রাতে শিক্ষার্থীরা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন একটি সামরিক বিমান দুটি বোমা নিক্ষেপ করে বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি।
রাখাইনে দুটি স্কুলে বিমান হামলায় শিক্ষার্থীসহ নিহত ১৮: সশস্ত্র গোষ্ঠী

- আপডেট সময় ১২:৪৫:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি স্কুল। ছবি: মিয়ানমার নাও
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে দুটি বেসরকারি স্কুলে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানিয়েছে।
এএ-র মুখপাত্র খাইং থুখা শুক্রবার রাতে আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, একটি যুদ্ধবিমান থায়েৎ থাপিন গ্রামের পিনিয়ার পান খিন ও আ মাইন থিত প্রাইভেট হাই স্কুলে দুটি বোমা ফেলেছে।
তার দাবি, নিহতদের অধিকাংশই ওই বেসরকারি স্কুলের ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী। তবে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি; মূলত এলাকাটিতে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
“নির্দোষ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে আমরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মতোই শোকাহত,” টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এএ, যারা হামলার জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছে।
রাখাইনে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী ওয়াই হুন আং বলেন, নিহতরা ওই স্কুলগুলোর হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। এ হামলায় আশপাশের অন্তত ছয়টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছে ২১ জন, যাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রাতে শিক্ষার্থীরা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন একটি সামরিক বিমান দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিক্ষেপ করে । তারা ধ্বংসস্তূপ ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি ও ভিডিওও প্রকাশ করেছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ এই ‘নৃশংস হামলা’র নিন্দা জানায়। সংস্থাটি বলেছে, “এটি রাখাইনে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ সহিংসতার ধারাবাহিকতারই অংশ, যেখানে শিশু ও পরিবারগুলো চূড়ান্ত মূল্য দিচ্ছে।”
আল জাজিরা জানিয়েছে, আগে আরাকান নামে পরিচিত রাখাইন ২০১৭ সালে সেনাদের দমন-অভিযানের সাক্ষী হয়েছিল। সে সময় দমনপীড়নের মুখে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘু বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
আরাকান আর্মি রাখাইন সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আন্দোলনের সামরিক শাখা। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়। তারা ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাখাইনে আক্রমণ শুরু করে এবং এরপর থেকে একটি কৌশলগত আঞ্চলিক সেনা সদরদপ্তরসহ রাজ্যটির ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে তারা মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মান্দালয় থেকে দক্ষিণপশ্চিমে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে কিয়াউকতাউ শহর দখল করে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করতে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের পর অনেকেই জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়, ফলে দেশের বড় অংশ এখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, এরপর থেকে দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৭২০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
সম্প্রতি জান্তা সরকার গণতন্ত্রপন্থি ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা বাড়িয়েছে। এসব বিমান হামলার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর কার্যকর কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম