০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
“অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদের পৌঁছতে পারবো,” বলেন আলী রীয়াজ।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনসহ পাঁচ বিষয়ে ‘সকলে একমত’: আলী রীয়াজ

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের প্রথম দিনে পাঁচটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’ পৌঁছার কথা বলেছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

এই পাঁচটি বিষয় হল-সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে, ১০০ সংরক্ষিত নারী আসন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান পরিবর্তন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সহসভাপতি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে কিছু কিছু দল পুনর্বিবেচনার কথা বলেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে আলোচনার পর এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করা হবে।”

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত সংসদ সদস্যরা অর্থ বিল ও আস্থা ভোটে দলের পক্ষে থাকবেন।

তিনি বলেন, “সরকারি হিসাব, বিশেষ অধিকার, অনুমিত হিসাব ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সকলে একমত হয়েছি।”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় সংসদের নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়, জাতীয় সংসদের ১০০টি সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে একমত হয়েছে সকলে। এর পদ্ধতির জন্য আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

“আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে এখানকার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে দলের সাথে আলোচনা করে আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো।”

তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানের ৯৫/১ অনুচ্ছেদে আছে, পাশাপাশি ৪৮/৩ অনুচ্ছেদে আছে। সেগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য হয়েছে। অধিকাংশ দল একমত হয়েছে।

“কিন্তু আমরা এ বিষয়টিও আগামী সপ্তাহে পুনর্বার আলোচনা করব। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।”

আলী রীয়াজ বলেন, “দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়েছে। এটাও বলবো, কিছু কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে, কিন্তু এটা কমবেশি সকলেই স্বীকার করেছে, এটা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। ১০০ আসনের একটি উচ্চ কক্ষ তৈরি করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ একমত হয়েছে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “আলোচনা শেষ হয়নি, আলোচনা অব্যাহত আছে। অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদের পৌঁছতে পারবো।”

 

‘তাদের কাছে মনে হয়েছে, তাই বলেছে’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বিএনপির প্রস্তাবের’ দিকে হেলে যাওয়ার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি।

দলটির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, কমিশনের ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা যেটির দিকে ‘হেলে গেছেন’, সেটি মূলত বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব।

এনসিপির এই নেতা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে (জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে) নির্বাচনের যে তারিখ (এপ্রিলের প্রথমার্ধ) ঘোষণা করেছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে, সেখানে তিনি কমিশনের ছয়টা প্রস্তাবের মধ্যে একটির দিকে হেলে যান, যেটি দিয়েছে বিএনপি।”

“ঐকমত্য কমিশন এখন যে পথে এগোচ্ছে, সেখানে নির্বাচনে কোন কোন বিষয় থাকবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি যেখানে পরবর্তী সংসদের সংস্কার হবে বলেছে, সেখানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য কিছুটা হেলে যায়।”

আর গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর বলেন, “একটি বিশেষ দলকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বা আলোচনাটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা অভিযোগ জামায়াতসহ কিছু কিছু দল তুলেছে। আমরাও বলেছি, এখানে রাজনৈতিক দলের বাইরেও গণ-আন্দোলনে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “এটা তাদের মনে হয়েছে, তারা বলেছেন। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে সমভাবে মর্যাদা এবং সমভাবে বিবেচনা করার। কারও কারও ধারণা অন্যরকম হতে পারে। এটা শুনলাম, এটা আমরা বিবেচনায় নেব।”

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

ঐকমত্য কমিশন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা হবে।

কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়- যাদের মধ্যে ৩৩টি মতামত জানায়।

এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন।

আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

“অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদের পৌঁছতে পারবো,” বলেন আলী রীয়াজ।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনসহ পাঁচ বিষয়ে ‘সকলে একমত’: আলী রীয়াজ

আপডেট সময় ১১:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের প্রথম দিনে পাঁচটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’ পৌঁছার কথা বলেছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

এই পাঁচটি বিষয় হল-সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে, ১০০ সংরক্ষিত নারী আসন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান পরিবর্তন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সহসভাপতি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে কিছু কিছু দল পুনর্বিবেচনার কথা বলেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে আলোচনার পর এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করা হবে।”

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত সংসদ সদস্যরা অর্থ বিল ও আস্থা ভোটে দলের পক্ষে থাকবেন।

তিনি বলেন, “সরকারি হিসাব, বিশেষ অধিকার, অনুমিত হিসাব ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সকলে একমত হয়েছি।”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় সংসদের নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়, জাতীয় সংসদের ১০০টি সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে একমত হয়েছে সকলে। এর পদ্ধতির জন্য আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

“আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে এখানকার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে দলের সাথে আলোচনা করে আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো।”

তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানের ৯৫/১ অনুচ্ছেদে আছে, পাশাপাশি ৪৮/৩ অনুচ্ছেদে আছে। সেগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য হয়েছে। অধিকাংশ দল একমত হয়েছে।

“কিন্তু আমরা এ বিষয়টিও আগামী সপ্তাহে পুনর্বার আলোচনা করব। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।”

আলী রীয়াজ বলেন, “দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়েছে। এটাও বলবো, কিছু কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে, কিন্তু এটা কমবেশি সকলেই স্বীকার করেছে, এটা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। ১০০ আসনের একটি উচ্চ কক্ষ তৈরি করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ একমত হয়েছে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “আলোচনা শেষ হয়নি, আলোচনা অব্যাহত আছে। অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদের পৌঁছতে পারবো।”

 

‘তাদের কাছে মনে হয়েছে, তাই বলেছে’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বিএনপির প্রস্তাবের’ দিকে হেলে যাওয়ার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি।

দলটির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, কমিশনের ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা যেটির দিকে ‘হেলে গেছেন’, সেটি মূলত বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব।

এনসিপির এই নেতা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে (জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে) নির্বাচনের যে তারিখ (এপ্রিলের প্রথমার্ধ) ঘোষণা করেছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে, সেখানে তিনি কমিশনের ছয়টা প্রস্তাবের মধ্যে একটির দিকে হেলে যান, যেটি দিয়েছে বিএনপি।”

“ঐকমত্য কমিশন এখন যে পথে এগোচ্ছে, সেখানে নির্বাচনে কোন কোন বিষয় থাকবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি যেখানে পরবর্তী সংসদের সংস্কার হবে বলেছে, সেখানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য কিছুটা হেলে যায়।”

আর গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর বলেন, “একটি বিশেষ দলকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বা আলোচনাটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা অভিযোগ জামায়াতসহ কিছু কিছু দল তুলেছে। আমরাও বলেছি, এখানে রাজনৈতিক দলের বাইরেও গণ-আন্দোলনে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “এটা তাদের মনে হয়েছে, তারা বলেছেন। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে সমভাবে মর্যাদা এবং সমভাবে বিবেচনা করার। কারও কারও ধারণা অন্যরকম হতে পারে। এটা শুনলাম, এটা আমরা বিবেচনায় নেব।”

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

ঐকমত্য কমিশন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা হবে।

কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়- যাদের মধ্যে ৩৩টি মতামত জানায়।

এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন।

আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।