তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। তবে গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে কোনো নীতিমালাতেই ব্যাংক খাত শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে ব্যাংকের কোনো নীতিমালাই কাজ করবে না : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

- আপডেট সময় ০৬:৫১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতের তদারকি কাঠামোতে সময়োপযোগী ও মৌলিক পরিবর্তন আনতে উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্য, তদারকি ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ, কার্যকর ও আধুনিক করা।’
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। তবে গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে কোনো নীতিমালাতেই ব্যাংক খাত শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, ‘ইতিমধ্যে ২০ ব্যাংকের সঙ্গে পাইলটিং কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬১ ব্যাংকেই রিস্ক বেজড সুপারভিশন চালু হবে। ১২টি ভাগে বিভক্ত ১২টি কমিটি গঠন করা হবে যারা ব্যাংকের চতুর্দিক থেকে, অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি সুপারভিশন করবে।
আমরা একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত গঠনের চেষ্টা করছি তবে সে জন্য রাজনৈতিক পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ না করা হয়। সংস্থাটাকে নিজের মতো যেন চলতে দেওয়া হয়।’
ব্যাংক মার্জার নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমরা ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গেই আলাদা আলাদা আবারও বৈঠক করব।
যদি তারা সংগত কারণ দেখাতে পারেন তাহলে মাজ হবে না। আমাদের জানা মতে, ছয়টি ব্যাংকই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সে জন্য তাদের মার্জের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বোর্ড পুনর্গঠনের পর কিছু ব্যাংক খুবই ভালো করছে। তবে যারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না প্রয়োজনে এসব ব্যাংকের বোর্ড আবার পুনর্গঠন করা হবে।
ইতিমধ্যে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি কেন তাদের বন্ধ করা হবে না তার উত্তর দেওয়ার জন্য। তারা যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে এবং সরকার সম্মত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমার ধারণা, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করতে হবে। শুধু ডলারভিত্তিক রিজার্ভব্যবস্থা থেকে পরিবর্তন এনে পণ্য মুদ্রা বা অন্য সম্পদ সঞ্চয় করা যায় কি না, সে বিষয়েও ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ইতিমধ্যে কিছু ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে এই তদারকি কাঠামো চালু করা হয়েছে। তাতে ইতিবাচক ফল আসায় আগামী জুলাই থেকে ধাপে ধাপে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত ও কৌশলগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হবে আরো নিখুঁতভাবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এতে করে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হবে।
এই কাঠামো চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তার অভ্যন্তরীণ সংগঠনে বড় ধরনের রদবদল আনছে। নতুন করে গঠন করা হবে একাধিক তদারকি বিভাগ। এর মধ্যে থাকবে তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত ঝুঁকি তদারকি বিভাগ। প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত থাকবে পৃথক তদারকি টিম।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নেও গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ কাজে সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো। তাদের কারিগরি সহায়তায় ইতিমধ্যে কিছু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তথ্যভিত্তিক তদারকি নিশ্চিত করতে তৈরি করা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি। একটি কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে সহজেই যেকোনো ব্যাংকের ঝুঁকি চিত্র বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এই রূপান্তরের ফলে দেশের ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতামূলক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে, তদারকি আরো ফলপ্রসূ হবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনে উৎসাহ মিলবে। একইসঙ্গে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আরো সুসংহত হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি আরো মজবুত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তর যাত্রায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কাম্য, যাতে সম্মিলিতভাবে একটি আধুনিক, ঝুঁকিসচেতন ও টেকসই ব্যাংকিং পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম