জার্মান সংবাদপত্র ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমাইনে সাইতুং' বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাব কেবল তার ‘রাগের গভীরতাই’ নয়, বরং ‘সতর্কতার বহিঃপ্রকাশও’।
শুল্ক নিয়ে বিরোধ: চারবার ফোন করেছেন ট্রাম্প, ধরেননি মোদী

- আপডেট সময় ১২:৪৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক বিরোধের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চারবার ফোন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু একবারও ফোন ধরেননি মোদী।
জার্মান সংবাদপত্র ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমাইনে সাইতুং’ (এফএজেড) কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। পত্রিকাটি বলছে, মোদীর এই মনোভাব কেবল তার ‘রাগের গভীরতাই’ নয়, বরং ‘সতর্কতার বহিঃপ্রকাশও’।
একই ধরনের দাবি করেছে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াও। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের কল এড়িয়ে চলেছেন মোদী। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হতাশা আরও বাড়ছে।
শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন
এনডিটিভি জানায়, সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে যুক্তরাষ্ট্র—যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের জন্য এত বেশি নয়।
এই ৫০ শতাংশ শুল্কের মধ্যে আছে- রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্কও।
এ পরিস্থিতিতে দিল্লি জানিয়েছে, মার্কিন চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না তারা। কৃষকদের স্বার্থে কোনও আপস করবেন না বলেও স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
জার্মান সংবাদপত্রটি লিখেছে, “ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধে এটিই প্রতীয়মান হয়েছে যে, দিল্লি ওয়াশিংটনের চাপ মেনে নেবে না। মোদীর আচরণে এটি স্পষ্ট যে, তিনি অপমানিত বোধ করেছেন।
“ট্রাম্পের ফোন ধরতে মোদীর অনীহা দেখানো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যকলাপ নিয়ে তার বিরক্তির মাত্রাই প্রকাশ করে।”
পাকিস্তান:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষত, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদারের পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য তার ভাবমূর্তি নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
মে মাস থেকে ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তার মধ্যস্থতার কারণেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো গেছে—যা অস্বীকার করেছে দিল্লি।
ট্রাম্পের “লোক দেখানো, চুক্তিনির্ভর কূটনীতি” ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের আরেকটি টানাপোড়েনের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নিক্কেই এশিয়া।
চীন:
জার্মান সংবাদপত্র এফএজেড এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিশ্লেষক মার্ক ফ্রেজিয়ার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’, যেখানে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে মূল ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ছে।
গত দুই দশক ধরে চীনকে ঠেকাতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা বাড়ালেও ট্রাম্পের শাস্তিমূলক শুল্ক সেই সম্পর্ককে নড়বড়ে করে তুলেছে; যা এতদিন ধরে চীন এবং রাশিয়ার কাম্য ছিল।
এতে দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক মজবুত হওয়ার সুযোগ দেখছেন ফ্রেজিয়ার। তার ভাষায়, “এটি শুধু মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকে ভারত-চীনের স্বার্থ এক। বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তার ও শিল্পায়নে তারা একসাথে কাজ করতে পারে।”
মোদীর চীন সফর:
অগাস্টের শেষে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এটিই হবে তার প্রথম বেইজিং সফর, যা দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন অস্থিতিশীল সম্পর্কের দিকেও নজর রাখবে দিল্লি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম