০৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
“আমাদের অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু যেটার কমতি আছে, সেটা হল সাধনা। সংগীতে অল্পতে কিছু হয় না; সাধনা করতে হয়,” নতুন প্রজন্মকে নিয়ে মূল্যায়ন ফেরদৌসীর।

শনিবার ৮৫ বছর বয়সে পা রাখছেন শিল্পী ফেরদৌসী: যতটা চেয়েছি, পেয়েছি অনেক বেশি

বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

জীবনে অতৃপ্তি খুব বেশি নেই, যা চেয়েছেন তার চেয়েও বেশি পেয়েছেন বলে জন্মদিনের প্রাক্কালে গণমাধ্যমকে বললেন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।

 

জীবনে অতৃপ্তি খুব বেশি নেই, যা চেয়েছেন তার চেয়েও বেশি পেয়েছেন বলে জন্মদিনের প্রাক্কালে বললেন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।

তিনি বলেন, “আমি যেভাবে জীবন কাটিয়েছি, আমার কাছে জীবন তো সেটাই। আমি আল্লাহর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, জীবনে আমি যতটা চেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আল্লাহ আমাকে এত কিছু দিয়েছেন যে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে বড় কথা যে এত ভালো মা-বাবা দিয়েছেন।

“অনেকের ভাগ্যে এমন পরিবার হয়নি, আমি পেয়েছি। আব্বা-আম্মা আর আমার দুই ভাই। একটা অদ্ভুত ভালো ফ্যামিলি পেয়েছি। এজন্যও আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

পল্লিগীতির সম্রাটখ্যাত আব্বাসউদ্দীনের মেয়ে ফেরদৌসীর সংগীতের সঙ্গে বসবাস খুব ছোটবেলা থেকেই। সংগীতের মতো এগিয়ে ছিলেন লেখাপড়াতেও। ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় ‘স্ট্যান্ড করা’ ছাত্রী তিনি। মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি।

মেট্রিকে ভালো ফল করার কারণে ওই বছরই প্রথম ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করা হয় তার।

সেই স্মৃতি মনে করে ফেরদৌসী রহমান শুক্রবার দুপুরে বলেন, “সেভাবে আমার জন্মদিন কখনোই পালন করা হত না। তখন আমার মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছিল; জন্মদিনের দুদিন আগে; ২৬ জুন। আমি মেয়েদের মধ্যে প্রথম আর ছেলে-মেয়ে উভয়ের মাঝে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আব্বা খুশি হয়ে বললো, এবার জন্মদিন পালন করা হবে। এটাই আমার সবচেয়ে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা।

“পল্টনের বাসায় অনেকে এলেন। গান হলো, কবিতা আবৃত্তি হলো। পরে আর কখনো সেভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। চ্যানেল আই মাঝে মাঝে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করত। বাড়িতেও খুবই সীমিত আয়োজনে হয়ত কিছু করেছি। তবে ঘটা করে জন্মদিন পালন আর হয়নি।”

১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জন্ম ফেরদৌসীর। শনিবার ৮৫ বছর বয়সে পা রাখছেন এ শিল্পী।

এবারের জন্মদিনে আয়োজন জানতে চাইলে ফেরদৌসী রহমান বলেন, “কয়েক বছর ধরে তো শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। আর আমার জন্মদিন ঘটা করে তেমন একটা করা হয় না। আমার স্বামী যখন বেঁচেছিলেন, তখন বাড়িতেই হয়ত কিছু একটা করা হতো। আত্মীয়-স্বজনের কেউ কেউ আসতো।”

বড় কোনো অতৃপ্তি না থাকলেও ছোট ছোট কিছু অতৃপ্তি রয়েছে জানিয়ে এ সংগীতশিল্পী বলেন, “অতৃপ্তি কিছু তো থেকেই যায়। মনে হয়, এটা কেন করলাম না; ওই কাজটা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে করতে পারতাম— এরকম কিছু অতৃপ্তি তো থেকেই যায়।

“মাঝে মাঝে মনে হয়, সত্যিই তো আমার আরও অনেক কিছুই করার ছিল। হয়ত আমি একটু অলস। তবুও আমি কিছুটা করার চেষ্টা করেছি। আমি পিছিয়ে থাকিনি। আমার বিরাট কোনো অতৃপ্তি নেই।”

বাবার নামে একটা সংগীত একাডেমি করলেও তা নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে জানালেন ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, “আমার একটু অতৃপ্তি আছে। আমি আব্বার নামে একটা একাডেমি করেছিলাম। সেটাকে অন্যরকমভাবে দেখে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি কারো কাছে কিছু চাইতে পারি না। কারো কাছে কিছু চেয়ে নিতে হবে, সেটা শিখিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখলাম, না চাইলে কিছু পাওয়া যায় না। আল্লাহর কাছেও কিছু না চাইলে পাওয়া যায় না। চাইতে হয়।

“সরকারের কাছে হয়ত চাইলে পেতাম। যেকোনো সরকারের কাছেই যদি বলতাম, যে আব্বাস উদ্দীনের নামে এই একাডেমিটা নিয়ে কিছু করতে চাই, তাহলে হয়ত পেতাম। কিন্তু কারো কাছে কিছু চাইনি। চাইলে হয়ত আমার অপূর্ণ স্বাদটা পূর্ণ হত।”

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ফেরদৌসী রহমানের গানের পরিবেশনা দিয়েই বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের পথচলা শুরু হয়েছিল। বিটিভিতে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশজুড়ে পরিচিতি পান তিনি।

ফেরদৌসী রহমান বলেন, “বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই তো আছি, গান করছি। কয়েক বছর আগেও ‘এসো গান শিখি’ প্রোগ্রামটা করেছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। আর করা হয়নি।”

১৯৭৭ সালে সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পান ফেরদৌসী রহমান। এছাড়া স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, চুরুলিয়া নজরুল স্বর্ণপদকসহ আরো অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।

ফেরদৌসী বলেন, “আমি সামান্য গান শিখেছি, কিন্তু বিনিময়ে যে আমি এত পেয়েছি, তাতে আমার কতটা শুকরিয়া আদার করতে হয়, জানা নেই। আমি অনেক বেশি পেয়েছি। সেদিক থেকে আমি ভাগ্যবতী। এর জন্য আমি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে এত ভালোবাসেন।

“আমি একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছি। আরও কিছু কিছু পদক-পুরস্কার পেয়েছি। এগুলো না পেলেও আমার কিছুই হত না। কারণ সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি তো মানুষের ভালোবাসা, সেটা আমি পেয়েছি। আমার যে শ্রোতা, তাদের কাছে প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি।”

বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশে ফেরদৌসী রহমান বলেন, “আমাদের অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু যেটার কমতি আছে, তা হল সাধনা। এখন আমরা অনেকেই অল্পতেই সাফল্য চাই। অল্পতেই নামডাক চাই, সেটা তো হয় না। সংগীতে অল্পতে কিছু হয় না। সাধনা করতে হয়।”

এবারের জন্মদিনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে শনিবার থাকবেন ফেরদৌসী রহমান। তার জন্মদিন ঘিরে চ্যানেল আইয়ের এ বিশেষ অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকবে ফেরদৌসী রহমানের ছোটবেলা ও সংগীতজীবনের নানা গল্প।

ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী ও গুল মোহাম্মদ খানের মতো সঙ্গীতজ্ঞের কাছেও তালিম নেন ফেরদৌসী। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে তিনি লোকসংগীত, আধুনিক, উচ্চাঙ্গসংগীত, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, প্লেব্যাক সব ধরনের গানেই কণ্ঠ দিয়েছেন।

তিনি আট বছর বয়সে রেডিওতে ‘খেলাঘর’ নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ফেরদৌসী রহমানের বড় ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল। আরেক ভাই মোস্তফা জামান আব্বাসী।

১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নেপথ্য কণ্ঠ দেন। ষাট ও সত্তরের দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার প্লেব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০টির কাছাকাছি।

১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম রেডিওতে গান করেন। তখন তিনি রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন।

২৭ ডিসেম্বর ‘এসো গান শিখি’ গানের অনুষ্ঠান শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন এইচএমভি থেকে।

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

 

 

বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“আমাদের অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু যেটার কমতি আছে, সেটা হল সাধনা। সংগীতে অল্পতে কিছু হয় না; সাধনা করতে হয়,” নতুন প্রজন্মকে নিয়ে মূল্যায়ন ফেরদৌসীর।

শনিবার ৮৫ বছর বয়সে পা রাখছেন শিল্পী ফেরদৌসী: যতটা চেয়েছি, পেয়েছি অনেক বেশি

আপডেট সময় ১১:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

 

জীবনে অতৃপ্তি খুব বেশি নেই, যা চেয়েছেন তার চেয়েও বেশি পেয়েছেন বলে জন্মদিনের প্রাক্কালে বললেন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।

তিনি বলেন, “আমি যেভাবে জীবন কাটিয়েছি, আমার কাছে জীবন তো সেটাই। আমি আল্লাহর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, জীবনে আমি যতটা চেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আল্লাহ আমাকে এত কিছু দিয়েছেন যে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে বড় কথা যে এত ভালো মা-বাবা দিয়েছেন।

“অনেকের ভাগ্যে এমন পরিবার হয়নি, আমি পেয়েছি। আব্বা-আম্মা আর আমার দুই ভাই। একটা অদ্ভুত ভালো ফ্যামিলি পেয়েছি। এজন্যও আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

পল্লিগীতির সম্রাটখ্যাত আব্বাসউদ্দীনের মেয়ে ফেরদৌসীর সংগীতের সঙ্গে বসবাস খুব ছোটবেলা থেকেই। সংগীতের মতো এগিয়ে ছিলেন লেখাপড়াতেও। ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় ‘স্ট্যান্ড করা’ ছাত্রী তিনি। মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি।

মেট্রিকে ভালো ফল করার কারণে ওই বছরই প্রথম ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করা হয় তার।

সেই স্মৃতি মনে করে ফেরদৌসী রহমান শুক্রবার দুপুরে বলেন, “সেভাবে আমার জন্মদিন কখনোই পালন করা হত না। তখন আমার মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছিল; জন্মদিনের দুদিন আগে; ২৬ জুন। আমি মেয়েদের মধ্যে প্রথম আর ছেলে-মেয়ে উভয়ের মাঝে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আব্বা খুশি হয়ে বললো, এবার জন্মদিন পালন করা হবে। এটাই আমার সবচেয়ে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা।

“পল্টনের বাসায় অনেকে এলেন। গান হলো, কবিতা আবৃত্তি হলো। পরে আর কখনো সেভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। চ্যানেল আই মাঝে মাঝে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করত। বাড়িতেও খুবই সীমিত আয়োজনে হয়ত কিছু করেছি। তবে ঘটা করে জন্মদিন পালন আর হয়নি।”

১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জন্ম ফেরদৌসীর। শনিবার ৮৫ বছর বয়সে পা রাখছেন এ শিল্পী।

এবারের জন্মদিনে আয়োজন জানতে চাইলে ফেরদৌসী রহমান বলেন, “কয়েক বছর ধরে তো শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। আর আমার জন্মদিন ঘটা করে তেমন একটা করা হয় না। আমার স্বামী যখন বেঁচেছিলেন, তখন বাড়িতেই হয়ত কিছু একটা করা হতো। আত্মীয়-স্বজনের কেউ কেউ আসতো।”

বড় কোনো অতৃপ্তি না থাকলেও ছোট ছোট কিছু অতৃপ্তি রয়েছে জানিয়ে এ সংগীতশিল্পী বলেন, “অতৃপ্তি কিছু তো থেকেই যায়। মনে হয়, এটা কেন করলাম না; ওই কাজটা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে করতে পারতাম— এরকম কিছু অতৃপ্তি তো থেকেই যায়।

“মাঝে মাঝে মনে হয়, সত্যিই তো আমার আরও অনেক কিছুই করার ছিল। হয়ত আমি একটু অলস। তবুও আমি কিছুটা করার চেষ্টা করেছি। আমি পিছিয়ে থাকিনি। আমার বিরাট কোনো অতৃপ্তি নেই।”

বাবার নামে একটা সংগীত একাডেমি করলেও তা নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে জানালেন ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, “আমার একটু অতৃপ্তি আছে। আমি আব্বার নামে একটা একাডেমি করেছিলাম। সেটাকে অন্যরকমভাবে দেখে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি কারো কাছে কিছু চাইতে পারি না। কারো কাছে কিছু চেয়ে নিতে হবে, সেটা শিখিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখলাম, না চাইলে কিছু পাওয়া যায় না। আল্লাহর কাছেও কিছু না চাইলে পাওয়া যায় না। চাইতে হয়।

“সরকারের কাছে হয়ত চাইলে পেতাম। যেকোনো সরকারের কাছেই যদি বলতাম, যে আব্বাস উদ্দীনের নামে এই একাডেমিটা নিয়ে কিছু করতে চাই, তাহলে হয়ত পেতাম। কিন্তু কারো কাছে কিছু চাইনি। চাইলে হয়ত আমার অপূর্ণ স্বাদটা পূর্ণ হত।”

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ফেরদৌসী রহমানের গানের পরিবেশনা দিয়েই বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের পথচলা শুরু হয়েছিল। বিটিভিতে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশজুড়ে পরিচিতি পান তিনি।

ফেরদৌসী রহমান বলেন, “বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই তো আছি, গান করছি। কয়েক বছর আগেও ‘এসো গান শিখি’ প্রোগ্রামটা করেছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। আর করা হয়নি।”

১৯৭৭ সালে সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পান ফেরদৌসী রহমান। এছাড়া স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, চুরুলিয়া নজরুল স্বর্ণপদকসহ আরো অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।

ফেরদৌসী বলেন, “আমি সামান্য গান শিখেছি, কিন্তু বিনিময়ে যে আমি এত পেয়েছি, তাতে আমার কতটা শুকরিয়া আদার করতে হয়, জানা নেই। আমি অনেক বেশি পেয়েছি। সেদিক থেকে আমি ভাগ্যবতী। এর জন্য আমি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে এত ভালোবাসেন।

“আমি একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছি। আরও কিছু কিছু পদক-পুরস্কার পেয়েছি। এগুলো না পেলেও আমার কিছুই হত না। কারণ সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি তো মানুষের ভালোবাসা, সেটা আমি পেয়েছি। আমার যে শ্রোতা, তাদের কাছে প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি।”

বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশে ফেরদৌসী রহমান বলেন, “আমাদের অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু যেটার কমতি আছে, তা হল সাধনা। এখন আমরা অনেকেই অল্পতেই সাফল্য চাই। অল্পতেই নামডাক চাই, সেটা তো হয় না। সংগীতে অল্পতে কিছু হয় না। সাধনা করতে হয়।”

এবারের জন্মদিনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে শনিবার থাকবেন ফেরদৌসী রহমান। তার জন্মদিন ঘিরে চ্যানেল আইয়ের এ বিশেষ অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকবে ফেরদৌসী রহমানের ছোটবেলা ও সংগীতজীবনের নানা গল্প।

ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী ও গুল মোহাম্মদ খানের মতো সঙ্গীতজ্ঞের কাছেও তালিম নেন ফেরদৌসী। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে তিনি লোকসংগীত, আধুনিক, উচ্চাঙ্গসংগীত, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, প্লেব্যাক সব ধরনের গানেই কণ্ঠ দিয়েছেন।

তিনি আট বছর বয়সে রেডিওতে ‘খেলাঘর’ নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ফেরদৌসী রহমানের বড় ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল। আরেক ভাই মোস্তফা জামান আব্বাসী।

১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নেপথ্য কণ্ঠ দেন। ষাট ও সত্তরের দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার প্লেব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০টির কাছাকাছি।

১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম রেডিওতে গান করেন। তখন তিনি রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন।

২৭ ডিসেম্বর ‘এসো গান শিখি’ গানের অনুষ্ঠান শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন এইচএমভি থেকে।

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

 

 

বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম