০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
সাময়িক যুদ্ধবিরতি করে নয়, বরং ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পরোপুরি পরিহারের’ মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অবসান চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

যুদ্ধবিরতি নয়, সংঘাতের ‘প্রকৃত অবসান’ চান ট্রাম্প

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১০:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।

ইরান ও ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংঘাত আলোচনার টেবিলে বসে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সমাধানের কোনও আগ্রহ দেখাননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

বরং তিনি এই সংঘাতের ‘প্রকৃত অবসান’ চেয়েছেন। তার মতে, ইরান ‘পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিহার’ করলেই সংঘাত শেষ হবে।

জি৭ সম্মেলনে যোগ দিয়ে কানাডা থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার পথে ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রশংসা করেন।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি বিলোপ করে দেওয়া প্রয়োজন।

ইরান-ইসরায়েল লড়াই কীভাবে বন্ধ করা পছন্দ করবেন সে বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “(ইরানের) পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি পরিহার করা। এটি সম্ভব। কোনও যুদ্ধবিরতি নয়। সংঘাতের প্রকৃত সমাধান চাই। আমি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মেজাজে খুব একটা নেই।”

ইসরায়েল ইরানে হামলা করার আগে ট্রাম্প যখন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিলেন তখনও তার অবস্থান ছিল একই। তিনি বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ হওয়া উচিত। প্রস্তাব গ্রহণ না করার জন্য তিনি ইরানকে দুষেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড সম্প্রতি কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে না—ট্রাম্প সেই বক্তব্যকেও উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি পাত্তা দিই না তিনি কী বলেছেন সেটিকে। আমি মনে করি, তারা (ইরান) অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল।”

এবার জি৭ সম্মেলন থেকে ট্রাম্প যখন তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন, তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ স্যেশাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, ট্রাম্প জলদি ওয়াশিংটনে ফিরছেন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করতে।

ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাক্রোঁর একথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আমি যুদ্ধবিরতির জন্য ফিরে আসিনি, এর চেয়েও বড় কিছু চাইছি।” ম্যাক্রো প্রায়ই ভুল করেন বলেও ট্রাম্প সমালোচনা করেছেন।

সেই সমালোচনার পরই ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত থামানোর প্রশ্নে তার অবস্থান প্রকাশ করলেন।

তবে ট্রাম্পের কাঙ্খিত পথে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত কীভাবে অবসান হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তিনি এখনও কিছু বলেননি। ট্রাম্প জানান, ‘পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহই’ নির্ধারণ করে দেবে তিনি কী কৌশল নেবেন।

মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘সিচুয়েশন রুমে’ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইরানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠানোর বিষয়েও ভাবছেন তিনি।

তবে এই মুহূর্তে তার অবস্থান আগ্রাসী। “তাদের (ইরান) পারমাণবিক কর্মসূচি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক,” বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তারা চুক্তি করার সময় পায়নি। এখন তাদের শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, বহু মানুষ মরেছে।”

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমা অতিক্রম করেছে অভিযোগে ইসরায়েল শুক্রবার দেশটিতে হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ‘সরাসরি লড়াইয়ে’ নেই, তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ ও ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়েছে ইরানের যেকোনও আঘাত মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে।

ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা দিয়ে ইরানে ফরদোর গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাক—যেটি এতটাই গভীরে অবস্থিত যে তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ ফাইটার দিয়ে আঘাত করা সম্ভব।

এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি এই অভিযানে জড়িত হওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চাপ দিচ্ছেন।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

সাময়িক যুদ্ধবিরতি করে নয়, বরং ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পরোপুরি পরিহারের’ মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অবসান চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

যুদ্ধবিরতি নয়, সংঘাতের ‘প্রকৃত অবসান’ চান ট্রাম্প

আপডেট সময় ১০:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংঘাত আলোচনার টেবিলে বসে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সমাধানের কোনও আগ্রহ দেখাননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

বরং তিনি এই সংঘাতের ‘প্রকৃত অবসান’ চেয়েছেন। তার মতে, ইরান ‘পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিহার’ করলেই সংঘাত শেষ হবে।

জি৭ সম্মেলনে যোগ দিয়ে কানাডা থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার পথে ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রশংসা করেন।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি বিলোপ করে দেওয়া প্রয়োজন।

ইরান-ইসরায়েল লড়াই কীভাবে বন্ধ করা পছন্দ করবেন সে বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “(ইরানের) পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি পরিহার করা। এটি সম্ভব। কোনও যুদ্ধবিরতি নয়। সংঘাতের প্রকৃত সমাধান চাই। আমি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মেজাজে খুব একটা নেই।”

ইসরায়েল ইরানে হামলা করার আগে ট্রাম্প যখন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিলেন তখনও তার অবস্থান ছিল একই। তিনি বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ হওয়া উচিত। প্রস্তাব গ্রহণ না করার জন্য তিনি ইরানকে দুষেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড সম্প্রতি কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে না—ট্রাম্প সেই বক্তব্যকেও উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি পাত্তা দিই না তিনি কী বলেছেন সেটিকে। আমি মনে করি, তারা (ইরান) অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল।”

এবার জি৭ সম্মেলন থেকে ট্রাম্প যখন তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন, তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ স্যেশাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, ট্রাম্প জলদি ওয়াশিংটনে ফিরছেন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করতে।

ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাক্রোঁর একথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আমি যুদ্ধবিরতির জন্য ফিরে আসিনি, এর চেয়েও বড় কিছু চাইছি।” ম্যাক্রো প্রায়ই ভুল করেন বলেও ট্রাম্প সমালোচনা করেছেন।

সেই সমালোচনার পরই ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত থামানোর প্রশ্নে তার অবস্থান প্রকাশ করলেন।

তবে ট্রাম্পের কাঙ্খিত পথে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত কীভাবে অবসান হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তিনি এখনও কিছু বলেননি। ট্রাম্প জানান, ‘পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহই’ নির্ধারণ করে দেবে তিনি কী কৌশল নেবেন।

মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘সিচুয়েশন রুমে’ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইরানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠানোর বিষয়েও ভাবছেন তিনি।

তবে এই মুহূর্তে তার অবস্থান আগ্রাসী। “তাদের (ইরান) পারমাণবিক কর্মসূচি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক,” বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তারা চুক্তি করার সময় পায়নি। এখন তাদের শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, বহু মানুষ মরেছে।”

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমা অতিক্রম করেছে অভিযোগে ইসরায়েল শুক্রবার দেশটিতে হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ‘সরাসরি লড়াইয়ে’ নেই, তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ ও ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়েছে ইরানের যেকোনও আঘাত মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে।

ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা দিয়ে ইরানে ফরদোর গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাক—যেটি এতটাই গভীরে অবস্থিত যে তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ ফাইটার দিয়ে আঘাত করা সম্ভব।

এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি এই অভিযানে জড়িত হওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চাপ দিচ্ছেন।