সংরক্ষিত পদ বাদ দিলে রাকসুতে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৪.৪৫ শতাংশ।
রাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যায় হতাশা, নেপথ্যে কী

- আপডেট সময় ১১:৫৪:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে নারী প্রার্থীর নগণ্য সংখ্যায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অধিকারকর্মীরা।
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে নারী প্রার্থীর নগণ্য সংখ্যায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অধিকারকর্মীরা।
এর পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অহরহ ‘সাইবার বুলিং, ট্যাগিং ও স্লাট-শেমিংয়ের’ মত প্রবণতা এবং ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তার’ অভাবকে দায়ী করছেন তারা।
নারীদের হেয়-প্রতিপন্ন করে মানসিক পীড়নের প্রবণতা বাড়ার মধ্যে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি সাইবার সেলও গঠন করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা খুব বেশিদূর এগোয়নি বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর রোববার নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার আছেন মোট ২৮ হাজার ৯০৫ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন; যা মোট ভোটারের ৩৯.১ শতাংশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) ২৩ পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২৪৮ জন। এর মধ্যে ২৫ জন নারী বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন, যা মোট প্রার্থীর ১০ শতাংশ।
এই ২৫ জনের ১৪ জনই আবার নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে প্রার্থী হয়েছেন; যা মোট নারী প্রতিনিধিত্বের প্রায় ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ সংরক্ষিত আসন বাদ দিলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৪.৪৫ শতাংশ হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে একজন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে চারজন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে দুজন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
এ ছাড়া সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধির পাঁচটি পদের বিপরীতে ৫৮ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র আটজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে রয়েছেন। এ সংখ্যা মোট প্রার্থীল ১৩.৭ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “সাইবার বুলিং আসলেই একটা অ্যালার্মিং ইস্যু। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সাইবার বুলিং সেল গঠন করা হয়েছে।
“কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমি বলব, শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে এইসব হেনস্তাকারীকে বয়কট করতে হবে। আর যারা এই বুলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, তাদের শনাক্ত করে প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিলে আমরা তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনব।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাস এখন সরগরম।
নারীরা অনাগ্রহী, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে
রোববার কেন্দ্রীয় সংসদ ও ১৭টি হল সংসদের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নারীদের হলে ৯০টি এবং ছেলেদের হলে মোট ১৬৫টি পদ রয়েছে। ২৫৫টি পদের মধ্যে মোট ৪২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৯টি সম্পাদকীয় পদ এবং বাকি ১৩টি কার্যকরী সদস্য পদ।
৪২ জনের মধ্যে ৩৯ জনই ছাত্রী হলের; বাকি তিনজন ছাত্র হলের। মেয়েদের হলে ২৬ জন সম্পাদকীয় পদে এবং ১৩ জন সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন।
ছেলেদের একটি হলে তিনজন সম্পাদকীয় পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন।
ছেলেদের হলে কোনো পদ শূন্য না থাকলেও মেয়েদের হলে চারটি কার্যকরী সদস্য পদ শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ এসব পদে কেউ প্রার্থী হননি।
মেয়েদের হলে ৯০টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১৩৯ জন।
আর কেন্দ্রীয় সংসদ-রাকসুতে মোট পদ ২৩টি; সেখানে প্রার্থী হয়েছেন ২৪৮ জন।
নির্বাচনে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ কেন কম জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট শিক্ষার্থী প্রতিনিধি প্রার্থী রেনেসাঁ রাত্রী বলছিলেন, “নির্বাচনি প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে সাইবার বুলিং শুরু হয়েছে; তাতে নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। আমার নিজের ক্ষেত্রেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে আক্রমণাত্মক ভাষায় বুলিং করা হচ্ছে।”
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এবং রোকেয়া হলের ছাত্রী আসিয়া খাতুন বলেন, “রাকসু নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা খুবই দুঃখজনক। তবে আমি মনে করি, এটি কেবল সংখ্যার ঘাটতি নয় বরং আমাদের সামাজিক মানসিকতা ও পরিবেশের সীমাবদ্ধতার প্রতিচ্ছবি।
চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের এই ছাত্রী বলেন, “আমার কথা যদি বলি, একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রার্থী হওয়ার আগে আমি বেশ দ্বিধায় ছিলাম। কারণ, আমাদের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হল নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক বাধা এবং নানাভাবে নিরুৎসাহিত করার প্রবণতা আছে।
“তাছাড়া ক্যাম্পাস রাজনীতির পরিবেশ অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে সংঘাতমুখী হয়ে ওঠে; যা নারীদের নির্ভয়ে এগিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করে বলে মনে করি।”
সাইবার সেলের কাজ কতদূর
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৩০ অগাস্ট কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. একরামুল হামিদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি সাইবার সেল গঠন করে নির্বাচন কমিশন।
তবে কমিটি গঠনেই আটকে আছে কার্যক্রম। দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি সাইবার সেলের সদস্যদের।
৪ সেপ্টেম্বর ‘জুলাই ৩৬’ হলে নির্ধারিত সময়ের পরে প্রবেশ করায় ৯১ জন ছাত্রীকে তলব করেছিলেন প্রাধ্যক্ষ। তবে নোটিস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে হল প্রশাসন তা প্রত্যাহার করে। বিষয়টি নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি তাদের ফেইসবুক পেইজে এ খবর দিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নামের একটি ফেইসবুক গ্রুপে ফটোকার্ডটি শেয়ার করেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি জান্নাতুন নাঈম তুহিনা।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল ছাত্রদলের সহসভাপতি আনিসুর রহমান মিলন ওই ফটোকার্ডের নিচে লেখেন, “এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী।” সমালোচনার মুখে পরে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
নোটিস দেওয়ার কারণে নারীরা যে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন, তা স্বীকার করেছেন ‘জুলাই ৩৬’ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক লাভলী নাহার।
তিনি বলেন, “আমরা একটি কমিটির পরামর্শে কথা বলার জন্য নোটিস দিয়েছিলাম। তবে বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় নোটিসটি প্রত্যাহার করেছি। নোটিস দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তার জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।”
পরে ১৩ সেপ্টেম্বর ১১ জন নারী প্রার্থী সাত দফা সাইবার সুরক্ষা নীতিও প্রস্তাব করেন। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়নের কাজ এগোয়নি।
রাকসুর জিএস পদপ্রার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ বলেন, “নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার প্রধান কারণ হলো সাইবার বুলিং। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কোনো ক্যাম্পেইন বা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারেনি। এটাও অংশগ্রহণ কম হওয়ার একটি কারণ।”
রাকসুর সহমহিলা সম্পাদক পদপ্রার্থী নাদিয়া হক মিথী বলেন, “রাকসু নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ একেবারেই আশানুরূপ না। তার মূল কারণ হল সাইবার বুলিং এবং মিডিয়া ট্রায়ালের ভয়। এ ছাড়া নির্বাচন পরবর্তী ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অবস্থা এবং নারী হিসেবে সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেও অনেক শিক্ষার্থী যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি আমি মনে করি।”
এ বিষয়ে কথা বলতে সাইবার সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক একরামুল হামিদকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
রাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “আপনারা যদি সব মিলিয়ে হিসাব করেন, সেক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের পার্সেন্টেজ কম আসাই স্বাভাবিক। আমরা তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছি। কিন্তু তারা না আসতে চাইলে তো আর কিছু করার নেই। তবে বিগত রাকসু নির্বাচনের সঙ্গে যদি তুলনা করেন, সেক্ষেত্রে একেবারে হতাশাব্যাঞ্জক সংখ্যা নয় এটি।”
বুলিংয়ের ধরন
ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ‘জুলাই ৩৬’ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম তুহিনা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি। এবার নিজের হল সংসদের ভিপি পদে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তুহিনা আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা অনলাইন-অফলাইন দুভাবেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
“আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের ক্ষেত্রে বুলিং বেশি হলেও সাধারণ নারী শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নেই। সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বুলিং অন্যভাবে হয়ে থাকে। ‘এদের কেউ চেনে না, কে ভোট দেবে–এসব কথা বলেও অনেকসময় দমিয়ে রাখা হচ্ছে।”
অনলাইনে বুলিংয়ের ধরন তুলে ধরে ছাত্রদল নেতা তুহিনা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেইজ এবং গ্রুপে আমাদের বুলিং বলতে মূলত চরিত্রহনন করা হয়। ‘যৌনকর্মী’, ‘রাতের রাণী’, ‘নেতাদের পরী’- এগুলো এখন বুলিংয়ের সাধারণ ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ বুলিং হল- চরিত্রহনন এবং বডি শেমিং। আর এ কারণেই আমরা রাকসুর মত একটা নির্বাচনেও নারী শিক্ষার্থীদের এমন হতাশাজনক অংশগ্রহণ দেখতে পাচ্ছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই-৩৬ হল সংসদে জিএস পদপ্রার্থী তাবাসসুম সুপ্তি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে মননশীলতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ থাকার কথা, কিন্তু এখানে উল্টো সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিং বাড়ছে। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নারীরা নিয়মিত এ ধরনের বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
“এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন। নির্বাচনে প্রায় ১৪ হাজার নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৫০ জন নারীও প্রার্থী হননি; এর অন্যতম কারণ এমন সাইবার বুলিং।”
বিশ্ববিদ্যালয় সাইবার সেলের সদস্য প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানও সাইবার বুলিংকে নারী প্রার্থী কম হওয়ার মূল কারণ মানছেন।
তিনি বলেন, “এর আগে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে শাখা ছাত্রদলের এক নেতাকে ছাত্রদল আজীবন বহিষ্কার করে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।”
প্রতিকারের উপায় কী?
নারীরা সাইবার বুলিংয়ের জন্য সামনে আসছেন না–এ বিষয়টি যেমন হতাশাজনক, তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য নেত্রী হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, “নারীদের সামনে আসা উচিত, যাতে তারা এই ধরনের হেনস্তার জবাব সম্মুখে থেকে দিতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, শুধু সাইবার বুলিং নয়, এখানে আরো অনেক বিষয় আছে।”
সুস্মিতা বলেন, “যেসব কারণে নারী নেতৃত্বের অবস্থা এতটা ভয়াবহ। সে বিষয়গুলো কী, সেই প্রশ্ন আমারও। যথাযথ সভা, সেমিনার করে এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। শুধু চিহ্নিতই নয়; সেগুলো সমাধানে প্রশাসন, শিক্ষাক-শিক্ষার্থী সবার যুগপৎ উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।”
পারিবারিক চাপ, রাজনীতির প্রতি অনীহা এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে কম অংশগ্রহণের ‘বড় কারণ’ বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সোমা দেব।
তিনি বলেন, “আমার কাছে যেটা মনে হয়, বডি শেমিং এবং সাইবার বুলিং আসলে একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা যদি নারী শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, তাহলে হয়ত এই সংকট অনেকটা কেটে যাবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে মোটাদাগে যে কারণগুলো বলা হচ্ছে- এর বাইরে আমার মতে আরো কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট। আমাদের ছেলেরা রাজনীতি বিষয়ে যতটা সচেতন, সেই তুলনায় আমাদের মেয়েরা পিছিয়ে।”
তিনি বলেন, “বুলিং, হয়রানি, টিজিং- এগুলো অনেক আগে থেকেই ছিল। সমস্যাটা আমার, আপনার বা কোনো নারী শিক্ষার্থীর সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে, এক শ্রেণির ‘রুচিহীন’ মানুষের। যারা প্রতিনিয়ত এই কাজ করে আসছে। তাদের কাজই মেয়েদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা।
“ভয় পেলেই মেয়েরা পিছিয়ে পড়বে। এটাকে ভয় করা নয়, বরং মোকাবেলা করেই মেয়েদের এগিয়ে যেতে হবে।”
রাজশাহীর জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) দিল সেতারা চিনু বলেন, “যে কোনো ক্ষেত্রেই বুলিং, ট্যাগিং খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখান থেকে ভালো কিছু হবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু ট্যাগিং-বুলিং এখন ‘কালচারে’ পরিণত হয়েছে।”
যে কোনো কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে তাদের সমস্যাগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, সাইবার সেল এগুলো অ্যাকটিভ করতে হবে। নারীর সামাজিক ও ক্যাম্পাসে নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এগুলো করলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। আর নির্বাচনও নিয়মিত হতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে নারীরা উৎসাহী হবে, তাদের অংশগ্রহণও বাড়বে।”
নারী হলে প্রার্থিতার পরিস্থিতি
নারী হলে মোট ৯০টি পদের বিপরীতে ১৩৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন। এর মধ্যে সম্পাদকীয় ৬৬টি পদের ২৬টিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় প্রার্থীরা জিতে যাবেন। এ ছাড়া সম্পাদকীয় একটি পদে কোনো প্রার্থী নেই।
মন্নুজান হল
সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন এবং নির্বাহী সদস্য চারটি পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মোট পাঁচজন।
জুলাই-৩৬ হল
সহবিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, সহক্রীড়া সম্পাদক, সহসংস্কৃতি বিষয়ক এবং সহকমন রুম সম্পাদক পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। নির্বাহী সদস্য চার পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মাত্র তিনজন।
রোকেয়া হল
সহ বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, কমন রুম সম্পাদক, সহকারী কমন রুম সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন করে এবং নির্বাহী সদস্য চার পদের বিপরীতে তিনজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
রহমতুন্নেসা হল
বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, সহবিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, কমন রুম সম্পাদক, সহকমন রুম সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, সহ ক্রীড়া সম্পাদক একজন করে এবং নির্বাহী সদস্য চার পদের বিপরীতে তিনজন প্রার্থী হয়েছেন।
তাপসী রাবেয়া হল
সহকারী কমন রুম সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন করে এবং নির্বাহী সদস্য চারপদের বিপরীতে পাঁচজন প্রার্থী হয়েছেন।
খালেদা জিয়া হল
বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, সহকারী কমন রুম সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, সহক্রীড়া সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন করে এবং নির্বাহী সদস্য চার পদের বিপরীতে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। সহ বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম