০২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে রেজা খোদা মসজিদের অস্তিত্ব

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১২:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৭২ বার পড়া হয়েছে

প্রাচীন ঐতিহ্যের শহর বাগেরহাট। এদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন পুরাকীর্তি। এসব প্রাচীন পুরাকীর্তির অধিকাংশই পঞ্চদশ শতকে খান জাহান আলীর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খান জাহানের মাজারের আশেপাশের এলাকাতেই রয়েছে প্রায় ৮টি স্থাপনা। কোনোটি এখনো মাথা তুলে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে, কোনোটা আবার যত্নের অভাবে হারাতে বসেছে নিজের অস্তিত্ব। এমনই এক স্থাপনার নাম ”রেজা খোদা মসজিদ”। 

খান জাহান আলী মাজার থেকে মাত্র সাড়ে ৫শ মিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থান এ মসজিদটির। ভেঙে পড়া স্থাপনার কারুকাজ দেখেই আঁচ করা যায় তৎকালীন সময়ে মসজিদটির নির্মাণশৈলী কতটা নিপুণ ছিল। প্রচারের অভাব ও ভগ্নদশার জন্য ততটা পর্যটক টানতে পারছে না স্থাপনাটি। স্থানীয়রা মনে করেন, সঠিক সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে আরও বেশি পর্যটক টানতে সক্ষম হতে পারে মসজিদটি।

রেজা খোদা মসজিদটি ছয় গম্বুজ মসজিদ নামেও পরিচিত, যদিও মসজিদটির কোনো গম্বুজই আর অবশিষ্ট নেই এখন। পড়ে আছে সামনের মেহরাব সম্বলিত দেয়াল এবং পিলারগুলো। তবে পিলার ও মেহরাবের কারুকাজ এখনো সগর্বে নির্মাতাদের রুচির পরিচয় দিয়ে যায়। মসজিদটির বাইরের অংশের পরিমাপ প্রায় ১৬.৫ ও ১২.৪ মিটার। প্রতিটি দেয়াল প্রায় ১.৭৪ মিটার চওড়া। মসজিদটি পোড়ামাটির ইটের তৈরি হলেও স্থাপনার ভার ধরে রাখতো পাথরের তৈরি পিলারগুলো। এছাড়া চারদিকে চারটি অষ্টভূজ আকৃতির বুরুজ ছিল যার কিছু অংশ এখনও টিকে আছে। বাতাস চলাচলের জন্য ছিল টেরাকোটার তৈরি জালিকা। মোট তিনটি কারুকাজ করা মেহরাব রয়েছে মসজিদটিতে। যার ভেতরে কেন্দ্রীয় মেহরাবটি সবচেয়ে বড় ও কারুকার্যময়। মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত একটি প্রত্নসম্পদ। বর্তমানে মসজিদটির ভেতরের পাশে আরেকটি টিনের চাল ও ইট সিমেন্টের মসজিদ বানিয়ে মুসল্লিরা নামাজ পড়েন। তবে মূল স্থাপনার ভগ্নাংশ এখনও টিকে আছে এই নতুন মসজিদের চারপাশে। বিগত সালে কিছু সংস্কারকাজ চললেও তাতে খুব একটা উন্নতি সাধন হয়নি বলে দাবি করেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।

dhakapost

স্থানীয় বাসিন্দা রেদোয়ান বলেন, ছোটবেলা থেকেই মসজিদটি দেখছি। মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি প্রাচীনকালে খান জাহানের আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ৬০০ বছর আগের এ মসজিদটি আরো প্রায় অর্ধশত বছর আগে ভেঙে গেছে বলে শুনেছি। বর্তমানে মসজিদটির কিছু অংশ টিকে আছে। তবে সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে টিকে থাকা অংশগুলাও ভাঙছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে গত বছর কিছুটা সংস্কার করা হলেও এর রক্ষনাবেক্ষণ হচ্ছে না। এখানে যারা নামাজ আদায় করেন তারাই দেখে রাখেন প্রাচীন এ মসজিদটি।

স্থানীয় শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন,  প্রাচীন এ স্থাপনাটি কয়েকবার সংস্কার করা হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। শুনেছি আশেপাশের কারো ইটের প্রয়োজন হলে প্রাচীন স্থাপনার ইট খুলে নিয়ে নিজেদের কাজে লাগায়। তাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে যদি রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই মসজিদটির আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।

খুলনা বিভাগের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সরদার মামুন বালেন, এইখানে এমন কোনো স্থাপনা আছে এটা জানতাম-ই না। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রেজাখোদা মসজিদটির যতটুকু টিকে আছে ততটুকু যদি সংস্কার করে সংরক্ষণ করে রাখা হয় তাহলে এখানে এসে পর্যটকরা প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এখানে এমন একটি মসজিদের অংশ টিকে আছে তার প্রচার করা প্রয়োজন।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের কাষ্টোডিয়ান মো. জায়েদ বলেন, রেজাখোদা মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নসম্পদ। মসজিদটি ভগ্ন অবস্থাতেই নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাগেরহাটে যেসব পুরাকীর্তি রয়েছে সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় রেজাখোদা মসজিদের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। এ মসজিদের যতটুকু অংশ এখন টিকে আছে গতবছর ততটুকু সংস্কার করা হয়েছে যাতে এটা নষ্ট না হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এটা সম্পূর্ণভাবে সংস্কারের চিন্তা ভাবনা আমাদের আছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে রেজা খোদা মসজিদের অস্তিত্ব

আপডেট সময় ১২:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩

প্রাচীন ঐতিহ্যের শহর বাগেরহাট। এদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন পুরাকীর্তি। এসব প্রাচীন পুরাকীর্তির অধিকাংশই পঞ্চদশ শতকে খান জাহান আলীর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খান জাহানের মাজারের আশেপাশের এলাকাতেই রয়েছে প্রায় ৮টি স্থাপনা। কোনোটি এখনো মাথা তুলে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে, কোনোটা আবার যত্নের অভাবে হারাতে বসেছে নিজের অস্তিত্ব। এমনই এক স্থাপনার নাম ”রেজা খোদা মসজিদ”। 

খান জাহান আলী মাজার থেকে মাত্র সাড়ে ৫শ মিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থান এ মসজিদটির। ভেঙে পড়া স্থাপনার কারুকাজ দেখেই আঁচ করা যায় তৎকালীন সময়ে মসজিদটির নির্মাণশৈলী কতটা নিপুণ ছিল। প্রচারের অভাব ও ভগ্নদশার জন্য ততটা পর্যটক টানতে পারছে না স্থাপনাটি। স্থানীয়রা মনে করেন, সঠিক সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে আরও বেশি পর্যটক টানতে সক্ষম হতে পারে মসজিদটি।

রেজা খোদা মসজিদটি ছয় গম্বুজ মসজিদ নামেও পরিচিত, যদিও মসজিদটির কোনো গম্বুজই আর অবশিষ্ট নেই এখন। পড়ে আছে সামনের মেহরাব সম্বলিত দেয়াল এবং পিলারগুলো। তবে পিলার ও মেহরাবের কারুকাজ এখনো সগর্বে নির্মাতাদের রুচির পরিচয় দিয়ে যায়। মসজিদটির বাইরের অংশের পরিমাপ প্রায় ১৬.৫ ও ১২.৪ মিটার। প্রতিটি দেয়াল প্রায় ১.৭৪ মিটার চওড়া। মসজিদটি পোড়ামাটির ইটের তৈরি হলেও স্থাপনার ভার ধরে রাখতো পাথরের তৈরি পিলারগুলো। এছাড়া চারদিকে চারটি অষ্টভূজ আকৃতির বুরুজ ছিল যার কিছু অংশ এখনও টিকে আছে। বাতাস চলাচলের জন্য ছিল টেরাকোটার তৈরি জালিকা। মোট তিনটি কারুকাজ করা মেহরাব রয়েছে মসজিদটিতে। যার ভেতরে কেন্দ্রীয় মেহরাবটি সবচেয়ে বড় ও কারুকার্যময়। মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত একটি প্রত্নসম্পদ। বর্তমানে মসজিদটির ভেতরের পাশে আরেকটি টিনের চাল ও ইট সিমেন্টের মসজিদ বানিয়ে মুসল্লিরা নামাজ পড়েন। তবে মূল স্থাপনার ভগ্নাংশ এখনও টিকে আছে এই নতুন মসজিদের চারপাশে। বিগত সালে কিছু সংস্কারকাজ চললেও তাতে খুব একটা উন্নতি সাধন হয়নি বলে দাবি করেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।

dhakapost

স্থানীয় বাসিন্দা রেদোয়ান বলেন, ছোটবেলা থেকেই মসজিদটি দেখছি। মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি প্রাচীনকালে খান জাহানের আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ৬০০ বছর আগের এ মসজিদটি আরো প্রায় অর্ধশত বছর আগে ভেঙে গেছে বলে শুনেছি। বর্তমানে মসজিদটির কিছু অংশ টিকে আছে। তবে সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে টিকে থাকা অংশগুলাও ভাঙছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে গত বছর কিছুটা সংস্কার করা হলেও এর রক্ষনাবেক্ষণ হচ্ছে না। এখানে যারা নামাজ আদায় করেন তারাই দেখে রাখেন প্রাচীন এ মসজিদটি।

স্থানীয় শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন,  প্রাচীন এ স্থাপনাটি কয়েকবার সংস্কার করা হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। শুনেছি আশেপাশের কারো ইটের প্রয়োজন হলে প্রাচীন স্থাপনার ইট খুলে নিয়ে নিজেদের কাজে লাগায়। তাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে যদি রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই মসজিদটির আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।

খুলনা বিভাগের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সরদার মামুন বালেন, এইখানে এমন কোনো স্থাপনা আছে এটা জানতাম-ই না। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রেজাখোদা মসজিদটির যতটুকু টিকে আছে ততটুকু যদি সংস্কার করে সংরক্ষণ করে রাখা হয় তাহলে এখানে এসে পর্যটকরা প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এখানে এমন একটি মসজিদের অংশ টিকে আছে তার প্রচার করা প্রয়োজন।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের কাষ্টোডিয়ান মো. জায়েদ বলেন, রেজাখোদা মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নসম্পদ। মসজিদটি ভগ্ন অবস্থাতেই নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাগেরহাটে যেসব পুরাকীর্তি রয়েছে সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় রেজাখোদা মসজিদের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। এ মসজিদের যতটুকু অংশ এখন টিকে আছে গতবছর ততটুকু সংস্কার করা হয়েছে যাতে এটা নষ্ট না হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এটা সম্পূর্ণভাবে সংস্কারের চিন্তা ভাবনা আমাদের আছে।