০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাংবাদিকদের হয়রানি ও বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না, বলেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ‘অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’, বললেন টিআই চেয়ারম্যান

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান - বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

টিআই চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রীয় সংস্কার ‘অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে মন্তব্য করছেন সফররত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।

পাশাপাশি সহিংসতা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিন দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে টিআই প্রধান ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, “রাষ্ট্রীয় সংস্কার অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আমাদের বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতায়, এগুলো কেবল তখনই সফল হতে পারে, যদি তারা একটি টেকসই ছন্দে এবং একটি স্পষ্ট রোডম্যাপসহ ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে স্থির থাকে।”

তিনি বলেন, “পরিশেষে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- সহিংসতা, ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সাংবাদিকদের হয়রানি এবং যেকোনো কারণে কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না।”

‘জনগণের শক্তি এবং কর্তৃত্ববাদের পতন: গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং জবাবদিহিমূলক শাসনের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নাগরিক সমাজ, দূতাবাস এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অন্য অংশীজনরাও উপস্থিত ছিলেন বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার তিন দিন পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন ও সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা জুলাই জাতীয় সনদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সভায় টিআই চেয়ারম্যান বলেন, “গত অগাস্টে উৎখাত হওয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা বিপুল পরিমাণ অর্থ (১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে) চুরি করেছে এবং দুর্নীতির বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। যা দুই মাসেরও কম সময় আগে লন্ডনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং আমাদের ব্রিটিশ চ্যাপ্টারের যৌথ অ্যাডভোকেসির পর ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের রিয়েল এস্টেট জব্দ করার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

“প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির অর্থনীতি রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল জনসাধারণের চুরি যাওয়া অর্থ বা রাজনৈতিক নেতাদের ঘুষ দেওয়া হয়, যার ফলে বেশিরভাগ দেশকে দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত অফশোর বা ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি দেশে বিনিয়োগ করতে হয়।”

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত হওয়া কাজকে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি সংস্কার কমিশনের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাতে চাই, যারা নতুন বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

“আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কী করা হয়েছে এবং কী করা বাকি আছে তা নিয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে উপযুক্ত হবে না।”

ভ্যালেরিয়াঁর ভাষায়, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিচার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে, কেবল অতীত এবং সাম্প্রতিক অতীতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও।

“এটি সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতোই এর পর্যাপ্ত কর্মী এবং রিসোর্স থাকতে হবে। এটিকে প্রতিটি স্তরে সততার সাথে কাজ করতে হবে।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

সাংবাদিকদের হয়রানি ও বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না, বলেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ‘অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’, বললেন টিআই চেয়ারম্যান

আপডেট সময় ১১:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রীয় সংস্কার ‘অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে মন্তব্য করছেন সফররত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।

পাশাপাশি সহিংসতা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিন দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে টিআই প্রধান ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, “রাষ্ট্রীয় সংস্কার অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আমাদের বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতায়, এগুলো কেবল তখনই সফল হতে পারে, যদি তারা একটি টেকসই ছন্দে এবং একটি স্পষ্ট রোডম্যাপসহ ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে স্থির থাকে।”

তিনি বলেন, “পরিশেষে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- সহিংসতা, ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সাংবাদিকদের হয়রানি এবং যেকোনো কারণে কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না।”

‘জনগণের শক্তি এবং কর্তৃত্ববাদের পতন: গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং জবাবদিহিমূলক শাসনের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নাগরিক সমাজ, দূতাবাস এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অন্য অংশীজনরাও উপস্থিত ছিলেন বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার তিন দিন পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন ও সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা জুলাই জাতীয় সনদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সভায় টিআই চেয়ারম্যান বলেন, “গত অগাস্টে উৎখাত হওয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা বিপুল পরিমাণ অর্থ (১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে) চুরি করেছে এবং দুর্নীতির বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। যা দুই মাসেরও কম সময় আগে লন্ডনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং আমাদের ব্রিটিশ চ্যাপ্টারের যৌথ অ্যাডভোকেসির পর ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের রিয়েল এস্টেট জব্দ করার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

“প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির অর্থনীতি রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল জনসাধারণের চুরি যাওয়া অর্থ বা রাজনৈতিক নেতাদের ঘুষ দেওয়া হয়, যার ফলে বেশিরভাগ দেশকে দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত অফশোর বা ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি দেশে বিনিয়োগ করতে হয়।”

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত হওয়া কাজকে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি সংস্কার কমিশনের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাতে চাই, যারা নতুন বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

“আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কী করা হয়েছে এবং কী করা বাকি আছে তা নিয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে উপযুক্ত হবে না।”

ভ্যালেরিয়াঁর ভাষায়, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিচার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে, কেবল অতীত এবং সাম্প্রতিক অতীতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও।

“এটি সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতোই এর পর্যাপ্ত কর্মী এবং রিসোর্স থাকতে হবে। এটিকে প্রতিটি স্তরে সততার সাথে কাজ করতে হবে।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম