১০:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক স্কুলে বন্দুকধারীর হামলাকে ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভ্যন্তরীন সন্ত্রাস ও ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে হামলাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে এফবিআই

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:৪৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি: রয়টার্স

 

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় দুই শিশু নিহত ও ১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

সংস্থাটির পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “এ হামলাকে ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভ্যন্তরীন সন্ত্রাস ও ঘৃণাজনিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।”

বুধবার সকালে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশু অ্যানুনসিয়েশন ক্যাথলিক স্কুলের গির্জার জানালা ভেদ করে হামলাকারীর চালানো গুলিতে নিহত হয়।

হামলার পরই বন্দুকধারী নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করে। পুলিশ পরে তাকে ২৩ বছর বয়সী রবিন ওয়েস্টম্যান হিসেবে শনাক্ত করেছে।

পুলিশ প্রধান ব্রায়ান ও’হারা এই হামলার ঘটনাকে ‘শিশু ও উপাসনাকারীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত সহিংস কার্যকলাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রাথমিক তদন্তে হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। হামলার সময় গির্জায় প্রার্থনা চলছিল। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা ফুল নিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসে।

স্কুলের নতুন সেশনের শুরুতেই এমন ঘটনা ঘটায় সেখানে মানুষের মধ্যে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শোকের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়।

ওদিকে, প্রথম আমেরিকান পোপ লিও চতুর্দশ নিহত শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, “এ হামলার কারণে আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত।”

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার আগে পুলিশ হামলার কল পেতে শুরু করে। হামলাকারী গির্জার পাশ দিয়ে এসে তিনটি অস্ত্র—রাইফেল, শটগান ও পিস্তল—ব্যবহার করে জানালার মধ্য দিয়ে গুলি চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ঘটনাস্থলে পুলিশ একটি গ্রেনেডও উদ্ধার করেছে। প্রতিবেশী প্যাট্রিক স্ক্যালেন বিবিসি-কে বলেন, গুলির শব্দ শুনে তিনি ছুটে যান এবং তিন শিশুকে গির্জা থেকে বের হতে দেখেন, একজনের মাথায় আঘাত ছিল।

তিনি বলেন, “মেয়েটি বারবার বলছিল, দয়া করে আমার হাত ধর, আমাকে ছেড়ো না, আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

একটি ১০ বছর বয়সী ছেলে জানায়, তার বন্ধু ভিক্টর গুলির হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছে। “আমি জানালা থেকে খানিকটা দূরে ছিলাম। ভিক্টর আমার উপর শুয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু সে আহত হয়েছে।”

অ্যানানুসিয়েশন চার্চে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। হামলাকারীর মা মেরি গ্রেস ওয়েস্টম্যান পূর্বে স্কুলটিতে কাজ করতেন।

২০১৬ সালের স্কুল নিউজলেটারে উল্লেখ আছে, তিনি ২০২১ সালে অবসর নেন। পুলিশ একটি নোটও খুঁজে পেয়েছে যা ওয়েস্টম্যান হামলার সময় অনলাইনে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

যদিও, পরে তদন্তকারীরা পোস্টটি মুছে ফেলে। মিনেসোটার আদালতের রেকর্ডে দেখা গেছে,ওয়েস্টম্যানের নাম ২০২০ সালে রবার্ট থেকে রবিনে আইনিভাবে পরিবর্তন করা হয়।

আদালতের নথিতে বিচারক লিখেছেন, “নারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া অল্পবয়সী শিশু তার নামও সেই অনুযায়ী রাখতে চায়।”

বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে মিনিয়াপোলিস এর মেয়র জ্যাকব ফ্রে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম বলেন, ওয়েস্টম্যান একজন পুরুষ, তিনি নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছেন এবং এফবিআই পরিচালক প্যাটেলের-এর পোস্টে তাকে ‘পুরুষ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মিনেসোটা গভর্নর টিম ওয়ালজ বলেন, হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন এবং সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র মিনেসোটা নয়, সারা দেশে ঘটে থাকে। কোনও স্কুল বা সম্প্রদায়কে এমন দিন যেন আর দেখতে না হয় সেটাই আশা করি।”

পরে ট্রাম্প বলেন, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধ-নমিত থাকবে।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক স্কুলে বন্দুকধারীর হামলাকে ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভ্যন্তরীন সন্ত্রাস ও ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে হামলাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে এফবিআই

আপডেট সময় ০৫:৪৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় দুই শিশু নিহত ও ১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

সংস্থাটির পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “এ হামলাকে ক্যাথলিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভ্যন্তরীন সন্ত্রাস ও ঘৃণাজনিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।”

বুধবার সকালে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশু অ্যানুনসিয়েশন ক্যাথলিক স্কুলের গির্জার জানালা ভেদ করে হামলাকারীর চালানো গুলিতে নিহত হয়।

হামলার পরই বন্দুকধারী নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করে। পুলিশ পরে তাকে ২৩ বছর বয়সী রবিন ওয়েস্টম্যান হিসেবে শনাক্ত করেছে।

পুলিশ প্রধান ব্রায়ান ও’হারা এই হামলার ঘটনাকে ‘শিশু ও উপাসনাকারীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত সহিংস কার্যকলাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রাথমিক তদন্তে হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। হামলার সময় গির্জায় প্রার্থনা চলছিল। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা ফুল নিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসে।

স্কুলের নতুন সেশনের শুরুতেই এমন ঘটনা ঘটায় সেখানে মানুষের মধ্যে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শোকের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়।

ওদিকে, প্রথম আমেরিকান পোপ লিও চতুর্দশ নিহত শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, “এ হামলার কারণে আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত।”

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার আগে পুলিশ হামলার কল পেতে শুরু করে। হামলাকারী গির্জার পাশ দিয়ে এসে তিনটি অস্ত্র—রাইফেল, শটগান ও পিস্তল—ব্যবহার করে জানালার মধ্য দিয়ে গুলি চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ঘটনাস্থলে পুলিশ একটি গ্রেনেডও উদ্ধার করেছে। প্রতিবেশী প্যাট্রিক স্ক্যালেন বিবিসি-কে বলেন, গুলির শব্দ শুনে তিনি ছুটে যান এবং তিন শিশুকে গির্জা থেকে বের হতে দেখেন, একজনের মাথায় আঘাত ছিল।

তিনি বলেন, “মেয়েটি বারবার বলছিল, দয়া করে আমার হাত ধর, আমাকে ছেড়ো না, আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

একটি ১০ বছর বয়সী ছেলে জানায়, তার বন্ধু ভিক্টর গুলির হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছে। “আমি জানালা থেকে খানিকটা দূরে ছিলাম। ভিক্টর আমার উপর শুয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু সে আহত হয়েছে।”

অ্যানানুসিয়েশন চার্চে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। হামলাকারীর মা মেরি গ্রেস ওয়েস্টম্যান পূর্বে স্কুলটিতে কাজ করতেন।

২০১৬ সালের স্কুল নিউজলেটারে উল্লেখ আছে, তিনি ২০২১ সালে অবসর নেন। পুলিশ একটি নোটও খুঁজে পেয়েছে যা ওয়েস্টম্যান হামলার সময় অনলাইনে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

যদিও, পরে তদন্তকারীরা পোস্টটি মুছে ফেলে। মিনেসোটার আদালতের রেকর্ডে দেখা গেছে,ওয়েস্টম্যানের নাম ২০২০ সালে রবার্ট থেকে রবিনে আইনিভাবে পরিবর্তন করা হয়।

আদালতের নথিতে বিচারক লিখেছেন, “নারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া অল্পবয়সী শিশু তার নামও সেই অনুযায়ী রাখতে চায়।”

বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে মিনিয়াপোলিস এর মেয়র জ্যাকব ফ্রে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম বলেন, ওয়েস্টম্যান একজন পুরুষ, তিনি নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছেন এবং এফবিআই পরিচালক প্যাটেলের-এর পোস্টে তাকে ‘পুরুষ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মিনেসোটা গভর্নর টিম ওয়ালজ বলেন, হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন এবং সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র মিনেসোটা নয়, সারা দেশে ঘটে থাকে। কোনও স্কুল বা সম্প্রদায়কে এমন দিন যেন আর দেখতে না হয় সেটাই আশা করি।”

পরে ট্রাম্প বলেন, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধ-নমিত থাকবে।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম