সূত্র : সামাজিক মাধ্যম এক্স / রয়টার্স / বিবিসি / সোশাল মিডিয়া

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

মধ্য টেক্সাসে রোববার একাধিক হড়কা বানের সতর্কতা জারি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫১, শিশুই ১৫ জন

আপডেট সময় ০৬:৩৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুই ১৫ জন। দুর্গতদের উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়েছে শত শত উদ্ধারকারী।

কার কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লাইথা বলছেন, “আমাদের কাজ চলবে এবং চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না সবাইকে খুঁজে পাওয়া যায়।”

বিবিসি লিখেছে, শনিবার ৫ জুলাই দ্বিতীয় রাতের মত উদ্ধার তৎপরতা চলছে। কাউন্টি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর ধারে একটি মিশনারি আশ্রমের ২৭ শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

কয়েকজন মা-বাবা তাদের সন্তানের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার মধ্য টেক্সাসে একাধিক হড়কা বানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট শনিবার ৫ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তল্লাশি অভিযান জোরদার করতে তিনি একটি সম্প্রসারিত দুর্যোগ ঘোষণাপত্রে সই করেছেন।

 

বানের জলে ভেসে গেছে ‘ক্যাম্প মিস্টিক’র সবকিছু। ছবি: রয়টার্স

 

তিনি বলেন, কর্মকর্তারা প্রত্যেক দুর্গতকে খুঁজে পেতে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন।

“আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।”

কর্মকর্তারা বলছেন, এটি এখনো উদ্ধার অভিযান হিসেবেই চলছে, পুনর্বাসন পর্ব নয়।

তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা গুয়াডালুপে নদীর উভয় দিকে দেখছেন যে- কেউ পানিতে ভেসে গেছে কি না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার প্রশাসন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

 

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম জানান, উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোস্ট গার্ড মোতায়েন করবে।

বিবিসি লিখেছে, রোববার মধ্য টেক্সাসে আরও বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

জাতীয় আবহাওয়া সেবা জানিয়েছে, শনিবার ৫ জুলাই ওই এলাকায় ২ থেকে ৫ ইঞ্চি (৫ থেকে ১২ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। শুক্রবারের প্রবল বন্যায় যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেসব এলাকায় ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল।

 

 

উদ্ধার তৎপরতায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল গুয়াডালুপে নদীর তীরে অবস্থিত ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ ঘিরে। গ্রীষ্মকালীন মিশনারি ক্যাম্পটি কেবলই মেয়ে শিশুদের জন্য।

টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বিবিসির রেডিও ফোরকে বলেছেন, নিখোঁজ ২৭ জনের মধ্যে অনেকেরই বয়স ১২ বছরের কম।

ক্যাম্পটির ছবিতে সেখানকার বিশৃঙ্খল দশা ফুটে উঠেছে। কম্বল, তোশক, টেডি বিয়ার ও অন্যান্য জিনিসপত্র কাদা-মাটি মাখামাখি হয়ে আছে।

শুক্রবার ৪ জুলাই ভোরে যখন অনেকেই ঘুমাচ্ছিল, তখন এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট বেড়ে যায়।

প্রায় সাড়ে সাতশ ক্যাম্পারের বাবা-মাকে ইমেইলে ক্যাম্প মিস্টিক বলেছে, ক্যাম্প থেকে যাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়নি, তাদের সন্তানকে নিখোঁজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কিছু পরিবার ইতোমধ্যে জনসম্মুখে জানিয়েছে যে, তারা সন্তানদের মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।

মৃত, নিখোঁজ এবং তাদের পরিবারের জন্য নটর ডেম ক্যাথলিক চার্চে রোববার একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

 

 

‘এটা আমার সঙ্গেও হতে পারত’

ডালাস থেকে পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্প মিস্টিকে মেয়েকে নিতে এসেছিলেন র‌্যাচেল রিড। তিনি জানান, তাদের এলাকার অনেক মেয়েও আছে মৃত বা নিখোঁজদের তালিকায়।

বিবিসিকে রিড বলেন, “প্রত্যেক অভিভাবক এখন ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার ভাগ্যেও এমনটা ঘটতে পারত।”

জনাথন ও ব্রিটানি রোজাস তাদের স্বজনদের বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন, যেখানে কেবল বাড়ির ভিত টিকে রয়েছে।

তারা বিবিসিকে বলেন, পরিবারটির মা ও এক শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ওই পরিবারের কিশোর লিও কাঁটাতারে আটকা পড়লেও প্রাণে বেঁচে গেছে।

অ্যান্টনি নামের একজন তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে কাদা আর ধ্বংসাবশেষে পূর্ণ অবস্থায় পেয়েছেন। একটি বাক্সে থাকা শৈশবের ছবি এবং শিশুদের কম্বল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। এখন আমি পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছি।”

সূত্র : সামাজিক মাধ্যম এক্স / রয়টার্স / বিবিসি / সোশাল মিডিয়া

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম