০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“ডিম, মুষ্ট্যাঘাত এবং এ ধরনের নাটক কারও মতামত পরিবর্তন করে না; বরং এটি প্রমাণ করে আপনার যুক্তি ফুরিয়ে গেছে,” বলা হয় বিবৃতিতে।

লন্ডনে মাহফুজের ওপর ‘হামলার প্রচেষ্টায়’ সরকারের তীব্র নিন্দা

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০১:২০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ফাইল ছবি

 

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর ‘হামলার প্রচেষ্টায় তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

লন্ডনের পুলিশকে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছে ড. ইউনূসের সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তির অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং সাময়িকভাবে পথরোধের চেষ্টা চালায়।

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার সময় মাহফুজ আলম গাড়ির ভেতরে ছিলেন না বলেও সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হয় বিবৃতিতে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ পুরো সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, লন্ডনের এ ঘটনা কয়েক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে মাহফুজ আলমের ওপর হওয়া হামলার পরপরই ঘটেছে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেলের এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (কিছু সূত্র মতে বোতলও) নিক্ষেপ করে এবং কাঁচের দরজা ভেঙে ফেলে। পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় কার্যালয়সহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেয় কনসুলেট।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই হয়রানিমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

”আমাদের সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং আয়োজক দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ সভ্য মূল্যবোধের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এই গোষ্ঠীগুলি বর্বরতা ও দুর্বৃত্তপনার আশ্রয় নিয়েছে।”

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, “গণতন্ত্রে এমন আচরণের কোনো স্থান নেই—যেখানে তর্কের জায়গায় হামলা এবং বিতর্কের জায়গায় হিংস্রতা স্থান নেয়। আমরা নিউইয়র্ক ঘটনার পর বলেছিলাম: সহিংসতা কখনো বিক্ষোভ নয়, আর ভীতি প্রদর্শন মুক্ত বাকস্বাধীনতার অংশ নয়। লন্ডনের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য।”

বিবৃতিতে সরকার ‘স্মরণ করিয়ে’ দিয়েছে বলেছে, বাকস্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও প্রতিবাদ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, তবে তা পালন করতে হবে দায়িত্বশীলতা ও সম্মানের সঙ্গে।

সরকার বলছে, কনস্যুলার গাড়ি বা সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুধু বেপরোয়া নয়, এটি জাতির মধ্যে সংলাপের নীতি লঙ্ঘন করে।

বিবৃতিতে সরকার মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে সমন্বয় অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

হামলার সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, “বড় হোন। যদি আপনার মতাদর্শে বিশ্বাস থাকে, তা প্রকাশ করুন শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে। ডিম, মুষ্ট্যাঘাত এবং এ ধরনের নাটক কারও মতামত পরিবর্তন করে না; বরং এটি প্রমাণ করে আপনার যুক্তি ফুরিয়ে গেছে।”

সরকার বিশ্ববিদ্যালয়, আয়োজক এবং প্রবাসী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুশৃঙ্খল আলোচনার পক্ষে দাঁড়াতে। কঠিন বিষয় নিয়েও আলোচনা হোক, কিন্তু বক্তা, শ্রোতা এবং আইনসঙ্গত প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা যেন সবার আগে নিশ্চিত হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র আবেগের দাবি রাখে, কিন্তু পাশাপাশি আত্মনিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন। বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো এমন এক গণতন্ত্র, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষিত হয়—এই লক্ষ্য অর্জনে আবেগ ও নিয়ন্ত্রণ দুটোই প্রয়োজন।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“ডিম, মুষ্ট্যাঘাত এবং এ ধরনের নাটক কারও মতামত পরিবর্তন করে না; বরং এটি প্রমাণ করে আপনার যুক্তি ফুরিয়ে গেছে,” বলা হয় বিবৃতিতে।

লন্ডনে মাহফুজের ওপর ‘হামলার প্রচেষ্টায়’ সরকারের তীব্র নিন্দা

আপডেট সময় ০১:২০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর ‘হামলার প্রচেষ্টায় তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

লন্ডনের পুলিশকে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছে ড. ইউনূসের সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তির অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং সাময়িকভাবে পথরোধের চেষ্টা চালায়।

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার সময় মাহফুজ আলম গাড়ির ভেতরে ছিলেন না বলেও সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হয় বিবৃতিতে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ পুরো সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, লন্ডনের এ ঘটনা কয়েক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে মাহফুজ আলমের ওপর হওয়া হামলার পরপরই ঘটেছে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেলের এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (কিছু সূত্র মতে বোতলও) নিক্ষেপ করে এবং কাঁচের দরজা ভেঙে ফেলে। পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় কার্যালয়সহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেয় কনসুলেট।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই হয়রানিমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

”আমাদের সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং আয়োজক দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ সভ্য মূল্যবোধের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এই গোষ্ঠীগুলি বর্বরতা ও দুর্বৃত্তপনার আশ্রয় নিয়েছে।”

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, “গণতন্ত্রে এমন আচরণের কোনো স্থান নেই—যেখানে তর্কের জায়গায় হামলা এবং বিতর্কের জায়গায় হিংস্রতা স্থান নেয়। আমরা নিউইয়র্ক ঘটনার পর বলেছিলাম: সহিংসতা কখনো বিক্ষোভ নয়, আর ভীতি প্রদর্শন মুক্ত বাকস্বাধীনতার অংশ নয়। লন্ডনের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য।”

বিবৃতিতে সরকার ‘স্মরণ করিয়ে’ দিয়েছে বলেছে, বাকস্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও প্রতিবাদ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, তবে তা পালন করতে হবে দায়িত্বশীলতা ও সম্মানের সঙ্গে।

সরকার বলছে, কনস্যুলার গাড়ি বা সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুধু বেপরোয়া নয়, এটি জাতির মধ্যে সংলাপের নীতি লঙ্ঘন করে।

বিবৃতিতে সরকার মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে সমন্বয় অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

হামলার সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, “বড় হোন। যদি আপনার মতাদর্শে বিশ্বাস থাকে, তা প্রকাশ করুন শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে। ডিম, মুষ্ট্যাঘাত এবং এ ধরনের নাটক কারও মতামত পরিবর্তন করে না; বরং এটি প্রমাণ করে আপনার যুক্তি ফুরিয়ে গেছে।”

সরকার বিশ্ববিদ্যালয়, আয়োজক এবং প্রবাসী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুশৃঙ্খল আলোচনার পক্ষে দাঁড়াতে। কঠিন বিষয় নিয়েও আলোচনা হোক, কিন্তু বক্তা, শ্রোতা এবং আইনসঙ্গত প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা যেন সবার আগে নিশ্চিত হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র আবেগের দাবি রাখে, কিন্তু পাশাপাশি আত্মনিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন। বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো এমন এক গণতন্ত্র, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষিত হয়—এই লক্ষ্য অর্জনে আবেগ ও নিয়ন্ত্রণ দুটোই প্রয়োজন।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম