০১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ক্যাচগুলো ঠিকঠাক নিয়ে হংকং যদি হারাতে পারত শ্রীলঙ্কাকে, তাহলে উচ্ছ্বসিত হতো বাংলাদেশ এবং এই গ্রুপের লড়াই হয়ে উঠত উন্মুক্ত, বলছেন সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার রাসেল আর্নল্ড।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হংকং জিতলে ‘উল্লাসের ঢেউ বয়ে যেত ঢাকা-চট্টগ্রামে’

স্পোর্টস ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

শেষ দিকে ক্যামিও ইনিংস খেলে দলকে উদ্ধার করেন হাসারাঙ্গা। ছবি: ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট।

 

ম্যাচের উত্তেজনা তখন অনেকটাই শেষ। শ্রীলঙ্কাকে প্রবলভাবে চেপে ধরেও নিজেদের একের পর এক ভুলে সেই ফাঁস আলগা করে দিয়েছে হংকং। বড় বিপদ থেকে একরকম মুক্তি পেয়ে লঙ্কানরাও স্বস্তির শ্বাস নিতে পারছে। সাবেক লঙ্কান অলরাউন্ডার রাসেল আর্নল্ড তখন বললেন, হংকং যদি হারাতে পারত শ্রীলঙ্কাকে, তাহলে উচ্ছ্বসিত হতো গোটা বাংলাদেশ এবং এই গ্রুপের লড়াই হয়ে উঠত উন্মুক্ত।

ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হংকংয়ের জয় যদিও অভাবনীয় ছিল, কিন্তু ম্যাচে একটা পর্যায়ে সেটি মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। একের পর এক ক্যাচ ছেড়ে পিষ্ট হয়ে যায় হংকংয়ের সেই সম্ভাবনা। একটি-দুটি-তিনটি নয়, ছয়-ছয়টি ক্যাচ নিতে পারেনি তারা এ দিন। এরপর আর ম্যাচে থাকে কী!

স্কোরকার্ড যদিও বলছে, ১৫০ রান তাড়ায় ৭ বল বাকি রেখেই ৪ উইকেটে জিতেছে শ্রীলঙ্কা, আদতে হারের চোখরাঙানি কোনোরকমে এড়াতে পেরেছে তারা প্রতিপক্ষের উপহার পেয়ে। ৪৪ বলে ৬৮ রান করে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন যিনি, সেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার ক্যাচই পড়েছে তিনটি! আরেক ওপেনার কুসাল মেন্ডিস শুরুতে জীবন পেয়েছেন দুই দফায়।

বারবার জীবন পাওয়া লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা অবশ্য একটা পর্যায়ে সহজ জয়ের পথেই রেখেছিলেন দলকে। ম্যাচে হংকংয়ের ষষ্ঠ আর নিসাঙ্কার তৃতীয় ক্যাচটি যখন পড়ল, তখন ৩০ বলে আর মাত্র ৩২ রান প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার। উইকেট বাকি ৮টি।

কিন্তু ক্যাচ ছাড়ার মহড়ার দিনেও সহজে হার মানেনি হংকং। নিসাঙ্কাকে অবশেষে ফেরাতে পারেন তারা রান আউটে। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ কুসাল পেরেরা (২০)। ওই ওভারে চার রান দেন হংকং অধিনায়ক ইয়াসিম মুর্তাজা।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যান লঙ্কান দলপতি চারিথ আসালাঙ্কা। ওই ওভার থেকে আসে স্রেফ পাঁচ রান।

এভাবেই একের পর এক ছেড়েছে হংকং। ছবি: ভিডিও থেকে।এভাবেই একের পর এক ছেড়েছে হংকং। ছবি: ভিডিও থেকে।

 

তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ২৩ রান, ইয়াসিম বিদায় করে দেন কামিন্দু মেন্ডিসকেও! খেলা তখন জমে উঠেছে দারুণভাবে। ডাগআউটে কোচ সানাৎ জায়াসুরিয়া ও অন্য লঙ্কানদের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।

কিন্তু এরপর আবার হংকংয়ের ভুলেই হাসি ফেরে লঙ্কানদের মুখে। ১৬ বলে যখন প্রয়োজন ২২ রান, উইকেট বাকি চারটি, নো বল করে বসেন অধিনায়ক ইয়াসিম। ফ্রি হিটে এই বাঁহাতি স্পিনারের ডেলিভারিটি হয়ে যায় হাফ ভলি। সেটিকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

ব্যস, এতেই ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি গড়া হয়ে যায়। এরপরও যেটুকু আশা বাকি ছিল হংকংয়ের, সেটি শেষ হয়ে যায় ওই ওভারের শেষ বলে দাসুন শানাকার বাউন্ডারিতে।

১২ বলে তখন ৯ রান লাগে মাত্র। ম্যাচ কার্যত শেষ।

ধারাভাষ্যে তখন হংকংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের হতাশা আর গ্রুপের বাস্তবতা তুলে ধরেন রাসেল আর্নল্ড।

“কী দারুণ একটা সুযোগ ছিল হংকংয়ের! শ্রীলঙ্কাকে তারা যদি হারাতে পারত, তাদের জন্য যেমন ইতিহাস হতো, তেমনি উল্লাসের ঢেউ বয়ে যেত ঢাকা ও চট্টগ্রামে, আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়া বাংলাদেশের সম্ভাবনায় নতুন প্রাণ ফিরত। এছাড়া এই গ্রুপও পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়ত, সবারই সমান সম্ভাবনা থাকত তখন…।”

পাশ থেকে আরেক ধারাভাষ্যকার ভারতীয় কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার দায় দিলেন হংকংয়ের ফিল্ডিংকেই।

“কোনো দল যদি গোটা টুর্নামেন্টে ছয়টি ক্যাচ ছাড়ে, সেটিই মেনে নেওয়ার মতো নয়। হংকং এক ম্যাচেই ছেড়েছে ছয়টি… পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এটি। কত বড় সুযোগ ছিল তাদের জন্য…!”

শুধু এই ম্যাচেই নয়, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছিল হংকং। গত বছর এসিসি প্রিমিয়ার কাপে নেপালকে হারিয়ে তৃতীয় জয়ে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা দলটি তাই মূল আসর থেক বিদায় নিল শূন্য হাতে।

অধিনায়ক ইয়াসিম মুর্তাজা অবশ্য তার পরও প্রাপ্তি দেখছেন বেশ। বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডার খুশি দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে।

“আজকে ছেলেরা যেভাবে লড়াই করেছে, আমি সত্যিই গর্বিত। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে নিজাকাত (৩৮ বলে ৫২*) ও আনসি (আনসুমান রাথ, ৪৮) গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছে। ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি। তবে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ছেলেরা যেমন করেছে, দিনশেষে আমি গর্বিত। আমাদের লক্ষ্য ছিল ১৫০-১৬০ রান করা, যা আমরা পেরেছিলাম। কয়েকটি ক্যাচ ছাড়ার মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের।”

“ ইতিবাচক ব্যাপার হলো, এত বড় মঞ্চে আমরা খেলতে পেরেছি, আমাদের জন্য এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। অনেক কিছু নিয়েই আমাদের ভাবার আছে, ফিরে গিয়ে যেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব।”

 

 

স্পোর্টস ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

ক্যাচগুলো ঠিকঠাক নিয়ে হংকং যদি হারাতে পারত শ্রীলঙ্কাকে, তাহলে উচ্ছ্বসিত হতো বাংলাদেশ এবং এই গ্রুপের লড়াই হয়ে উঠত উন্মুক্ত, বলছেন সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার রাসেল আর্নল্ড।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হংকং জিতলে ‘উল্লাসের ঢেউ বয়ে যেত ঢাকা-চট্টগ্রামে’

আপডেট সময় ১১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

ম্যাচের উত্তেজনা তখন অনেকটাই শেষ। শ্রীলঙ্কাকে প্রবলভাবে চেপে ধরেও নিজেদের একের পর এক ভুলে সেই ফাঁস আলগা করে দিয়েছে হংকং। বড় বিপদ থেকে একরকম মুক্তি পেয়ে লঙ্কানরাও স্বস্তির শ্বাস নিতে পারছে। সাবেক লঙ্কান অলরাউন্ডার রাসেল আর্নল্ড তখন বললেন, হংকং যদি হারাতে পারত শ্রীলঙ্কাকে, তাহলে উচ্ছ্বসিত হতো গোটা বাংলাদেশ এবং এই গ্রুপের লড়াই হয়ে উঠত উন্মুক্ত।

ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হংকংয়ের জয় যদিও অভাবনীয় ছিল, কিন্তু ম্যাচে একটা পর্যায়ে সেটি মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। একের পর এক ক্যাচ ছেড়ে পিষ্ট হয়ে যায় হংকংয়ের সেই সম্ভাবনা। একটি-দুটি-তিনটি নয়, ছয়-ছয়টি ক্যাচ নিতে পারেনি তারা এ দিন। এরপর আর ম্যাচে থাকে কী!

স্কোরকার্ড যদিও বলছে, ১৫০ রান তাড়ায় ৭ বল বাকি রেখেই ৪ উইকেটে জিতেছে শ্রীলঙ্কা, আদতে হারের চোখরাঙানি কোনোরকমে এড়াতে পেরেছে তারা প্রতিপক্ষের উপহার পেয়ে। ৪৪ বলে ৬৮ রান করে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন যিনি, সেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার ক্যাচই পড়েছে তিনটি! আরেক ওপেনার কুসাল মেন্ডিস শুরুতে জীবন পেয়েছেন দুই দফায়।

বারবার জীবন পাওয়া লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা অবশ্য একটা পর্যায়ে সহজ জয়ের পথেই রেখেছিলেন দলকে। ম্যাচে হংকংয়ের ষষ্ঠ আর নিসাঙ্কার তৃতীয় ক্যাচটি যখন পড়ল, তখন ৩০ বলে আর মাত্র ৩২ রান প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার। উইকেট বাকি ৮টি।

কিন্তু ক্যাচ ছাড়ার মহড়ার দিনেও সহজে হার মানেনি হংকং। নিসাঙ্কাকে অবশেষে ফেরাতে পারেন তারা রান আউটে। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ কুসাল পেরেরা (২০)। ওই ওভারে চার রান দেন হংকং অধিনায়ক ইয়াসিম মুর্তাজা।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যান লঙ্কান দলপতি চারিথ আসালাঙ্কা। ওই ওভার থেকে আসে স্রেফ পাঁচ রান।

এভাবেই একের পর এক ছেড়েছে হংকং। ছবি: ভিডিও থেকে।এভাবেই একের পর এক ছেড়েছে হংকং। ছবি: ভিডিও থেকে।

 

তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ২৩ রান, ইয়াসিম বিদায় করে দেন কামিন্দু মেন্ডিসকেও! খেলা তখন জমে উঠেছে দারুণভাবে। ডাগআউটে কোচ সানাৎ জায়াসুরিয়া ও অন্য লঙ্কানদের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।

কিন্তু এরপর আবার হংকংয়ের ভুলেই হাসি ফেরে লঙ্কানদের মুখে। ১৬ বলে যখন প্রয়োজন ২২ রান, উইকেট বাকি চারটি, নো বল করে বসেন অধিনায়ক ইয়াসিম। ফ্রি হিটে এই বাঁহাতি স্পিনারের ডেলিভারিটি হয়ে যায় হাফ ভলি। সেটিকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

ব্যস, এতেই ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি গড়া হয়ে যায়। এরপরও যেটুকু আশা বাকি ছিল হংকংয়ের, সেটি শেষ হয়ে যায় ওই ওভারের শেষ বলে দাসুন শানাকার বাউন্ডারিতে।

১২ বলে তখন ৯ রান লাগে মাত্র। ম্যাচ কার্যত শেষ।

ধারাভাষ্যে তখন হংকংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের হতাশা আর গ্রুপের বাস্তবতা তুলে ধরেন রাসেল আর্নল্ড।

“কী দারুণ একটা সুযোগ ছিল হংকংয়ের! শ্রীলঙ্কাকে তারা যদি হারাতে পারত, তাদের জন্য যেমন ইতিহাস হতো, তেমনি উল্লাসের ঢেউ বয়ে যেত ঢাকা ও চট্টগ্রামে, আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়া বাংলাদেশের সম্ভাবনায় নতুন প্রাণ ফিরত। এছাড়া এই গ্রুপও পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়ত, সবারই সমান সম্ভাবনা থাকত তখন…।”

পাশ থেকে আরেক ধারাভাষ্যকার ভারতীয় কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার দায় দিলেন হংকংয়ের ফিল্ডিংকেই।

“কোনো দল যদি গোটা টুর্নামেন্টে ছয়টি ক্যাচ ছাড়ে, সেটিই মেনে নেওয়ার মতো নয়। হংকং এক ম্যাচেই ছেড়েছে ছয়টি… পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এটি। কত বড় সুযোগ ছিল তাদের জন্য…!”

শুধু এই ম্যাচেই নয়, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছিল হংকং। গত বছর এসিসি প্রিমিয়ার কাপে নেপালকে হারিয়ে তৃতীয় জয়ে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা দলটি তাই মূল আসর থেক বিদায় নিল শূন্য হাতে।

অধিনায়ক ইয়াসিম মুর্তাজা অবশ্য তার পরও প্রাপ্তি দেখছেন বেশ। বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডার খুশি দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে।

“আজকে ছেলেরা যেভাবে লড়াই করেছে, আমি সত্যিই গর্বিত। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে নিজাকাত (৩৮ বলে ৫২*) ও আনসি (আনসুমান রাথ, ৪৮) গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছে। ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি। তবে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ছেলেরা যেমন করেছে, দিনশেষে আমি গর্বিত। আমাদের লক্ষ্য ছিল ১৫০-১৬০ রান করা, যা আমরা পেরেছিলাম। কয়েকটি ক্যাচ ছাড়ার মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের।”

“ ইতিবাচক ব্যাপার হলো, এত বড় মঞ্চে আমরা খেলতে পেরেছি, আমাদের জন্য এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। অনেক কিছু নিয়েই আমাদের ভাবার আছে, ফিরে গিয়ে যেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব।”

 

 

স্পোর্টস ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম