০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
বেশি গরমে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার আগে কিছু বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি।

যে পরিমাণ তাপমাত্রা দেহের জন্য সহ্যকর

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:১৯:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি: রয়টার্স।

 

কাজে বের হওয়া কিংবা ব্যায়াম করতে পার্কে যাওয়া- গরমের সময় বাইরে যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে দেহের সহ্যকর তাপমাত্রার মধ্যে থাকা জরুরি।

না হলে ঘটতে পারে বিপদ।

এই বিষয়ে ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘এনওয়াইইউ ল্যাংগন’স স্পোর্টস পারফর্মেন্স সেন্টার’-এর ব্যায়াম-বিষয়ক মনোবিজ্ঞানী হিথার মিল্টন বলেন, “গরম আবহাওয়াতে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তাকে বলে ‘থার্মোরেগুলেইশন’।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখনই ঘাম হবে তখনই বুঝতে হবে ‘থার্মোরেগুলেইশন’ পদ্ধতি চলছে। রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়া- দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি লক্ষণ।”

এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। যে কারণে গরমের চাইতে শীতল পরিবেশে ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে কম পরিশ্রম করা লাগে।

 

গরমের মধ্যে সেরে উঠতে সময় লাগার কারণ

ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া আর প্রতিটি পেশি থেকে ত্বকের কোণায় কোণায় রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে- গরমের মধ্যে যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের পর দেহের সারাই প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ সময় লাগে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যায়ামের প্রতিষ্ঠান ‘রো হাউজ’য়ের প্রশিক্ষক বেথনি স্টিলওয়াগন একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে স্বাভাবিক হতে উচ্চ তাপমাত্রায় সময় নেয় বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “সেই সাথে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস হারানোর কারণে প্রায় সময়ই মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, পেশিতে টান, অবসাদ এবং পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়।”

ব্যায়াম বা যে কোনো শরীরিক পরিশ্রমের পর শক্তি ফিরে পেতে পেশির জন্য প্রয়োজনীয় তরল প্রয়োজন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোল্ড’স জিম’য়ের প্রশিক্ষক অ্যালি ম্যাককিনি এই বিষয়ে বলেন, “গরমের সাথে যতই আমরা মানিয়ে নিতে পারবো ততই পরিশ্রম বা ব্যায়াম কার্যকরভাবে করা যাবে। তবে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপরে গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।”

 

যে পরিমাণ তাপমাত্রা ক্ষতিকর

যদিও একেক জনের শারীরিক সহ্য ক্ষমতা একেক রকম। তারপরও নিরাপদ তাপমাত্রা বলে একটা বিষয় রয়েছে- মন্তব্য করেন মিল্টন।

তিনি বলেন, “৯১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় ‘হিট এক্সজশচন’ বা অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এই পর্যায়ে দেহ সঠিকভাবে রক্তসঞ্চালন করতে পারে না। ফলে ‘থার্মোরেগুলেইশন’ প্রক্রিয়াতে বাধা তৈরি হয়।”

‘হিট এক্সজশচন’-এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: জ্ঞান হারানো, অবসাদ এবং ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারা।

“৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দেহের ভেতরের তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৯৮.৬ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্য” – বলেন মিল্টন। “আর এটা হল গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে দেহের শেষ সীমানা।”

এর পরেই হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র কার্যকারিতা হারিয়ে- দ্বিধাগ্রস্ততা, মাথাঘোরা কিংবা অযৌক্তিক আচরণ দেখা দিতে পারে।

আর এই পরিস্থিতে তাৎক্ষণিকভাবে দেহ শীতল করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই জন্য বেশি গরমের মধ্যে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে নিষেধ করা হয়। অথবা দিনের যে সময়টা অপেক্ষাকৃত গরম কম থাকে যেমন- সকালে বা বিকালে তখন শরীরচর্চা করতে বলা হয়।

 

গরমে শরীরকে প্রস্তুত করার পন্থা

এক কথায় আর্দ্র থাকতে হবে।

এই পরামর্শ দিয়ে ‘নিউ ইয়র্ক প্রেসবিটিরিয়ান হসপিটাল কলাম্বিয়া’র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জেনিফার হেইথ বলেন, “গরমে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম শুরু করার আগে অবশ্যই দুই গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়া প্রতি ২০ মিনিট পরপর চার থেকে ছয় আউন্স (প্রায় এক কাপ) তরল পান করা জরুরি। এছাড়া ব্যায়াম শেষে অবশ্যই পানি পান করতে হবে।”

“ঘামের মাধ্যমেই প্রাথমিক অবস্থায় দেহ নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে দেহ পানি হারায়। এছাড়া ইলেক্ট্রোলাইটস, মানে লবণ বেরিয়ে যায়। আর কোষকলার স্বাভাবিক ক্রিয়ার জন্য সোডিয়াম বা লবণ হল মৌলিক একটি উপাদান”- বলেন ডা. হেইথ।

এই জন্য সাধারণ পানির চাইতে ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধি পানীয় পানের পরামর্শ দেন এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

প্রতি আট আউন্স বা এক কাপ পানির মধ্যে যেন ১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ২৮ মি.গ্রাম পটাসিয়াম এবং ১০০ মি.গ্রাম সোডিয়াম থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন ডা. হেইথ।

পাশাপাশি সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পনির, জলপাই, কলা ও বিটরুট খাওয়া উপকারী।

সূত্র :   ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

বেশি গরমে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার আগে কিছু বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি।

যে পরিমাণ তাপমাত্রা দেহের জন্য সহ্যকর

আপডেট সময় ০৫:১৯:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

 

কাজে বের হওয়া কিংবা ব্যায়াম করতে পার্কে যাওয়া- গরমের সময় বাইরে যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে দেহের সহ্যকর তাপমাত্রার মধ্যে থাকা জরুরি।

না হলে ঘটতে পারে বিপদ।

এই বিষয়ে ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘এনওয়াইইউ ল্যাংগন’স স্পোর্টস পারফর্মেন্স সেন্টার’-এর ব্যায়াম-বিষয়ক মনোবিজ্ঞানী হিথার মিল্টন বলেন, “গরম আবহাওয়াতে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তাকে বলে ‘থার্মোরেগুলেইশন’।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখনই ঘাম হবে তখনই বুঝতে হবে ‘থার্মোরেগুলেইশন’ পদ্ধতি চলছে। রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়া- দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি লক্ষণ।”

এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। যে কারণে গরমের চাইতে শীতল পরিবেশে ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে কম পরিশ্রম করা লাগে।

 

গরমের মধ্যে সেরে উঠতে সময় লাগার কারণ

ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া আর প্রতিটি পেশি থেকে ত্বকের কোণায় কোণায় রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে- গরমের মধ্যে যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের পর দেহের সারাই প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ সময় লাগে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যায়ামের প্রতিষ্ঠান ‘রো হাউজ’য়ের প্রশিক্ষক বেথনি স্টিলওয়াগন একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে স্বাভাবিক হতে উচ্চ তাপমাত্রায় সময় নেয় বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “সেই সাথে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস হারানোর কারণে প্রায় সময়ই মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, পেশিতে টান, অবসাদ এবং পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়।”

ব্যায়াম বা যে কোনো শরীরিক পরিশ্রমের পর শক্তি ফিরে পেতে পেশির জন্য প্রয়োজনীয় তরল প্রয়োজন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোল্ড’স জিম’য়ের প্রশিক্ষক অ্যালি ম্যাককিনি এই বিষয়ে বলেন, “গরমের সাথে যতই আমরা মানিয়ে নিতে পারবো ততই পরিশ্রম বা ব্যায়াম কার্যকরভাবে করা যাবে। তবে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপরে গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।”

 

যে পরিমাণ তাপমাত্রা ক্ষতিকর

যদিও একেক জনের শারীরিক সহ্য ক্ষমতা একেক রকম। তারপরও নিরাপদ তাপমাত্রা বলে একটা বিষয় রয়েছে- মন্তব্য করেন মিল্টন।

তিনি বলেন, “৯১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় ‘হিট এক্সজশচন’ বা অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এই পর্যায়ে দেহ সঠিকভাবে রক্তসঞ্চালন করতে পারে না। ফলে ‘থার্মোরেগুলেইশন’ প্রক্রিয়াতে বাধা তৈরি হয়।”

‘হিট এক্সজশচন’-এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: জ্ঞান হারানো, অবসাদ এবং ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারা।

“৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দেহের ভেতরের তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৯৮.৬ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্য” – বলেন মিল্টন। “আর এটা হল গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে দেহের শেষ সীমানা।”

এর পরেই হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র কার্যকারিতা হারিয়ে- দ্বিধাগ্রস্ততা, মাথাঘোরা কিংবা অযৌক্তিক আচরণ দেখা দিতে পারে।

আর এই পরিস্থিতে তাৎক্ষণিকভাবে দেহ শীতল করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই জন্য বেশি গরমের মধ্যে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে নিষেধ করা হয়। অথবা দিনের যে সময়টা অপেক্ষাকৃত গরম কম থাকে যেমন- সকালে বা বিকালে তখন শরীরচর্চা করতে বলা হয়।

 

গরমে শরীরকে প্রস্তুত করার পন্থা

এক কথায় আর্দ্র থাকতে হবে।

এই পরামর্শ দিয়ে ‘নিউ ইয়র্ক প্রেসবিটিরিয়ান হসপিটাল কলাম্বিয়া’র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জেনিফার হেইথ বলেন, “গরমে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম শুরু করার আগে অবশ্যই দুই গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়া প্রতি ২০ মিনিট পরপর চার থেকে ছয় আউন্স (প্রায় এক কাপ) তরল পান করা জরুরি। এছাড়া ব্যায়াম শেষে অবশ্যই পানি পান করতে হবে।”

“ঘামের মাধ্যমেই প্রাথমিক অবস্থায় দেহ নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে দেহ পানি হারায়। এছাড়া ইলেক্ট্রোলাইটস, মানে লবণ বেরিয়ে যায়। আর কোষকলার স্বাভাবিক ক্রিয়ার জন্য সোডিয়াম বা লবণ হল মৌলিক একটি উপাদান”- বলেন ডা. হেইথ।

এই জন্য সাধারণ পানির চাইতে ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধি পানীয় পানের পরামর্শ দেন এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

প্রতি আট আউন্স বা এক কাপ পানির মধ্যে যেন ১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ২৮ মি.গ্রাম পটাসিয়াম এবং ১০০ মি.গ্রাম সোডিয়াম থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন ডা. হেইথ।

পাশাপাশি সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পনির, জলপাই, কলা ও বিটরুট খাওয়া উপকারী।

সূত্র :   ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম