“পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে বা যাদের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে আসবে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।”
রাজবাড়ীর সহিংসতা: গ্রেপ্তারদের দুজন আওয়ামী লীগের, বলছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

- আপডেট সময় ০১:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৬ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ দরবারে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘সম্পৃক্ততার’ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, রাজবাড়ীতে গত শুক্রবার চারটি ঘটনা ঘটেছে—পুলিশ এবং প্রশাসনের গাড়ি ভাংচুর, মাজার ভাংচুর, কবর থেকে লাশ উত্তোলন এবং লাশ পুড়িয়ে ফেলা।
“এই চারটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে যিনি কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেছেন, তার নাম কাজী অপু—তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এই সাতজনের মধ্যে অন্তত দুজন রয়েছেন যারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
“তাদের একজন হচ্ছেন হিরু মৃধা, সাধারণ সম্পাদক গোয়ালন্দ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, এবং মাসুদ মৃধা, সভাপতি উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, গোয়ালন্দ থানা।”
পুরো ঘটনার ভিডিও বিশ্লেষণ চলছে জানিয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, “পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে বা যাদের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে আসবে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।”
নিজেকে ইমাম মাহাদি দাবি করা নুরুল হক সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর মাটি থেকে কিছুটা উপরে কবর তৈরি করে তাকে দাফন করা হয়। কবরটিতে কাবা শরিফের আদল দেওয়া হয়।
এ নিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের একটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল, যারা নিজেদের ‘তৌহিদী জনতা’ বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন। স্থানীয় প্রশাসন দুপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছিল, কিন্তু লাভ হয়নি।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিক্ষোভ থেকে নুরাল পাগলের দরবার শরীফে হামলা চালানো হয়। ফলে নুরাল পাগলের ভক্তদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে একজন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হন।
পরে নুরাল পাগলার দরবার শরীফে ঢুকে তার লাশ তুলে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।
ফরেন সার্ভিস একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, “আজকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত যে বৈঠক হয়েছে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে, সেখানেও এই ঘটনা সম্পর্কে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাননীয় উপদেষ্টাদের অবহিত করেছেন।
“তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্বে স্থানীয় ‘ঈমান ও আকিদা রক্ষা কমিটি’ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফা এবং উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা সভা করেছিল। সভা করে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিলেন, তারা তাদের কথা রাখেননি। এই বিষয়ে তাদের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, পুরো ঘটনায় সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
‘সরকারের একটা দায়িত্ব থাকে—নিন্দা জানানো’
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, “এই যে কয়েকটি ঘটনা—যেমন নুরুল হক নূরের উপর হামলা এবং রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার মাজারে যে ঘটনা ঘটল—এই দুই ঘটনায় সরকার খুব শক্তিশালী স্টেটমেন্ট দিয়েছে। সরকার নিন্দা জানিয়েছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে।
“এই সরকারি স্টেটমেন্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ নিয়ে এক ধরনের সমালোচনা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কেন স্টেটমেন্ট দিচ্ছে? সরকার কাকে নিন্দা জানাচ্ছে? সরকার এটার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব তো এগুলো ঠেকানো। এই সমালোচনাগুলো আপনি কীভাবে দেখছেন?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “ন্যক্কারজনক ঘটনা যদি ঘটে, সরকারের একটা দায়িত্ব থাকে—নিন্দা জানানো। এটা যে কোনো সরকারের জন্য স্বাভাবিক দায়িত্ব। যে কোনো দেশে যে কোনো সরকার যে ঘটনা নিন্দনীয় মনে করে, সেটি নিন্দা জানানো সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
“আর যদি কেউ বলতে চায়, ‘এই ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে?’—তাহলে বলতে হবে যে রাজবাড়ীর ঘটনায় ডিসি ওই কমিটির সঙ্গে দুই দফা মিটিং করেছেন। টিএনও একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বারবার মিটিং করা হচ্ছে। তারা প্রেস ক্লাবে কমিটমেন্টের কথাও বলেছেন, যে তারা বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রাখবে।”
প্রেস সচিব বলেন, “যদি তারপরে এই ঘটনা ঘটে, এটি নিঃসন্দেহে ন্যক্কারজনক। এটা সরকারের দায়িত্ব যে এটি নিন্দা করবে। সরকার এই বিষয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলতে বাধ্য।
“আর অ্যাকশন? প্রত্যেক ঘটনায় আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি, বসে নেই। নুরুল হক নূরের ঘটনায় আমরা ঘোষণা দিয়েছি যে একটি ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখবে, ঘটনা কোথায়, কীভাবে ঘটল, কার দোষ ছিল এবং কেন ঘটনা ঘটল—সবই দেখা হচ্ছে।”
‘ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, পৃথিবীর কোনো শক্তি ঠেকাতে পারবে না’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রেস সচিব নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের বুঝতে হবে যে এই আগস্ট ৫-এর পরে ১,৬১৫টির মত ঘটনা ঘটেছে—প্রোটেস্ট বা বিভিন্ন কর্মসূচি। গড়ে প্রতিদিন প্রায় চারটি করে ইনসিডেন্ট বা প্রোটেস্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে এর মধ্যে ৬০০টি ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত।
“প্রত্যেকটি বিষয়ই আসলে বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতির প্রতিফলন। বিপ্লবের পরে মানুষের মধ্যে যে এক্সপেক্টেশন তৈরি হয়েছে, সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে যে সবাই প্রোটেস্ট করছেন। সবাই তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় আসছেন। প্রত্যেকটি গ্রুপ কোনো না কোনো দাবিতে আন্দোলনে নামছে। কারণ গত ১৫ বছরে আগের সরকার অনেক বেশি দমনমূলক ছিল এবং আগের সরকার নির্মমভাবে এসব প্রোটেস্টকে দমন করেছে। এখন সবাই প্রোটেস্ট করছেন এবং তাদের দাবি-দাওয়া এই সরকারের সময় তুলে ধরছেন।”
এ সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে’ এসব বিষয় মোকাবেলা করছে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি এবং আজকের মিটিংয়েও বলা হয়েছে যে নির্বাচন যেভাবেই হোক, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তিই এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন হবেই এবং সে বিষয়ে যত ধরনের প্রস্তুতি দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে।”
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম