রাশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত কুর্স্ক অঞ্চল পুনর্গঠনে সাহায্য করতে হাজার হাজার শ্রমিক পাঠাবে উত্তর কোরিয়া- বলেছেন রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু।
রাশিয়ার কুর্স্ক পুনর্গঠনেও এবার সহায়তা করবে উত্তর কোরিয়া

- আপডেট সময় ০৯:৫৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
ইউক্রেইনের হাত থেকে সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চল পুনর্দখল করতে রাশিয়াকে সেনা পাঠিয়ে সহায়তা করেছিল উত্তর কোরিয়া। এবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চল পুনর্গঠনে সাহায্য করতে উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার শ্রমিক পাঠাবে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু এ খবর জানিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার পিয়ংইয়ংয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জ-উনের সঙ্গে বৈঠকের পর শোইগু বলেছেন, শ্রমিক পাঠানোর এই পদক্ষেপকে ‘ভ্রাতৃত্বসুলভ সহায়তা’ হিসেবে দেখছে মস্কো।
ওদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সঙ্গে সঙ্গেই এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। সিউল বলেছে, এটি উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন।
গত কয়েক মাস ধরে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। হাজার হাজার উত্তর কোরীয় সেনা ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করছে এমন খবরে উদ্বেগ দেখা দেয়।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস বুধবার জানায়- শোইগু বলেছেন, কুর্স্ক পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য উত্তর কোরিয়া এক ডিভিশন নির্মাণকারী, পাঁচ হাজার মানুষের দুটি সামরিক ব্রিগেড এবং মাইন অপসারণে সহায়তার জন্য এক হাজার কর্মী পাঠাবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, কিম ও শোইগুর মধ্যে অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
গত বছর অগাস্টে আচমকা রুশ সীমান্তের কুরস্কে ঢুকে আক্রমণ করে বসে ইউক্রেইনীয় সেনারা। এ ঘটনা রাশিয়া ও বিশ্বকে বিস্মিত করেছিল। ১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে নাৎসি আক্রমণের পর এটি রাশিয়ার সার্বভৌম ভূখণ্ডে হওয়া সবচেয়ে বড় হামলা ছিল।
প্রায় বিনাবাধায় ইউক্রেইনীয় সেনারা কুর্স্কের ভেতরে ঢুকে পড়ে দ্রুত রাশিয়ার ১৩৭৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত সেনা না থাকায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সরু একটি এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়া অতিরিক্ত সেনা হিসেবে অভিজাত ইউনিটগুলোকে ও শীর্ষ ড্রোন বাহিনীকে নিয়ে কুর্স্কে নিয়ে এলে পরিস্থিতি উল্টে যায়। রাশিয়ার অতিরিক্ত এসব সেনারা পাশাপাশি সেখানে উত্তর কোরিয়ার বাহিনীও হাজির হয়।
তারা ইউক্রেইনের অবস্থান ঘিরে আক্রমণ তীব্র করে তোলে। এই আক্রমণের মুখে পরে ইউক্রেইনীয় বাহিনী কুর্স্ক থেকে পশ্চাদপসরণ করতে শুরু করে।
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার এই সহযোগিতা নিয়ে প্রথম থেকেই উদ্বেগে ছিল প্রতিবেশী দেশগুলো। এবারও কুরস্ক পুনর্গঠনে উত্তর কোরিয়ার সহায়তার খবরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে অব্যাহত ‘অবৈধ সহযোগিতায়’ তাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, উত্তর কোরিয়ায় শ্রমিক এবং ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার উত্তর কোরীয় সেনা ব্যবহার “গভীরভাবে উদ্বেগজনক”।
গত বছরের নভেম্বরে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উভয় দেশ বলেছে, যে কোনো আগ্রাসনের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহায়তা করবে তারা। কিম জং-উন এই সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছানো বলে মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১৫ হাজার নাগরিক কাজ করছে, যা পিয়ংইয়ংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রার উৎস।
এর বাইরে, জানুয়ারিতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিবিসি-কে বলেছিলেন, রাশিয়ায় থাকা প্রায় ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনার মধ্যে অন্তত ১ হাজার জন নিহত হয়েছেন মাত্র তিন মাসের মধ্যে।
এপ্রিল মাসে এক দক্ষিণ কোরীয় সংসদ সদস্য বলেন, তাদের তথ্য মতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৭০০ উত্তর কোরীয় হতাহত হয়েছে, যার মধ্যে ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সহায়তার বিনিময়ে পিয়ংইয়ং নগদ অর্থ অথবা রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তির নাগাল পেতে পারে।
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া এপ্রিল মাসে প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় সেনার উপস্থিতি স্বীকার করে। তখনই এই স্বীকারোক্তির নিন্দা জানিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
সিউল তখন বলেছিল, এই সেনা মোতায়েন জাতিসংঘ সনদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের সরাসরি লঙ্ঘন। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধ চলার মধ্যেই উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে দুই দেশ।