বিরল এসব মৌল উৎপাদনকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক দর কষাকষিতে চাপ তৈরির উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটি। এ নির্ভরতা থেকে বেরতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের বাজির ঘোড়া বিরল খনিজ?

- আপডেট সময় ০৪:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

বর্তমানে দেশেই এসব বিরল মৌলের সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স
রেয়ার বা বিরল আর্থ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি মৌলকে বোঝায়, যাদের পারমাণবিক গঠন বিশেষ এক চৌম্বক ধর্ম তৈরি করে। বর্তমানে এসব বিরল মৌল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর কষাকষির হাতিয়ারও।
বিরল এসব মৌল উৎপাদনকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ চীন। ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের বড় শক্তি এসব মৌল, যেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক দরকষাকষিতে চাপ তৈরির উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটি। আর যুক্তরাষ্ট্র এ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
কারণ হচ্ছে, এসব বিরল খনিজের ম্যাগনেট বা চুম্বক ইলেকট্রিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন বা বায়ু বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে শুরু করে সামরিক টুল, ডেটা সেন্টার ও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক্সে শক্তি দিতে ব্যবহুত হয়। একসময় বিরল খনিজ উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র’সহ পুরো বিশ্ব এসব বিরল মৌলের জন্য মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০ শতাংশ বিরল খনিজ উত্তোলন ও প্রায় ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে চীন।
‘বেঞ্চমার্ক মিনারেল ইন্টেলিজেন্স’-এর বিরল খনিজ গবেষণা ব্যবস্থাপক নেহা মুখার্জি বলেছেন, “চীন এ বাজার অনেক দিন ধরেই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। বর্তমানে সেই নিয়ন্ত্রণ আরও বেড়েছে। এসব বিরল মৌল অনেক কম কম দামে উৎপাদন ও বিক্রি করে চীন। ফলে বাইরের কোনো দেশ সহজে চীনের বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। চীনে এসব বিরল মৌলের দাম এতই কম যে, একে আমরা অযৌক্তিক দাম বলি।”
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের এক শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে এই বিরল খনিজ। এপ্রিলে এসব বিরল মৌল রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল চীন। ওইসময় অনেক শিল্পক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে গাড়ি শিল্প।
‘লংভিউ গ্লোবাল’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেওয়ার্ড্রিক ম্যাকনিল বলেছেন, “চীন ধীরে ধীরে এমন এক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতির অনুকরণ বা নকল। এ নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর চাপ তৈরি করে চীন, বিশেষ করে ওই সময় যখন দেশটি মনে করে তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। গত সাত মাসে আমরা এর বাস্তব প্রয়োগ দেখলেও গত কয়েক বছর ধরে ধাপে ধাপে এই নীতি-ব্যবস্থা তৈরি করছিল চীন।”
সিএনবিসি লিখেছে, বর্তমানে দেশেই এসব বিরল মৌলের সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। জুলাইয়ে ‘এমপি ম্যাটেরিয়ালস’ নামের এক বিরল খনিজ খনন ও উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানিতে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
‘এমপি ম্যাটেরিয়ালস’ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সক্রিয় বিরল পদার্থের খনি, যা ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন পাসে অবস্থিত। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’ ও ‘জেপি মরগ্যান’ও কোম্পানিটিকে একশ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যাতে বিরল খনিজ চুম্বক তৈরির কার্যক্রম আরও বাড়াতে পারে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রকল্পও এগিয়ে চলেছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ রাজ্যের ‘হোয়াইট মেসা’ কারখানায় বিরল খনিজ পরিশোধন শুরু করে ‘এনার্জি ফুয়েলস’ নামের এক কোম্পানি।
কোম্পানিটি আগে মূলত তেজস্ক্রিয় উপাদান ইউরেনিয়াম খনন ও পরিশোধন করত। পরে তারা ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মতো একই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ‘মোনাজাইট’ নামের খনিজ থেকে বিরল মৌলও সংগ্রহ করতে শুরু করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সিএনবিসি।
এখন ‘নিওডিয়ামিয়াম-প্রেসোডিয়ামিয়াম অক্সাইড’ নামের গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে কোম্পানিটি, যা স্থায়ী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কোম্পানিটি বলেছে, সঠিক অর্থায়ন বা বিনিয়োগ পাওয়া গেলে অন্যান্য বিরল মৌলের উৎপাদনও বাড়াবে তারা। এরইমধ্যে কিছু বিরল অক্সাইডের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে কোম্পানিটি।
‘এনার্জি ফুয়েলস’-এর সিইও মার্ক চ্যালমার্স বলেছেন, “এ মুহূর্তে আমরা প্রতি বছর প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন নিওডিয়ামিয়াম-প্রেসোডিয়ামিয়াম অক্সাইড প্রক্রিয়াজাত করতে পারি। আমাদের দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনা হচ্ছে সেটি বাড়িয়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন করা, যা দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি সম্ভব।
“আমাদের কাছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে এবং সেই দিকটি নিয়েও বিবেচনা করছি আমরা। যার মধ্যে রয়েছে ডিসপ্রোসিয়াম, টারবিয়াম, সামারিয়াম ও আরও কিছু উপাদান।
“এসব উপাদানকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রয়োজন মনে করলে এবং যথাযথ সহায়তা ও প্রণোদনা দিলে আমরা এসব বিরল মৌল উৎপাদন করতে পারব।”
সূত্র : আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি
প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম