“নতুন আইনে দেশে প্রথমবারের মতো কাউকে তদন্তধীন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে,” বলেন উপ কমিশনার মাঈন।
সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি: প্রথম অব্যাহতি পেল কিশোর ফাইয়াজ

- আপডেট সময় ০৫:১৫:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
- / ৪৮ বার পড়া হয়েছে
জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ অব্যাহতি পেয়েছে।
সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারায় দাখিল করা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইশতিয়াক গত ১৫ জুলাই এ আদেশ দেন বলে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী রোববার জানিয়েছেন।
সাধারণত কোনো মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। তবে গত ১০ জুলাই অধ্যাদেশ হওয়া সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারায় তদন্ত চলাকালে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এ অধ্যাদেশ জারির পর গত ১৩ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারায় কিশোর ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন। সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে ১৫ জুলাই ফাইয়াজকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
এর মধ্য দিয়ে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে প্রথম কাউকে তদন্তাধীন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের আলোকে যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় শিশু ফাইয়াজকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এতে অনেক হয়রানি কমবে এবং নির্দোষ ব্যক্তি ন্যায় বিচার পাবে এমনটাই আশা করছি।”
সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত চলাকালে অগ্রগতির বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারবেন পুলিশ কমিশনার, জেলার এসপি বা সমমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা। অভিযুক্তের ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ না মিললে এ সংক্রান্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত সন্তুষ্ট হলে অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিতে পারবে।
জুলাই আন্দোলনের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি ছিলেন ফাইয়াজ।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফাইয়াজের বয়স তখনো ১৮ হয়নি বলে তার আইনজীবীর ভাষ্য। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে ফাইয়াজের জন্ম তারিখ ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ প্লাস পায়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, পুলিশ সদস্য নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) গণভবনে ডিউটি দিতে যাওয়ার জন্য ১৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। মোটরসাইকেলে করে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ফুটব্রিজের উত্তর পাশে পৌঁছানো মাত্র তার ওপর হামলা হয়।
এরপর তাকে হত্যা করে রশি দিয়ে ফুটব্রিজের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই ঘটনায় ২৪ জুলাই গিয়াস উদ্দিনের ভগ্নিপতি মো. ফজল প্রধান যাত্রাবাড়ী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতানামা অনেককে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর ২৪ জুলাই রাতে সাধারণ পোশাকের একদল লোক ফাইয়াজকে তাদের মাতুয়াইলের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের ভাষ্য।
এ মামলায় ২৭ জুলাই ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা ও ফাইয়াজসহ সাত জনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত।
ওই সাতজনের মধ্যে ফাইয়াজের বয়স ১৮ হয়নি বলে তার আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চেয়েছিলেন।
তবে তা নাকচ হওয়ায় ফাইয়াজকে ‘রিমান্ডে নেওয়ার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট মামলা হলে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করায় শিশু আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না। এর মধ্যে ফাইয়াজকে ‘শিশু’ ঘোষণা করে তার রিমান্ডের আদেশ বাতিল করে ঢাকার আরেক আদালত। এরপর তাকে গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম